১৬ বছরের পরিক্রমায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ঢুকে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচীতেও। বেশিরভাগ দেশই আইপিএলের সময়টাতে রাখে না কোনো আন্তর্জাতিক সূচী। আর আন্তর্জাতিক সূচী থাকলে আইপিএলের জন্য খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিতে হবে এটি যেন মেনেই নিয়েছে সব দেশ। ক্রিকেট খেলুড়ে সব দেশেই আইপিএলের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা থাকলেও এই ক্ষেত্রে যেন ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। পুরো বিষয়টি নিয়েই যেন একটা এলোমেলো অবস্থা বিরাজ করে প্রতিবার আইপিএল এলেই।
এবারও সাকিব আল হাসান আর লিটন দাসের আইপিএলে যাবার অনাপত্তিপত্র পাওয়া নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। সাথে যুক্ত হয়েছিল পেসার তাসকিন আহমেদেরও আইপিএলে ডাক পাবার গুঞ্জন। এমনকি একটি দল তাসকিনকে পাবার চেষ্টা করছে বলে শোনা গেলেও পরে এর আর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায় তাসকিনের এজেন্ট একটি দলের সাথে যুক্ত হবার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।
এবারে আইপিএলকে সামনে রেখে চেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সাকিব আল হাসানের আইপিএলে খেলতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। নিজের সম্ভাব্য শেষ আইপিএলে পুরোটা জুড়েই দলের সাথে থাকতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু আইপিএলের নিলামের সময় থেকেই সাকিব-লিটনদের আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের পর থেকে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য এওয়ে সিরিজের আগ পর্যন্ত ছুটি দেওয়া ছিল। এর বাইরে সাকিব-লিটনদের আইপিএলের জন্য ছাড়তে মোটেও রাজি হয়নি বিসিবি।
অন্যদিকে, সাকিব আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ও আগামী মাসে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অ্যাওয়ে সিরিজে ছুটি চেয়েছিলেন বিসিবির কাছ থেকে। সাকিবের ফ্রাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাইডার্সও চেয়েছিল সাকিবকে পুরো আইপিএলের জন্য পেতে। কিন্তু আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের বাইরে কোনো ছুটি দিতে কিছুতেই রাজি হয়নি বোর্ড।
তাই সাকিব আর কলকাতার দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে এবারের আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ান সাকিব। তবে বড় খবর হলো, নিজ থেকে আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ানো সাকিব আর আইপিএলের দল পাবার চেষ্টায় থাকা তাসকিন দুইজনকেই ক্ষতিপূরণ দিতে যাচ্ছে বিসিবি।
তবে প্রশ্ন হলো, জাতীয় দলের খেলার কারণে আইপিএলে খেলতে না গেলে কেনো খেলোয়াড়দের ক্ষতিপূরণ দেবে বোর্ড? প্রতিবছর বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে দেশের হয়ে প্রত্যেকটা ম্যাচ খেলার বাধ্যবাধকতা আছে খেলোয়াড়দের। তাই জাতীয় দলের ম্যাচ খেলতে গিয়ে আইপিএল মিস করায় কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে সাকিবকে সেটিই বড় প্রশ্ন এখন।
অন্যদিকে, সাকিব আল হাসান নিলামে দল পেলেও, দলই পাননি তাসকিন। এমনকি তাঁর এজেন্ট কোনো একটা দলে যুক্ত হবার চেষ্টা চালালেও সফল হননি শেষ পর্যন্ত। এদিকে আবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের আগেই ইনজুরিতে পড়েছেন তাসকিন। বিসিবির ডাক্তাররা জানিয়েছেন মাঠে ফিরতে চার সাপ্তাহ সময় লাগবে তাসকিনের। তবুও তিনি আছেন আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবার আলোচনায়।
গত বছরও লক্ষনৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে আইপিএলে খেলার ডাক এসেছিল তাসকিনের। কিন্তু দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ চলমান থাকায় তাকে অনাপত্তিপত্র দেয়নি বিসিবি। তবে তাসকিন বারবার মিডিয়াতে বলে এসেছেন তাঁর আইপিএলে খেলার ইচ্ছার কথা।
সেক্ষেত্রে তাসকিনকে কিছুটা ক্ষতিপূরণ দিয়ে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে বিসিবি। কিন্তু এবার যেখানে তিনি দলই পাননি আর সাকিব যেখানে নিজে থেকেই নাম প্রত্যাহার করেছেন সেখানে তাদের কি আসলেই বিসিবির ক্ষতিপূরণের অর্থটা প্রাপ্য?