বার্সার আকাশে ম্রিয়মান তারা

১৮৯৯ সালের দিকে গুটিকতক ফুটবল পাগলদের মিলিত প্রয়াস থেকে শুরু বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের যাত্রা। সময়ের পরিক্রমায় একটা শতক পেরিয়ে আজ সে ক্লাব বিশ্ব নন্দিত। স্পেনের একটা অঙ্গরাজ্যের ক্লাব এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ইউরোপের ছোট-বড় শহর গ্রামের বেড়ে ওঠা প্রতিটা ফুটবল খেলুড়ে ক্ষুদে খেলোয়াড়দের স্বপ্নের ক্লাব এখন বার্সেলোনা।

তারকা খ্যাতি পাওয়ার পরও বহু খেলোয়াড় বার্সেলোনায় আসার সুযোগ পাওয়ার পর আর দ্বিতীয় দফা চিন্তা করেননি। এমন উদাহরণ তো ২০২২/২৩ মৌসুমের দলবদলে রয়েছে ভরপুর। সব খেলোয়াড় জীবনের একটা পর্যায়ে লাল-নীল জার্সিটা গায়ে জড়াতে চায়। তবে সবার জন্য সে জার্সির যাত্রাটা হয় না সুখকর। লিওনেল মেসি, ইয়োহান ক্রুইফ, রোনালদিনহোরা এই ক্লাবের জার্সি পড়ে যেন সফলতার সর্বোচ্চটুকু ছুঁয়ে দেখেছেন। তবে যাদের কপালে সে সুখটুকু জোটেনি, আজকের আয়োজন তাদেরকে ঘিরেই।

  • ফিলিপ কৌতিনহো (ব্রাজিল)

লিভারপুলের জার্সি গায়ে রীতিমত উড়ে বেড়াচ্ছিলেন ফিলিপ কৌতিনহো। অলরেডদের হয়ে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মেই ছিলেন তিনি। এর মধ্যেই কোন প্রয়োজন ছাড়াই তাঁকে দলে ভেড়ানোর আগ্রহ দেখা কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা। শেষমেশ বার্সেলোনার মত একটা ঐতিহ্য আর ইতিহাসে ঠাসা পরাশক্তি দলের জার্সির লোভ সংবরণ করতে না পেরে কৌতিনহো ছুটে আসেন বার্সেলোনায়।

তবে তাঁর জন্য অবশ্য ১২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে ব্লাউগ্রানাদের। তবে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এক ব্যর্থ খেলোয়াড় হিসেবেই ইতিহাস হয়ে রইলেন ফিলিপ কৌতিনহো। ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি অনুজ্জ্বল ছিলেন কৌতিনহো। লিভারপুলে থাকাকালীন ফর্মটা আর হারিয়ে খুঁজে পাননি কৌতিনহো। অগ্যতা ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলাতে।

  • আন্তোনিও গ্রিজম্যান (ফ্রান্স)

ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন ফরোয়ার্ড আন্তোনিও গ্রিজম্যান। স্প্যানিশ লা-লিগার ক্লাব অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী দিনগুলোই পার করছিলেন গ্রিজম্যান। অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের রীতিমত প্রাণভোমরা ছিলেন তিনি। তাঁকে কাতালান ক্লাবে যুক্ত করবার জন্য উঠে-পড়ে লাগে জোসেফ বার্তামেউ কমিটি। শেষমেশ ১২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে প্রতিদ্বন্দী ক্লাব থেকে বার্সেলোনায় যুক্ত হন গ্রিজম্যান।

ভক্তদের প্রচণ্ডরকমের অনীহা থাকলেও, তিনি দিব্যি বার্সেলোনার জার্সি গায়ে নেমে পড়েন মাঠে। ক্যাম্প ন্যু-তে তিনি কখনোই নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারেননি। কোন এক অস্পষ্ট পর্দার আড়ালে চলে যান গ্রিজম্যান। সে পর্দা ভেদ করে বার্সেলোনার হয়ে আর আলো ছড়াতে পারেননি। ক্লাবের বোঝা বনে যেতে সময় লাগেনি গ্রিজম্যানের। সে কারণে তাঁকে ধারে খেলতে পাঠানো হয় আবারও সেই অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে। সেখানেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন আন্তনিও গ্রিজম্যান।

  • জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (সুইডেন)

‘স্যাভেজ ফুটবলার’ এই তকমাটার সাথে জুড়ে থাকা সবচেয়ে পরিচিত নাম জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। ডি-বক্সের সামনে যতটা না তিনি আতংক ছড়াতেন, তাঁর থেকেও বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নিজের কথায়। তবে মাঠের ফুটবলটা দুর্দান্তই খেলতেন ইব্রাহিমোভিচ। এমনকি এখনও তিনি খেলে যাচ্ছেন ৪০ বছর বয়সেও। এই তারকা ফুটবলার ২০০৯ সালের দিকে গায়ে চাপিয়েছিলেন ব্লাউগ্রানাদের জার্সি। তাঁকে দলে নিয়ে আসতে কাতালান ক্লাবটি খরচ করেছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউরো।

শুধু তাই নয়, সেই সাথে দলের অন্যতম আস্থাভাজন খেলোয়াড় স্যামুয়েল ইতো-কে ইন্টার মিলানের কাছে হস্তান্তর করে বার্সেলোনা বোর্ড। সে চুক্তিটা যেন ছিল খাল কেটে কুমিড় ডাকার মত। ইতো সেমিফাইনালে বার্সেলোনাকে হারিয়ে দিয়ে ইন্টারকে জেতায়। অন্যদিকে তৎকালীন বার্সা কোচ পেপ গার্দিওলার সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে যান ইব্রাহিমোভিচ। যার প্রভাবটা পড়ে তাঁর পারফরমেন্সে। তিনিও ফ্লপ খেলোয়াড়দের তালিকায় নাম লেখান।

  • মার্টিন ব্র্যাথওয়েট (ডেনমার্ক)

একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা ছিল বার্সেলোনার। ২০২০ সালের দিকে বার্সেলোনা যেন ছিল রীতিমত দিশেহারা। ঠিক তখন অনেক গুলো ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি ছিল মার্টিন ব্র্যাথওয়েট। তবে এই ভুলের জন্য অবশ্য ১৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে বার্সেলোনাকে। স্বপ্ন তিনি নিশ্চয়ই দেখেছিলেন। তবে সে স্বপ্নের শেষটা ভাল হয়নি।

শেষ বেলায় তাঁকে শুনতে হয়েছে দর্শকদের দুয়োধ্বনি। তিনি একপ্রকার বাধ্য হয়েই ছেড়েছিলেন দল। তাঁর স্বল্প সময়ের স্প্যানে তেমন কিছুই করতে পারেননি। মূলত তাঁকে দলের আক্রমণের গভীরতা বাড়াতেই নেওয়া হয়েছিল। তিনি সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেননি।

  • মিরালেম পিয়ানিচ (বসনিয়া)

২০২০ সালের টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝে আরও একজন খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সেলোনা। ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে মিরালেম পিয়ানিচকে দলে ভিড়িয়েছিল কাতালান ক্লাবটি। মধ্যমাঠের স্থিতিশীলতা ফেরাতেই তাঁকে জুভেন্টাস থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়। তবে সে দলবদলটা খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি।

এই সময়ে করা অধিকাংশ ট্রান্সফারদের মতই রীতিমত ফ্লপ খেলোয়াড়েদের তালিকায় নাম ওঠান পিয়ানিচ। বার্সেলোনার হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ তিনি পাননি। এমনকি তাঁকে ধারেও খেলতে পাঠায় বার্সা। শেষমেশ ২০২২ এ এসে দুই পক্ষের সম্মতিতে চুক্তি বাতিল করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link