স্মিথনামা
২৪ মার্চ ২০১৮। কেপটাউনে যেন এক অদৃশ্য ঝড়! পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায় এক ভাইরাল ভিডিও নিয়ে তোলপার। প্রেস কনফারেন্সে ভুল স্বীকার করে কাঁদছেন স্মিথ। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ। ম্যাচে ইতিমধ্যেই ব্যাকফুটে অজিরা। এর মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকান এক ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরায় ধরা পড়ে অজি ওপেনার ক্যামেরন ব্যানক্রফটের বলে স্যান্ডপেপার ঘসার দৃশ্য।
২৪ মার্চ ২০১৮।
কেপটাউনে যেন এক অদৃশ্য ঝড়! পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায় এক ভাইরাল ভিডিও নিয়ে তোলপার। প্রেস কনফারেন্সে ভুল স্বীকার করে কাঁদছেন স্মিথ। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ। ম্যাচে ইতিমধ্যেই ব্যাকফুটে অজিরা। এর মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকান এক ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরায় ধরা পড়ে অজি ওপেনার ক্যামেরন ব্যানক্রফটের বলে স্যান্ডপেপার ঘসার দৃশ্য।
দিনের খেলা শেষ না হতেই মিডিয়ায় ভাইরাল সেই ফুটেজ। খেলা শেষ হতেই জানা যায় এই কান্ডের পিছনে মূল মদদটা দিয়েছিলেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ আর সাথে ছিলেন সহ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। সংবাদ সম্মেলনে ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চাইলেন তিনি।
কিন্তু এমন ঘৃন্য কাণ্ডে সে রাতেই কেড়ে নেয়া হয় স্মিথের অধিনায়কত্ব! পরের দিন ৪৩০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫৭ রানে বিনা উইকেট থেকে ১০৭ রানেই গুড়িয়ে যায় অজিরা। এরপরই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে খবর আসে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ স্টিভ স্মিথ৷ সাথে শাস্তি পান ডেভিড ওয়ার্নার ও ব্যানক্রাফটও। প্রেসের সামনে ক্ষমা চাইতে গিয়ে সেদিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্মিথ। অনেকটা অপমান নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়েছিলেন তিনি।
এরপর এক বছর ক্রিকেটের বাইরে।
বলা হয়েছিলো আর কখনো অধিনায়ক হতে পারবেন না স্মিথ। তবে তিনি যে ফিরবেন সেটা সবারই প্রায় জানা। কিন্তু সেই স্মিথ কি আগের বিধ্বংসী রুপে ফিরতে পারবেন?
আগস্ট ১, ২০১৯।
তিনি ফিরলেন। আর ফেরাটা এমনভাবে স্মরণীয় করে রাখলেন যেটা ক্রিকেট পাড়ার অন্যতম সেরা কামব্যাক। এজবাস্টনে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩৫ রানেই ৩ উইকেট নেই অজিদের। এক বছর আগের ভুল একপাশে রেখে নামলেন স্মিথ। শত শত ক্যামেরার চোখ তার দিকে, হাজারো সমালোচনা আর সব চাপকে উপড়ে দিয়ে দূর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে দলকে খাদের কিনারা থেকে শুধু বাঁচাননি! বরং ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে এই বছরের কষ্টকে চাপা দিয়ে দেন তিনি।
সেই সিরিজে ৭৭৪ রান করে সিরিজ সেরা পুরষ্কার জেতেন তিনি। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাননি তিনি। নিজের ব্যাটিং পারফরম্যান্স দিয়ে আবারো সবার মন জয় করে নেন ২২ গজের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। এরপর এক বছরের মাথায় বিরাট কোহলিকে সরিয়ে জায়গা করে নেন আইসিসির সেরা টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে।
এবার একটু পেছন ফেরা যাক। জানা যাক লেগ স্পিনার থেকে স্মিথের ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার গল্প।
যখন তার ৫ বছর বয়স তখন থেকেই তিনি তার প্রাইমারি স্কুলের অনূর্ধ্ব-৮ দলে খেলতেন। ছোটবেলায় তাকে কেউ প্রশ্ন করলেই সোজাসাপ্টা উত্তর দিতেন তিনি ক্রিকেটার হবেন। হাই স্কুলে উঠার পরেও প্রায় সারাদিন ক্রিকেট নিয়েই পড়ে থাকতেন তিনি। বিভিন্ন আন্ত-স্কুল টুর্নামেন্টে তার দলকে জয়ের নেতৃত্ব দেন স্মিথ। মা ইংল্যান্ডের নাগরিক হওয়ায় স্মিথও ছিলেন একইসাথে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের নাগরিক। হাইস্কুলের গন্ডি পেরিয়ে ১৭ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি।
সেখানে কেন্ট ক্রিকেট লিগে সেভেনওক্স ভাইন নামের লোকাল ক্রিকেট ক্লাবে খেলা শুরু করেন তিনি। এরপর সেখান থেকেই ২০০৮ সালে মালোয়শিয়ায় অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে ডাক পান তিনি। এরপর সেখান থেকেই পরের বছর নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন তিনি। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তার দল নিউ সাউথ ওয়েলসকে চ্যাম্পিয়ন করেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় অর্ধশত গড় থাকা সত্ত্বেও জাতীয় দলে বিবেচিত হলেন একজন লেগস্পিন বোলার হিসেবে। শেন ওয়ার্ন অবশ্য তাকে বেশ পছন্দ করেছিলেন। কেই বা জানে মনে মনে হয়তো তাকে তার উত্তরসূরীও ভেবে নিয়েছিলেন কিনা!
এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের জন্য খুব বেশি সময় আর অপেক্ষা করতে হয়নি স্মিথকে। কিন্তু লেগস্পিনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হওয়া স্মিথের বর্তমান অবস্থানের আসার গল্পটা দেখে আসি।
- ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়েই মূলত স্মিথের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। একই বছর ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। দলে একজন লেগ স্পিনার হিসেবে ঢুকলেও বল হাতে ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি তিনি।
প্রথম দুই বছরে ২৯ ওয়ানডে খেলে উইকেট নিয়েছেন ২২টি! ব্যাট হাতেও ছিলেন চরম ব্যর্থ! ২৯ ম্যাচে ৩৪৩ রান করেন যার মধ্যে ছিলো না কোনো ফিফটি কিংবা সেঞ্চুরি। অপরদিকে, টি-টোয়েন্টিতে বল হাতে তিনি প্রথম বছরের সফল হন।
২০১০ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রানার্স আপ হয় অস্ট্রেলিয়া। সেবার বল হাতে সাত ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করেন তিনি এবং টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। ওই বছর বল হাতে তিনি ১৬ উইকেট শিকার করেন। এরপর বল হাতে স্মিথের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা সেখানেই শেষ। ওয়ানডেতে কিছু সময় বোলিং করলেও আর সফল হতে পারেননি। ধীরে ধীরে ব্যাটিংয়ে উন্নতি এনে হয়ে যান পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান।
এরপরের দুই বছরে মোটে সুযোগ পান চার ওয়ানডেতে! চার ম্যাচে মাত্র ৩৭ রান করেন তিনি। মূলত স্মিথ নিজের ক্যারিয়ারের সফলতার শুরুটা করেন ২০১৪ সালের পর থেকেই। তিন ফরম্যাটেই ব্যাট হাতে দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে থাকেন তিনি! আর ধীরে ধীরে ব্যাটিং পজিশনে উন্নতি হয়ে উঠে আসেন মিডল অর্ডারে।
২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চার বছরে ওয়ানডেতে ৮ সেঞ্চুরি আর ১৯ ফিফটিতে ৫০ এর কাছাকাছি গড়ে প্রায় ৩ হাজার রান করেন তিনি! ২০১০ সালে অভিষেক হওয়া যেই মানুষটা চার বছরে দলে ঠিকমতো ম্যাচ পায়নি, ছিলো না কোনো ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স! ক্যারিয়ার বাঁচাতে পারবে কিনা সেটা নিয়েই ছিলো সংশয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে চার বছরে নিজেকে অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম ভরসার জায়গায় তৈরি করেন।
এরপর ২০১৮ সালে স্যান্ডপেপার কান্ডে জড়িয়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা! নিষেধাজ্ঞার আগে ৫ ম্যাচে মাত্র ১০২ রান করেন। তবে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরেই বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচে ৪ ফিফটিতে প্রায় ৩৮ গড়ে ৩৭৯ রান করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তিনি ছিলেন ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। ১০ ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি আর ২ ফিফটিতে ৬৩ গড়ে ৫৬৮ রান!
মূলত ক্যারিয়ারের শুরুতে ফর্মহীনতা, দলে জায়গা না পাওয়া, পরবর্তীতে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে রানের পাহাড় না গড়তে পারলেও বেশ ভালো অবস্থানেই আছেন তিনি। তবে, স্মিথের নাম আর ক্যালিবারের সাথে তার টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান বড্ড বেমানান।
- টেস্ট
২০১০ সালের জুলাইয়ে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় স্মিথের। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পরেও মূলত একজন লেগ স্পিনার হিসেবেই তার অভিষেক হয়। টেইলএন্ডারদের সাথে আটে ব্যাট করে ওই সিরিজে ব্যাট করে ৭৭ রানের একটি ভালো ইনিংস খেলেন। পরের সিরিজেও তাঁকে দলে নেওয়া হয় এবং সেখানে এক ফিফটি করেন তিনি।
২০১১-১২ অ্যাশেজের পর ২ বছর জাতীয় দলে সুযোগ মেলেনি স্মিথের। এরপর ২০১৩ বর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ১৭ সদস্যের দলে সুযোগ পান তিনি। এবারো সুযোগের মূল কারণ মূলত ঘরোয়া ক্রিকেটে অনবদ্য পারফরম্যান্স। ৩য় টেস্টে সুযোগ পেলেন খেলার, সেই সাথে ব্যাটিং অর্ডারেও কিছুটা উন্নতি হলো। মোহালিতে দূর্দান্ত ৯২ রানের এক ইনিংস খেলেন তিনি। ওই সিরিজে তার নজরকাড়া পারফরম্যান্স নির্বাচকদেরও নজর এড়ায়নি! ডাক পেয়ে গেলেন স্বপ্নের অ্যাশেজ সিরিজে।
২০১৩-১৪ মৌসুমে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় দুইটি অ্যাশেজ সিরিজ হয়। অ্যাশেজের প্রথম সিরিজের প্রথম টেস্টেই ফিফটি করেন স্মিথ। লর্ডস টেস্টের পর ম্যানচেস্টার টেস্টেও খেলেন ৮৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। এরপর সিরিজের শেষ টেস্টে দেখা পেলেন বহুল প্রতিক্ষিত মেইডেন টেস্ট সেঞ্চুরির। ওভালে ১৩৮ রানের ইনিংস খেলার পর সেই সিরিজ অজিরা ৩-০ তে হারলেও স্মিথ ৩৮ গড়ে ৩৪৫ রান করেন।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজের পরের সিরিজে অজিদের মাটিতে মিচেল জনসনের চোখ ধাঁধাঁনো পারফরম্যান্স ছাড়াও সেই সিরিজের আরেক নায়ক ছিলেন স্মিথ। প্রথম দুই টেস্টে ব্যাট হাতে ব্যর্থ স্মিথের উপর ভরসা হারাননি নির্বাচকরা। ৩য় টেস্টে সেই ভরসার মূল্য সুদ সমেত ফেরত দেন স্মিথ। পার্থে ঘরের মাটিতে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। এরপর সিডনি টেস্টেও সেঞ্চুরি করে নিজেকে জানান দেন স্মিথ। সেই সিরিজে ৪০ গড়ে তার করা ৩২৭ রানে ইংলিশদের ৫-০ তে পরাজিত করে অজিরা।
এরপর এক এক করে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং জাদু দেখিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে নিজের নামকে অনেক উপরে নিয়ে যান স্মিথ। ২০১৪-১৫ বর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ১২৮ গড়ে ৭৬৯ রান করেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অল্পের জন্য প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি! ১৯৯ রানে আউট হন স্মিথ। কিন্তু ওই সিরিজের পরই টেস্টে প্রথমবারের মতো এক নম্বর ব্যাটসম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
এরপরের অ্যাশেজে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে আরো ছাড়িয়ে যান তিনি। ৯ ইনিংসে ৫০৮ রান করে অজিদের ৩-২ এ সিরিজ জিততে সহায়তা করেন তিনি। শুধু তাই নয় ওই অ্যাশেজের পরই প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পান তিনি৷ এরপর ২০১৫ সালেই আইসিসির বর্ষসেরা খেলোয়াড় সেই সাথে বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জেতেন তিনি।
তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা ফর্মে ছিলেন ২০১৪ সালে। ৯ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি আর ৪ ফিফটি! ২০১৫ সালেও ব্যাটে বিন্দুমাত্র ধার কমেনি তার। ৬ সেঞ্চুরি আর ৫ ফিফটিতে ৭৩ গড়ে প্রায় দেড় হাজার রান। টেস্টে যত বছর গড়িয়েছে স্মিথ নিজেকে নিয়ে গেছে আরো উপরে। নিষেধাজ্ঞার বছরে ৪ টেস্টে মাত্র ৮৩ রান করেন।
এরপর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেই সেই বছর ৮ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি আর ৪ ফিফটি। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে কিছুটা ফর্মহীনতা থাকলেও টেস্টে নিজের সেরা ফর্মটাই ধরে রেখেছিলেন তিনি।
এক সময় টেস্টে নিয়মিতই বোলিং করতেন। মূলত ২০১৩ অ্যাশেজের পর স্মিথ নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেন আর এরপর ২০১৪ থেকে বাকি সময়টা আপনাদের সবারই জানা। লেগ স্পিনার হিসেবে দলে এসে পাঁচ বছরের মাথায় নিজেকে সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তৈরি করাটা কারো মুখ থেকে শুনলে হয়তো ব্যাপারটা একটা গল্পই মনে হবে।
স্মিথের কিছু রেকর্ড না বললেই নয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা ফিফটি করার মাধ্যমে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ টানা ফিফটির রেকর্ডে সাঙ্গাকারার পাশে নাম লেখান। বিশ্বকাপ নকআউট ম্যাচে সর্বোচ্চ ফিফটি (৪) করেন।
একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একের অধিকবার আইসিসির টেস্ট প্লেয়ার অব দ্যা ইয়ার পুরষ্কার জেতেন। সবচেয়ে তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স পুরষ্কার জেতেন। দ্রুততম অজি ক্রিকেটার এবং বিশ্বে ৬ষ্ঠ হিসেবে ১০ হাজার আন্তর্জাতিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে টানা চার বছর ১ হাজার বা তার বেশি রান করেন। দ্রুততম অজি ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে একের অধিকবার অ্যালান বোর্ডার মেডেল জয়লাভ করেন। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে চারবার ম্যাকগিলভ্রে পুরষ্কার জেতেন
এরপর একের পর এক সিরিজে সেঞ্চুরি আর ফিফটির ফোয়ারা দেখিয়েছেন তিনি। মাঝে ২০১৮ সালের সেই স্যান্ডপেপার কান্ডের কালো এক বছর! এরপর সেই পুরোনো স্মিথ, পুরোনো ফর্ম। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি দশক সেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের খেতাব পান।
এছাড়া তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বেশ কয়েকটি দলের হয়ে খেলেছেন। তিনি খেলেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল)।
রঙিন পোশাকে খুব বড় কিছু করতে না পারলেও সাদা পোশাকে তিনি যে সবার চেয়ে সেরা সেটা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন। ক্রিকেট মাঠে এখনো দেবার আছে অনেক কিছু। নিজের স্বাভাবিক ফর্মে থেকে আর পাঁচ বছর ২২ গজে থাকলে সাদা পোশাকে নিজেকে হয়তো নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়! আর রঙিন পোশাকে হয়তো দেখা যাবে অন্য এক স্মিথকে।
এখনো তিনি ছুটছেন, ছুটে চলেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরাদের একজন হত!