ইফতেখার ‘তাণ্ডব’ আহমেদ

একটা ঝড় বয়ে গেলো সাগরিকায়। সেই ঝড়ে অবশ্য ক্ষয়ক্ষতি যা হবার তা হয়েছে রংপুর রাইডার্সের। ইফতেখার আহমেদ নামক সেই ঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেলো রংপুরের বাড়িঘর। কি দুর্দান্ত এক ইনিংস! চাপ সামলে ওঠার সবচেয়ে বড় অস্ত্র যে পাল্টা আক্রমণ সেটাই যেন আরও একবার বলে গেলেন ইফতেখার আহমেদ।

সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশালের এবারের বিপিএল যাত্রাটা যাচ্ছে দারুণ। গেলবার শিরোপা হাতছাড়া করা দলটা এবার যেন নেমেছে শিরোপা জয়ের মিশনে। আর দলকে ভরসা জোগাচ্ছেন ইফতেখার আহমেদরা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটায় বিপর্যয় যেন ছিল অবিসম্ভাবী। কিন্তু পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইফতেখার আহমেদ রীতিমত খাদের কিনারা ঘেষে দ্রুত গতিতে চালিয়ে গেলেন বরিশালের স্বপ্নরথ।

এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পঞ্চম দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ২৯ বলে তিনি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান। তবে সে যাত্রা পথে শুরুটা খানিক ধীর গতিতেই করেছিলেন। ৪৬ রানের মাথায় চার উইকেট হারিয়ে দোদুল্যমান এক পরিস্থিতি বরিশালের। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে শুরুতে খানিকটা স্থির পায়েই আগাতে হয়। আর ইফতেখার ঠিক সে কাজটাই করেছেন। নিজের ইনিংসটা খানিকটা দেখে শুনেই শুরু করেন ডান হাতি এই ব্যাটার।

 

ইনিংসের মধ্যভাগে শামীম হোসেন পাটোয়ারির এক ওভারকে টার্গেট করেন ইফতেখার। আর সেই ওভারটায় তরুণ ক্রিকেটারের স্নায়ুচাপের পূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে নেন তিনি। আর পাশাপাশি নিজের পেশি শক্তির প্রদর্শন করে চার খানা বিশাল ছক্কা আদায় করে ফেলেন তিনি। ওই এক ওভারেই যেন ঘুরে যায় বরিশালের ম্যাচের চিত্র। যেমনটা হয়েছিল রংপুরের হারিস রউফ ও হাসান মাহমুদের দুই ওভারে। তবে শামীমের সেই ওভারের শেষ বলে ক্যাচ উঠেছিল শর্ট থার্ডম্যান অঞ্চলে। তবে রনি তালুকদার সেই ক্যাচ ফেলে দেয়।

যার মাশুল দিতে হয় রংপুরকে। কেননা এরপর নিজেকে আর সংযত রাখেননি ইফতেখার। দারুণ সব ক্রিকেটীয় শটে তিনি ব্যাটিং চালিয়ে যেতে থাকেন। নিজের আর দলের পক্ষে রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন। অন্যদিকে তাঁর সতীর্থ সাকিব আল হাসানও গিয়ার পরিবর্তন করে মাঠের ফাঁকা জায়াগার সুযোগ লুফে নিতে শুরু করেন। অধিনায়ক সাকিবও তুলে ফেলেন নিজের অর্ধশতক। এই পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছেন সাকিব।

তবে ওই যে বলছিলাম ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে রংপুরকে। বিপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও এদিন নিজের দখলে করে নেন ইফতেখার আহমেদ। চলতি পথে তিনি স্বদেশী হারিস রউফের পরোয়া করেনি। তাঁর ওভারেও তিনটি সুবিশাল ছক্কা হাকিয়েছেন তিনি। ছুটে গেছেন নিজের শতকের দিকে। শেষ ওভার কাঙ্ক্ষিত সেই তিন অংকের দেখা পেয়ে যান ইফতেখার আহমেদ। নয়টি দৃষ্টিনন্দন ছক্কার উপহার দিয়েছেন ইফতেখার। পাশাপাশি ছয়টি চারও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।

ইফতেখারের এই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের ফলে বরিশাল পেয়ে যায় ২৩৮ রানের বিশাল সংগ্রহ। যা পুরো বিপিএলের ইতিহাসে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। অবশ্য এই রান করার ক্ষেত্রে সাকিব-ইফতেখার জুটির অবিশ্বাস্য ব্যাটিংই আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। ৪৬ রানে চার উইকেট হারানো অবস্থা থেকে ১৯২ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। রংপুরের জয়ের আশা ব্যাটিং করবার আগেই যেন অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে যায়।

বিপিএলে এমন তাণ্ডব বহুদিন বাদেই দেখা গেলো। এক ব্যাটারের ঝড়ো ইনিংস হয়ত দেখিয়েছে এবারের বিপিএল। তবে দুই ব্যাটারের এমন ব্যাটিং প্রদর্শনের দেখা সচারচর মেলে না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে। শীত উপেক্ষা করে মাঠে আসা দর্শকদের পয়সা ষোল আনা উসুল করিয়েছেন ইফতেখার। তাঁকে যোগ্য সঙ্গটা দিয়ে আনন্দ দ্বিগুণ করেছেন সাকিব আল হাসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link