বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ব্যর্থতার দায়টা কাদের?

২০২৩ বিশ্বকাপে সবার আগে বাদ পড়া দলটার নাম বাংলাদেশ। অথচ এক দিনের ক্রিকেটে গত দশকে বাংলাদেশের এমন বেহাল দশা শেষ কবে দেখা গিয়েছিল, সেটি খুঁজে বের করাই যেন এখন দুরুহ এক ব্যাপার। বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশগ্রহণের দৌড়ে ২০২০-২৩ চক্রে ওয়ানডে সুপার লিগে রীতিমত রাজত্ব দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ হয়েছিল তৃতীয়।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারাবাহিক বাংলাদেশের এমন চিত্র তাই এবারের বিশ্বকাপে ভাল করার ব্যাপারেই আশা জুগিয়েছিল। কিন্তু স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে ভারত বিশ্বকাপে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয়ে শুরুটা ভাল করলেও এরপরের প্রতিটা ম্যাচই শেষ হয়েছে হতাশাকে সঙ্গী করে। আর সেই হতাশা আরো বাড়িয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারের পর।

৭ ম্যাচে ১ জয়ের বিপরীতে ৬ টা পরাজয়। তবে তার চেয়েও দৃষ্টিকটু ব্যাপার, এই ৬ ম্যাচে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই সামান্য প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই তাই এমন হতাশায় ঘেরা বিশ্বকাপ ইতিবাচক কোনো দিকও উঠে আসেনি। গোটা দলটাই যেন নেতিবাচকতায় পূর্ণ।

২০২২ সালে ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন লিটন দাস। ২০২৩ সালে লিটনের পথ ধরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তও। এ ছাড়া মুশফিকুর রহিম, সাকিব, রিয়াদরা তো দলের সবচাইতে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে ছিলেনই। তারপরও বাংলাদেশ বিশ্বকাপে এসে রান তোলার কাজটাই করতে পারেনি। ২০০-এর গণ্ডি পেরোতে সিংহভাগ ম্যাচেই হিমশিম খেয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের আগেও ফর্মে থাকা বাংলাদেশি ব্যাটারদের কেন এমন হঠাৎ দৈন্যদশা? লিটন দাস দুটো ফিফটি অবশ্য পেয়েছেন। তবে তা দলের কোনো কাজে আসেনি। আর শান্ত পুরো বছর ফর্মে থাকলেও বিশ্বকাপে এসে ঘটেছে ছন্দচ্যূতি। সাকিবও রান পাননি। লিটনের মতো মুশফিকের রানগুলোও দলের কাজে আসেনি। সব মিলিয়ে বিস্ময়করভাবে বিশ্বকাপে এসেই, বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ একই সাথে নিজেদের ছন্দ হারিয়েছে। ব্যাটারদের মধ্যে যা একটু প্রশংসার দাবিদার হতে পারেন, তিনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শেষ ৮ বছরে ইংল্যান্ড আর আফগানিস্তান ব্যতিত কোনো দলই বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জিততে পারেনি। এ সময়কালে বাংলাদেশ ভারতকে দুই বার সিরিজ হারিয়েছে,পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে। একই সাথে ঘরে মাটি ও নিজেদের মাটি, দুই জায়গাতেই টাইগারদের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ সেই প্রোটিয়ারা যখন এবারের বিশ্বকাপে সেমির পথে এক পা দিয়ে রেখেছে, সেখানে বাংলাদেশ রয়েছে হতাশার বিশ্বকাপ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে।

শেষ এক যুগের হিসেবে বাংলাদেশ দলটা যে শুধু দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই নিজেদের প্রমাণ করেছে সেটিও নয়। ২০১২ এশিয়া কাপের পর ২০১৮ সালের এশিয়া কাপেও দুই ফাইনালিস্টের একটি ছিল বাংলাদেশ। এর মাঝে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ নিজেদের নিয়ে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। অথচ আগের বারের সেমিফাইনালিস্ট কিনা আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারবে কিনা, সেই সম্ভাবনা এখন গিয়ে ঠেকেছে অনিশ্চয়তার বেড়াজালে।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলটার মাঝে প্রাপ্তি খোঁজা অনর্থক। তবে যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ ভারতে পা রেখেছিল, তার প্রস্থান যাত্রাটা যে বড্ড বাজে হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই একটুও। আর বাংলাদেশের এই বেহাল দশার কারণ কী? এই প্রশ্নটাও যেন একই সাথে বিস্ময় ও কৌতূহলদ্দীপক হতে বাধ্য করে। তবে ছন্দে থাকা দলটার এমন হঠাৎ পরিণতির দায়টা নিতে হবে পুরো দলকেই। এলোমেলো ব্যাটিং অর্ডারের সিদ্ধান্তসহ অতিরিক্ত ব্যাটার স্কোয়াডে যুক্ত না করা- এমন সব কিছু ফলপ্রসূ না হওয়ায় দায়টা বর্তায় অধিনায়ক সাকিবের ওপরেও।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link