২৪ মে, ১৯৯৯। আরেকটা ২৬ রানের ৫ উইকেট হারানোর দিন। তবে সেটা ভিন্ন এক গল্প, ভিন্ন এক যাত্রার, নতুন অধ্যায় তো বটেই।
এই দিনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পেয়েছিল তাঁদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম জয়। প্রতিপক্ষ ছিল স্কটল্যান্ড। সেদিনও বিপদ এসেছিল ইনিংসের একদম শুরুতেই। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ ২৬ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট – খালেদ মাসুদ পাইলট, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খান ফেরেন শূণ্য রানে।
ষষ্ঠ উইকেটে মাঠে থাকেন মিনহাজুল আবেদিন ও নাইমুর রহমান। সতীর্থদের যাওয়ার আসার মাঝে দুই জনের মনে বসে যায় ২২ গজে। ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়ে দুইজন ইনিংস মেরামতের কাজে লেগে পড়লেন।
কোন তাড়াহুড়ো না করেই রান তুলতে লাগলেন আবেদিন, রহমান। ১০.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ উইকেট জুটি ২৪ ওভার শেষে জুটি গড়ল ৫০ রানের।
একদিকে আবেদিন উইকেট ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তো, রান তোলার কাজটা সারছেন নাইমুর রহমান। ২৯.৪ ওভারে মিড অনে নিজের উইকেটটা বিলিয়ে দিলেন নাইমুর। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে স্কোর বোর্ডে যোগ করেছিলেন ৫৮ বলে মহামূল্যবান ৩৬ রান। ফলে আবেদিনের সাথে গড়া ৬৯ রানের জুটি ভাঙে। পিচে থাকা মিনহাজুলের সংগ্রহশালায় তখন ৬৩ বলে ২১ রান!
৭ম উইকেটে আসা খালেদ মাহমুদ সুজনও টিকলেন না! ৪ বলে ০ রানে শামিল হলেন আসা যাওয়ার মিছিলে..৮ম উইকেটে ব্যাট হাতে আসা এনামুল হক কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন মিনহাজুলকে। এর মাঝে দু’জন মিলে গড়েন ৩৭ রানের জুটি। এনামুল ফেরেন ৪০ বলে ১৯ রান করে, তখনো একপ্রান্ত আগলে খেলে যাচ্ছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
তিনি দলকে পার করালেন ১৫০ রানের গণ্ডি, এরপর ১০৫ বলে তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধ-শতক, ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত টিকে থেকে ১১৮ বলে অপরাজিত ৬৮ রানে মাঠ ছাড়েন তিনি। দলকে এনে দেন ১৮৫ রানের সম্মানজনক স্কোর।
পুঁজি কম হলেও, জয়ের নেশায় বুঁদ হয়েছিল টাইগাররা। হয়তো নান্নুর একার লড়াই দেখে সবার মানষিকতাই সেদিন বদলে গিয়েছিল। লড়াইয়ে মনোভাব সেদিন আরো চাঙ্গা হয়েছিল। যার ফলাফল বল হাতে, ফিল্ডিংয়ে দেখে মেলে এক অনন্য বাংলাদেশের।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সফলতার মুখ দেখালেন হাসিবুল হোসেন শান্ত, ফাস্ট বোলার। হাসিবুল, নান্নুর আক্রমণে ১০ রানের আগেই ৩ জনকে হারায় স্কটিশরা। ৮৩ রানে ছয়টা। হাল ধরার চেষ্টা চালান গ্যাভিন হ্যামিল্টন, ৮৩ থেকে দলকে নিয়ে যান ১৩৮ রানে। খেলেন ৭১ বলে ৬৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস৷ দুই ব্যাটারের ভুল বুঝাবুঝিতে ফিল্ডিং করা নান্নুর বুদ্ধিমত্তায় ফেরানো যায় হ্যামিল্টনকে।
তখন কিছুটা স্বস্তি ফিরলো, উল্টো বাতাস বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। শেষ ৫ ওভারে স্কটল্যান্ডের প্রয়োজন ৩৮ রান। বাংলাদেশের ৩ উইকেট! খালেদ মাহমুদ ফেরালেন সেট ব্যাটসম্যান অ্যালেক ডেবিসকে। ডেবিসের বিদায়ের পরই মিড অন থেকে দুর্জয়ের করা সরাসরি থ্রোতে রান আউটের শিকার হন জন ব্লেইন। পরের বলেই পয়েন্টে হাওয়ায় ভাসা বল তালুবন্দি করে আসিম বাটকে ফেরান আমিনুল ইসলাম। স্কটল্যান্ডের ইনিংসের ইতি ঘটে যায় ২২ রান দূরে থাকতেই।
টাইগার শিবিরে শুরু হয় বাঁধভাঙা উল্লাস। বিশ্বকাপে প্রথম জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ, সে জয়ে শুরু হয়, রচনা হয় নতুন ইতিহাস। ১৯৯৯ সালের সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, এই জয়টা নিয়ে তা হয় না। অথচ, সকল স্বপ্নের শুরু হয়েছিল সেদিন ।