ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত দেশগুলো যত টেস্ট ম্যাচ খেলে, বাংলাদেশ তার অর্ধেক ম্যাচ খেলার সুযোগ ঠিকমতো পায় না। আর বাংলাদেশের টেস্টে ক্রিকেটে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবেই এই কম ম্যাচ খেলার ব্যাপারটি উঠে আসে। শুধু বাংলাদেশ নয়, র্যাংকিংয়ে একটু পিছিয়ে থাকা সব দলেরই প্রায় একই অবস্থা।
ম্যাচ বণ্টনে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বৈষম্য নিয়ে তাই সমালোচনা হয় অনেক। তবে এবার আর তেমনটি ঘটে নি। ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত আইসিসির ভবিষ্যৎ পোগ্রামে বাংলাদেশের জন্য রাখা হয়েছে সন্তোষজনক সূচি।
এই চার বছরে বাংলাদেশ দল ৩৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলবে। অন্যদিকে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে মাত্র তিনটি দেশ। ইংল্যান্ড এইসময় খেলবে ৪২ টি ম্যাচ যা ভবিষ্যৎ সূচিতে সর্বোচ্চ। এক ম্যাচ কম খেলবে অস্ট্রেলিয়া, এছাড়া ভারত খেলবেন ৩৮ ম্যাচ।
অন্যদিকে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখন বড় দলই বটে। তাই নিকট অতীতে এই ফরম্যাটে ম্যাচ খেলা নিয়ে খুব একটা আক্ষেপ নেই। এবার সামনে আরো বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে হবে বাংলাদেশকে। ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে মোট ৫৯টি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ রাখা হয়েছে টাইগারদের নামের পাশে। আইসিসির ভবিষ্যৎ সূচিতে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ম্যাচের মালিক বাংলাদেশ। এমনকি পঞ্চাশের বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে মাত্র একটি দেশ, ৫৮টি ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কা।
ওয়ানডে আর টেস্ট ছাড়াও অনেকগুলো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। ২০২৩ সালের পর থেকে পরবর্তী চার বছরে ৫১টি বিশ ওভারের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছে টিম টাইগার্স।
সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ১৪৪টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আইসিসির নতুন এই প্রোগ্রামে এর চেয়ে বেশি ম্যাচ আছে শুধুমাত্র একটি দেশের; সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের নামের পাশে ১৪৬ টি ম্যাচ রেখেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ম্যাচসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের জন্যও। পরবর্তী চার বছরে জিম্বাবুয়ের জন্য ২০টি টেস্ সহ মোট ১০৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ রাখা হয়েছে। এই সময়ের মাঝে তারা আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কার সাথে খেলবে।
অন্যদিকে আফগানিস্তান ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের সাথে টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে আইসিসির ফিউচার ট্যূর প্রোগ্রামে। জিম্বাবুয়ের মত তারাও ২০টি টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। এছাড়া আরেক পিছনের সারির দল আয়ারল্যান্ডের জন্য রাখা হয়েছে ১২টি টেস্ট। এছাড়া ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাদা বলের সিরিজ খেলবে আইরিশরা।
বর্তমানে চলমান ট্যূর প্রোগ্রামে বাংলাদেশের ৩০ টি টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা ছিল। ইতোমধ্যে ২৮টি ম্যাচ খেলা শেষ বাংলাদেশের, বাকি দুইটি সামনে নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে খেলবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এছাড়া আগামী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে বেশ ব্যস্ত সময়সূচি রয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য।
২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য আছে কয়েকটি কাঙ্ক্ষিত সিরিজ। ভারত এবং পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যাওয়ে কন্ডিশনে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আছে। আর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মত পরাশক্তির পাশাপাশি শ্রীলঙ্কাকে আতিথেয়তা দিবে বাংলাদেশ।
শুধু আন্তজার্তিক পর্যায়েই নয়, ঘরোয়াতেও টুর্নামেন্ট সূচি নির্দিষ্ট করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) জন্য বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ উইন্ডো তৈরি করা হয়েছে। আগামী তিন মৌসুমে দেশের সবচেয়ে বড় এই টুর্নামেন্ট জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। এবং ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর সাথে তিন বছর মেয়াদের চুক্তি করতে যাচ্ছে বিসিবি।
বেশি বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলতে না পারার যে আক্ষেপ ছিল বাংলাদেশের সেটি মিটতে যাচ্ছে। এবার পালা লাল বলে নিজেদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানো। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো দলের বিপক্ষে সমানে-সমানে লড়াই করতে পারলে এমনিতেই বাংলাদেশকে নিয়ে আগ্রহ দেখাবে র্যাংকিংয়ে উপরে থাকা দলগুলো।