টেম্বা বাভুমা একটা সাগরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক হাতে উত্তরাধিকার- ব্যর্থতার উত্তরাধিকার, বারবার কাছে গিয়ে তরী তীরে না ভেড়ানোর উত্তরাধিকার, চোকার্স তকমার উত্তারাধিকার। বাভুমার অন্য হাতে একখানা ব্যাট- যদি পারো ঘুচিয়ে দেখাও ২৭ বছরের আর্তনাদ। উন্মত্ত সাগর পেরিয়ে ভেড়াও তরী ওই ‘পম্পেই’ নগরীতে।
দাদি নাম দিয়েছিলেন টেম্বা, অর্থ ‘হোপ’ বা আশা। আফ্রিকার ক্রিকেটে যেন আশার প্রদীপ হয়েই এলেন বাভুমা।হাটুর ইনজুরির ব্যথা টেপে মুড়ে দাঁড়িয়েছিলেন, কারণ ভাঙা শরীর দিয়ে হলেও, তিনি বুঝতেন—এটা শুধু আরেকটা ম্যাচ নয়, এটা এক জাতির লজ্জা মোচনের সুযোগ।
প্রথম ইনিংসে ৩৬, দ্বিতীয় ইনিংসে হাঁটুর চিৎকারকে অবজ্ঞা করে ৬৬ রান।দাঁতে দাঁত চেপে খেলা ইনিংস—নির্ভরতার প্রতীক নয়, বিদ্রোহের দলিল। তিনি ম্যাচ শেষ করেননি, শেষ দেখেননি। কিন্তু তাঁর ব্যাটেই লেখা হয়ে গেছে একটা শেষের চিত্রনাট্য। দক্ষিন আফ্রিকার লজ্জার ইতিহাস শেষ হয়েছে তার ব্যাটে, তার হাতে।
তবুও বাভুমাকে নিয়ে খুব আলোচনা হবে না হয়ত। এমনকি যদি প্রশ্ন করা হয় সাউথ আফ্রিকা দলকে ঢেলে সাজাতে হলে কাদের বাদ দেওয়া যায়? অধিকাংশের উত্তরে প্রথম নামটা থাকবে বাভুমা। উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, শরীরের গঠনটাও আদর্শ ক্রিকেটারের মতো নয়। ব্যাটিংয়ে নেই ফ্ল্যামবয়ান্স। তাই হয়ত বাভুমার ব্যাটিং কন্সিস্টেন্সি অধিকাংশের চোখে পড়ে না, দিনশেষে বাভুমার সঙ্গী হয় ট্রল। তবে পরিসংখ্যানের!
অধিনায়ক হিসেবে টানা আট টেস্ট জয়, ঝুলিতে পুরে নিলেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিটাও। দুটো আইসিসি ইভেন্টে দলকে সেমিফাইনালেও তুলেছেন। দক্ষতার সাথে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ব্যাট হাতেও রেকর্ড খুব একটা খারাপ নয়।
৬৪ টেস্টে ৩৭০৮ রান, গড় ৩৮-এর কিছু বেশি। ওয়ানডেতে গড় প্রায় ৪৪, স্ট্রাইক রেট ৮৮। সংখ্যা বলে না সব, কিন্তু পরিসংখ্যানের নিচে গল্প থাকে। আর বাভুমার পরিসংখ্যানে লেখা আছে—ধৈর্যের মহাকাব্য।
ডি ভিলিয়ার্স, আমলা, গিবস—যারা পারেননি, বাভুমা তা করে দেখিয়েছেন। একটি ‘চোকার্স’ জাতিকে এনে দিয়েছেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ তকমা।তবুও তিনি হয়তো থাকবেন নেপথ্যে।কভার পেজে নয়, ফুটনোটে।ম্যাচের পর আলোচনায় নয়, বিশ্লেষণের গলিঘুঁজিতে।কিন্তু যারা জানে, লড়াই কাকে বলে, ব্যথা চেপে খেলার মানে কী— তারা জানবে,এই এক মানুষ বদলে দিয়েছে আফ্রিকার মানচিত্র। এই এক মানুষ ‘আশা’ শব্দটার সংজ্ঞা লিখেছেন নতুন করে।