টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বড় প্রতিপক্ষকে বাংলাদেশ এর আগেও ডুবিয়েছে। মিরপুরে টাইগারদের আধিপত্যে কোণঠাসা হয়েছে আরো অনেক বড় দল। এটা কোনো নতুন দৃশ্য নয়।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে দুটি দল ফাইনালে উঠেছিল, বিশ্বকাপ শুরুর আগে সেই দুটি দলই মিরপুরের মাটিতে রীতিমত ধবলধোলাই হয়েছিল। বাঘের ডেরায় এসে অজিরা হেরেছিল ৪-১ এ। আর কিউইদের জন্য চিত্রনাট্যটা সাজানো হয়েছিল ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে।
তারপরও এমন সব সিরিজ জিতেও যেন তৃপ্ততা খুঁজে পাওয়া যেত না। বরং সব কিছুর আড়ালে একটা কদর্যতা ফুটে উঠত। কারণ আড়ালে যে উইকেটের কারসাজি! প্রশ্নবিদ্ধ উইকেটের ফায়দা নিয়ে এমন সব সিরিজ জেতা বাংলাদেশকে তাই দিন বদলের পথ খুঁজে দিতে পারেনি।
তবে একটা নতুন দিনের সূর্যোদয় এবার ঘটেছে। মাস চারেক আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা ইংল্যান্ডকে এবার হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। না। মিরপুরের উইকেটের বদৌলতে এমন সাফল্য আসেনি। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- সব ইউনিটেই আধিপত্য বিস্তার করে অভাবনীয় এ সাফল্য মিলেছে।
দলের এমন সাফল্যে দারুণ খুশি সাবেক ক্রিকেটার, বিসিবি’র নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন। আগের সব সিরিজ থেকে এই সিরিজটাকে আলাদা করে দেখছেন তিনিও। ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে এটিই আমাদের সেরা সিরিজ। আমরা এর আগে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছি। তবে তাতে উইকেট আমাদের সহায়তা করেছিল। তবে এবার তা হয়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের মাঠের পারফর্ম্যান্স দিয়ে জিততে হয়েছে। স্পিনারদের পাশাপাশি পেসাররা দারুণ করেছে।’
এমন সিরিজ জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই বেশ আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। হাবিবুল বাশার সুমনের কথাতেও মিলল সেই সুরই। তিনি বলেন, ‘ওরা এখন যেমন আত্মবিশ্বাসী তাতে আমাদের উইকেট নিয়ে আর চিন্তা করা লাগবে না।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে চান্দিকা হাতুরুসিংহের প্রত্যাবর্তনটা হয়েছে অনেকটা জাদুকরের মতোই। ওয়ানডে সিরিজ হারলেও টি-টোয়েন্টি দলটাকে যেন এক ছোঁয়াতেই পাল্টে দিলেন। তবে দলের এমন চেহারা পরিবর্তনের কৃতিত্বটা হাবিবুল বাশার দিচ্ছেন সাবেক টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামকে।
এ নিয়ে সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, ‘শ্রীরাম বাংলাদেশকে ঠিক এমন জায়গাতেই দেখতে চেয়েছিল, যেভাবে বাংলাদেশ এই সিরিজে খেলেছে। একদম ভয়ডরহীন ক্রিকেট। যখন আপনি নতুন করে শুরু করবেন, তখন কিছু প্রতিভাবান ক্রিকেটার প্রয়োজন। শুরুতে সফলতা ধরা না দিলেও একটা সময় পরে ওদের হাত ধরেই সব কিছু বদলাবে। আমরা সেই মোমেন্টামটা পেতে শুরু করেছি।’
বেশ ক’বছর ধরেই দারুণ ধারাবাহিক বাংলাদেশের পেসাররা। বাংলাদেশের ক্রমাগত সাফল্যের অগ্রযাত্রাতেও থাকছে এ পেসাররা। হাবিবুল বাশার সুমনও আশার গল্প শুনিয়েছেন তাদের নিয়েই। তিনি বলেন, ‘দেখুন, এর আগে আমরা বল করতাম রক্ষণাত্বক ভঙ্গিতে। কিন্তু এখন উইকেট টেকিং বোলারের দেখা পাচ্ছি। হাসান মাহমুদ যেভাবে বাটলারকে বোল্ড করলো তা এক কথা দুর্দান্ত। এর আগে আমরা প্রতিপক্ষের রান নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখন আমরা প্রতিপক্ষের উইকেট তুলে নেওয়ার চেষ্টা করি।’
বোলারদের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ ভালই ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। নাজমুল হোসেন শান্ত একটি অর্ধশতক সহ তিনটি ৪০+ রানের ইনিংস খেলেছেন। লিটন দাশও শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছেন। মিডল অর্ডারে মিরাজও একটি কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন। সব মিলিয়ে, এই সিরিজে ব্যাটারদের কাছ থেকে একটা ইতিবাচক ইনটেন্ট অন্তত পাওয়া গিয়েছে। হাবিবুল বাশারও ব্যাটারদের কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি।
তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ জিততে হলে ব্যাটে ভাল করা লাগবেই। এই সিরিজে আমাদের ব্যাটিং এপ্রোচ দুর্দান্ত ছিল। বড় রান চেজের ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, এমন পরিস্থিতিতে আমরা ম্যাচ জয়ের অভ্যাস গড়তে পারব।’
তবে কি এই সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ দিন বদলের একটা গান রচনা করলো? হাবিবুল বাশার সুমনও সেটাই ভাবছেন। চোখ রাখতে চান আরো দূর পথের স্বপ্নে। তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে এটা আমাদের নতুন শুরু। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, তাতে বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আরো সিরিজ জিততে পারব বলে আশা রাখি।