আরও কয়েকটা দিন বাকি আছে। তারপরও বলা যায়, দুয়ারে এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন দল বিশ্বকাপের জন্য তাদের স্কোয়াড ঘোষনা শুরু করে দিয়েছে। আমরা আরেকটা ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ একাদশটা ভাবার চেষ্টা করলাম। এই একাদশ এমন স্থির কিছু না। দু একটা পজিশন নিয়ে হয়তো তর্ক হতে পারে। নইলে আমাদের রিসোর্স এতোই কম যে, একাদশ বানানোটা খুব তর্কের ব্যাপার হয় না।
আমরা একাদশে আট ব্যাটসম্যান রেখেছি। এর মধ্যে আবার দু’জন জেনুইন অলরাউন্ডার। ফলে পাঁচ জন বোলার থাকছেন। আবার পার্ট টাইমারদের হিসাব করলে সাতটি বোলিং অপশন থাকছে। বৈচিত্রের দিক থেকে এটা বাংলাদেশের ভালো একটা দল বলে মনে করা যেতে পারে।
- সৌম্য সরকার (তামিম ইকবাল)
আমাদের একাদশে এই জায়গাটাই এখন সবচেয়ে জটিলকার ধারণ করেছে।
আজ থেকে কয়েক মাস আগে আলোচনা করতে বসলে আমরা নিশ্চয়ই তামিম ইকবালকে অটো চয়েজ বলে ধরে নিতাম ওপেনিংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন সেটা করা যাচ্ছে না।
প্রথমত কিছু রিপোর্ট বলছে, তামিম ইকবাল হয়তো বিশ্বকাপে খেলার মত ফিট নাও হয়ে উঠতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তো আর তাকে নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। অন্তত এটা নিশ্চিত যে, তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার মত ফিট নন।
সে ক্ষেত্রে তামিম কী কোনো ম্যাচ না খেলে সরাসরি বিশ্বকাপ দলে যোগ দেওয়ার মত অবস্থায় থাকবেন?
আমরা তামিমের স্ট্রাইকরেট, টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে চাই না। তারপরও তামিম তো ঠিক বাবর আজম বা ডেভিড মালান নন। ফলে বিশ্বকাপের আগে একটা ম্যাচও না খেলে সরাসরি এতো বড় টুর্নামেন্টের মাঠে তাকে নামিয়ে দেওয়ার মত হঠকারী কাজ করা ঠিক হবে বলেও আমরা মনে করি না।
সে ক্ষেত্রে তামিমের বিকল্প কে?
সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ নাঈম আছেন। এমনকি আপনি খুব টানাটানি করলে পারভেজ হোসেন ইমনের কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু তামিম না থাকলে উদ্বোধনী জুটিটা লম্বা করার যে দায় এবং একই সাথে আক্রমনাত্মক হওয়ার যে প্রয়োজন, সেটা মাথায় রেখে সৌম্যকেই জায়গাটা দিতে হবে।
খেলাটা তুলনামূলক বাউন্সি উইকেটে হবে; অন্তত মিরপুরের মত নিচু বল হবে না। ফলে জিম্বাবুয়েতে ভালো করে আসা সৌম্য এই পজিশনের দাবিদার থাকবেন।
- লিটন দাস
দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে লিটনকে নিয়ে খুব আলোচনা করার দরকার আছে বলে মনে হয় না।
লিটন প্রথম বল থেকেই চালিয়ে খেলতে পারবেন না। তবে একটা উইকেটে ১০-১২টা বল থেকে গেলে তিনি বেশ ঝড়ো ইনিংস খেলে আসতে পারবেন। সৌম্যর সাথে নাঈমকে বিবেচনা করা যেতো। কিন্তু নাঈমের শট খুব সীমিত হওয়ায় তাকে বিবেচনার বাইরে রাখতে হচ্ছে।
ওপেনিংয়ের জন্য সে ক্ষেত্রে লিটন দাসই সেরা ভরসা।
- সাকিব আল হাসান
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যতক্ষন সেরা বিকল্প না পাওয়া যাচ্ছে, ততোক্ষন আমাদের সেরা তিন নম্বর সাকিব আল হাসান।
সাকিবের সবচেয়ে বড় গুন-তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও রান বের করতে পারেন। প্রতি ম্যাচে চার-ছয় অনেক মারার মত অবস্থা থাকবে না। সে অবস্থাতেও রানের চাকা ঘোরাতে হবে। আর সেটা টপ অর্ডারে করার জন্য সেরা পছন্দ সাকিব আল হাসান।
ওয়ানডেতে তিনি এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন, কেন তিন নম্বরে তার বিকল্প নেই। টি-টোয়েন্টিতেও এখানে তার কিছু ভালো ইনিংস আছে। ফলে অনায়াসে সাকিবের ওপর ভরসা করা যায়।
- আফিফ হোসেন ধ্রুব
বাংলাদেশের শর্টার ফরম্যাটে এখন নতুন ‘অটো চয়েজ’ হয়ে উঠেছেন আফিফ।
বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি জাত চেনানো ব্যাটিং করেছেন। দুরূহ উইকেটে তিনি অনায়াসে শটস করতে পেরেছেন। বোলারের দুর্বলতা খুব দ্রুত ধরে ফেলতে আফিফের জুড়ি নেই। কেবল মারকাটারি ব্যাটিং করেন, তাই নয়। ইনিংস বড় করতে পারেন দারুনভাবে। শেষ করে আসতে পারেন কাজটা। আফিফের সবচেয়ে বড় গুন হলো, এই ছোট খেলাতেও তিনি ভালো জুটি করে এগিয়ে যেতে পারেন।
চার নম্বরে তাকে ছাড়া কাউকে ভাবারই সুযোগ নেই।
- মুশফিকুর রহিম
এখনও বাংলাদেশের মিডল অর্ডার মুশফিককে ছাড়া এগিয়ে যাওয়ার সময়ে আসেনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেই তার অভাব বেশ চোখে পড়েছে। চার-পাচে দু জন সলিড ব্যাটসম্যানের যে প্রচন্ড প্রয়োজন, তা মেটাতে আফিফের সাথে অভিজ্ঞ মুশফিক হবেন সঠিক সমাধাণ। মুশফিক দু ধরণের ইনিংসই ভালো খেলতে পারেন।
প্রয়োজন হলে বেশ কিছু সময় কাটাতে পারেন উইকেটে। আবার গিয়েই ঝড়ও তুলতে পারেন। ফলে মুশফিককে আমাদের দরকার হবেই। তবে দলে যেহেতু সোহান থাকছেন, তাকেও লিটনের মত ফিল্ডিং করতে হবে; কিপিং নয়।
- শেখ মাহাদী হাসান
মাহাদীর জন্য এই ব্যাটিং পজিশনটা আসলে স্থির কিছৃ নয়। তাকে আমরা বলছি, এই দলের ফ্লোটার।
মাহাদী যে কোনো পজিশনে ব্যাট করতে পারেন। এক থেকে এগারোতে ব্যাট করার দক্ষতা আছে তার। এই সুযোগটা নিতে হবে। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে হবে। তবে সবকিছু নিয়মমাফিক চললে তিনি ছয় নম্বরেই ব্যাট করতে আসবেন।
মাহাদীর আরেকটা বড় সম্পদ তার বোলিং। তিনি পাওয়ার প্লেতেও স্পিন করতে পারেন। এটাও দলের জন্য খুব কাজের জিনিস হবে।
- মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক)
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলের অধিনায়ক। ফলে তার দলে জায়গা নিয়ে আলোচনা এই সময় আর করার অর্থ হয় না।
যেহেতু তিনি খেলবেন, তাই সাত নম্বরেই ব্যাট করা উচিত। ইম্প্রোভাইজেশনের জন্য তার আগে চলে যাওয়াটা খুব ভালো পরিকল্পনা হবে না। তেমন প্রয়োজনে মেহেদী বা সোহানকে আগে পাঠানো যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে, রিয়াদ দু এক ওভার বোলিংও করবেন।
- নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক)
বাংলাদেশের ব্যাটিংকে দারুণ গভীরতা দিচ্ছেন সোহান।
প্রথমত উইকেটের পেছনে তার আচরণ এবং কিপিং তাকে কয়েকটা বোনাস পয়েন্ট দিচ্ছে। এরপর তিনি আছেন দারুন ছন্দে। এ অবস্থায় তার ব্যাটিংটা মিস করার কোনো কারণই নেই। টি-টোয়েন্টিতে সোহান এখন বাংলাদেশের সেরা পছন্দ।
অবশ্যই কিপিংটা দলে থাকলে তিনি করবেন।
- নাসুম আহমেদ/ তাসকিন আহমেদ
এই পজিশনে কে খেলবেন, সেটা আসলে প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশন দিয়ে বিচার হবে।
বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে অবশ্যই নাসুম খেলবেন। কারণ, তাদের আমরা স্পিন দিয়ে অল আউট এটাক করবো। ফলে নাসুমকে সেখানে লাগবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই এরকম আক্রমণে নাসুম নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করেছেন।
আবার মূল পর্বে যেতে পারলে আমাদের খেলা পড়ার কথা ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। সে ক্ষেত্রে একাদশে আসবেন তাসকিন। তখন আমরা তিন পেসার ব্যবহার করবো। আর তাসকিন সেখানে গতির কারণে তুরুপের তাশ হবেন। তবে, এখানে তাঁর সাথে টক্কর হবে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। টি-টোয়েন্টিতে তাসকিনের চেয়ে বেশি পরীক্ষিত সাইফউদ্দিনই।
- শরিফুল ইসলাম
মূলত বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের মূল গতির কাজটা তিনিই করবেন।
এই তরুন ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন, এই ফরম্যাটেও তিনি আগ্রাসণ দেখাতে পারেন। ফলে তার গতির কাছে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানও পরাস্ত হচ্ছেন। তার ওপর ভরসা রাখতে হবে। তবে নিতান্ত তিনি ব্যর্থ হলে তাসকিন এই জায়গাটা নেবেন।
- মুস্তাফিজুর রহমান
দলে সম্ভবত সবচেয়ে কম আলোচনা করা দরকার মুস্তাফিজকে নিয়ে।
যে কন্ডিশনে, যে উইকেটেই খেলা হোক না কোনো, মুস্তাফিজ এখন বাংলাদেশের সেরা অস্ত্র। স্লোয়ার, কাটার, ইয়র্কার দিয়ে শেষ কয়েক ওভারে প্রতিপক্ষের দু:স্বপ্ন তৈরি করে ফেলতে পারা বোলার মুস্তাফিজ। তিনি হতে পারেন বাংলাদেশের নায়ক।