ভেতরের লুপহোল জানেন বলেই তাগিদ নেই ব্যাটারদের

বড় ব্যর্থতার পরও কার্যকর বিকল্প না থাকায় খেলোয়াড়দের কাঠগড়ায় তোলা যায় না। এশিয়া কাপ শেষে সেই দুষ্টচক্র আবারও সামনে চলে এসেছে।

সংকির্ণ পাইপলাইনের কারণেই বাংলাদেশ দলে রয়েছে জবাবদিহিতার ঘাটতি। বড় ব্যর্থতার পরও কার্যকর বিকল্প না থাকায় খেলোয়াড়দের কাঠগড়ায় তোলা যায় না। এশিয়া কাপ শেষে সেই দুষ্টচক্র আবারও সামনে চলে এসেছে।

সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপে ব্যর্থতার দৃষ্টিকটু নিদর্শন স্থাপন করেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ১৩৬ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করলেই যেখানে ফাইনাল নিশ্চিত সেটাই করতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপরও জাতীয় দলে নেই কোনো পরিবর্তন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে স্রেফ একটি বদল আনা হয়েছে। সেটা অবশ্য খানিকটা বাধ্য হয়েই করা হয়েছে।

লিটন দাস ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপের শেষ দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি। এই মুহূর্তে তাই আর ঝুঁকি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার মানে নেই। সে কারণেই বিশ্রামে রাখা হয়েছে লিটনকে। তার পরিবর্তে আফগানিস্তান সিরিজে যুক্ত হয়েছেন সৌম্য সরকার। এক্ষেত্রে সহজ বিকল্প হিসেবেই তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন নির্বাচকরা।

এর অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়দের উপরই ভরসা রাখতে চাইছে। তাদেরকে সুযোগ দিতে চাইছে। তবে এসব ক্ষেত্রে সফলতা বাংলাদেশ ক্রিকেটে এসে ধরা দিয়েছে- এমন উদাহরণ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। নাঈম শেখ, এনামুল হক বিজয়দের নাম নেওয়া যেতে পারে ভরসার প্রতিদান না দেওয়াদের তালিকায়।

বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশের পাইপলাইন সংকীর্ণ। তাইতো আট ব্যাটার মিলে গোটা টুর্নামেন্টের ছয় ম্যাচে স্রেফ ৭৩৯ রান করার পরও, সেখানে কোন বদল আনা সম্ভব হয়নি। একথা সত্য একটা টুর্নামেন্ট দিয়ে যাচাই করা ঠিক নয়। তবে একটা টুর্নামেন্ট ব্যর্থ হওয়ার কোন প্রকার জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না কাওকেই- এটাও বরং দৃষ্টিকটু।

বরং তারা প্রত্যেকেই আরও একটি সিরিজ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাংলাদেশ প্রায়শই জেতে, বড় দলগুলোর বিপক্ষেও। কিন্তু বড় আসরে খাবি খায় নিদারুণভাবে। কারণ তাদেরকে কখনোই জবাবদিহি করতে হয় না। খারাপ পারফরমেন্সের পরও তিরস্কার স্বরুপ তাদেরকে দলের বাইরে যেতে হয় না।

জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রতিটা খেলোয়াড় পাইপলাইনের অবস্থা জানেন। তারা এই লুপহোলটা ধরে ফেলেছেন। একবার স্রেফ জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে চাপাতে পারলেই হয়, এরপর বাকি জীবনে ঘুরে-ফিরে তারাই দখল করতে পারবেন ড্রেসিং রুমের জায়গাগুলো। সে কারণেই কারো মনে নিজেকে উন্নত করবার চিন্তা আসে না। জাতীয় দলে টিকে থাকতে গড়পড়তা পারফরম করলেই হয়। অহেতুক কেনই বা কষ্ট করবেন!

এ কারণেই বাংলাদেশ দল দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নিয়মিত ক্রিকেট খেললেও অর্জনের খাতায় নেই তেমন কোন শিরোপা। গড়পড়তা তিন-চার জয়েই সন্তুষ্ট গোটা দল। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোর্ডও তাতেই সন্তুষ্ট। এ কারণেই এশিয়া কাপের ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন হয়ে ওঠে হেডলাইন। যার যার আখের গোছানোতেই মনোযোগ সবার, হোক তা খেলোয়াড়, সংগঠক কিংবা দল সংশ্লিষ্ট যে কেউ।

এ কারণে ভারতের উন্নতিতে ঈর্ষা হয় স্রেফ দর্শকদের। ক্রিকেটের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকে সুযোগের অপ্রতুলতার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যেতে চান দায়ভার। ফলশ্রুতিতে এক নেতিবাচক চক্রে আটকে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এই চক্র ভাঙার সৎ সাহস দেখাবেন কি কেউ কখনো?

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link