ওভালের ফাইনাল, ভারতের সম্ভাবনা ও সমস্যা

ব্যাটিং নাকি বোলিং, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে জেতাতে পারে কোন ইউনিট?

ভারত নাকি অস্ট্রেলিয়া? আগামী ২ বছরের জন্য কোন দলের হাতে উঠবে টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক গদাকৃতির রাজদণ্ড? বুধবার ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল মাঠে গড়ানোর আগে সেই সম্ভাব্য ফল নিয়েই এখন ক্রিকেটমোদীদের জল্পনা কল্পনা তুঙ্গে।

২০১৯-২১ চক্রের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হয়েছিল ভারত। আর তৃতীয় হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তাই দুই দলের জন্য ওভালের ফাইনাল হয়ে দাঁড়িয়েছে অপূর্ণতা ঘোচানোর মঞ্চ। সেই যাত্রায় অবশ্য এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চক্র দুই দলই এর আগে ৪ বার মুখোমুখি হয়েছিল। ভারতের মাটিতে ৪ ম্যাচের সেই অ্যালান-বোর্ডার সিরিজে ২-১ এ সিরিজ জিতেছিল রোহিত শর্মারাই।

তবে এবারের ফাইনাল তো আর ভারতের মাটিতে নয়। একদম বিপরীত এক কন্ডিশনে, যেখানে স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের প্রতাপ থাকে বেশি। যেখানকার অতীত পরিসংখ্যান ভারতীয় ব্যাটারদের বিপরীতে কথা বলে। অবশ্য এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ যাত্রায় ভারতীয় ব্যাটাররা বলার মতো তেমন কিছু করতেও পারেননি।

সর্বোচ্চ রান এসেছে পুজারার ব্যাট থেকে। কিন্তু ৩০ ইনিংসে পুজারা ৮৮৭ রান এসেছে ৩২.৮৫ ব্যাটিং গড়ে। পুজারার মতোই গড়পড়তা পরিসংখ্যান কোহলিরও। ৩২.১৮ গড়ে তিনি করেছেন ৮৬৯ রান। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৪৩.৭৫ গড়ে করেছেন ৭০০ রান।

লোয়ার মিডল অর্ডারে রবীন্দ্র জাদেজা খারাপ করেননি। বরং টপ অর্ডারদের তুলনায় ব্যাট হাতে তিনি সাবলীলই ছিলেন। ৩৭.৩৮ গড়ে ৬৭৩ রান করেছেন। কিন্তু ২ সেঞ্চুরি আর ৩ হাফসেঞ্চুরিতে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন অন্য একটি জায়গায়। কারণ তাঁর মতো ৫ ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলতে পারেননি দলের আর কোনো ব্যাটার।

ভারতকে মূলত ফাইনালে তুলতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে বোলাররা। ১৩ ম্যাচে দলের সর্বোচ্চ ৬৩ টি উইকেট নিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রবীন্দ্র জাদেজা নিয়েছেন ৪৩ টি উইকেট। এ ছাড়া পেসারদের মধ্যে মোহাম্মদ শামি ৪১ আর মোহাম্মদ সিরাজ নিয়েছেন ৩১ টি উইকেট।

ওভালের ফাইনালে ভারতের ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন রবিচন্দ্রন আশ্বিন। কারণটা বাঁহাতিদের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত বোলিং। টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৪৭৪ টা উইকেট নেওয়া এ স্পিনার বাঁহাতি ব্যাটারদের আউট করেছেন ২৪১ বার। অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য একাদশে ৫ জন বাঁহাতি ব্যাটার থাকছেন। তাই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের কাছে অন্যতম এক হুমকির নাম হতে পারেন এই অশ্বিন।

আশ্বিনের বিপক্ষে অজি ব্যাটারদের অসহায়ত্বের দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল সর্বশেষ সিরিজেই। সে সিরিজের ৪ ম্যাচে ২৫ উইকেট নেওয়া এ স্পিনার তো এক ইনিংসেই ৫ অজি বাঁহাতি ব্যাটারকে ফিরিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ওভালের উইকেট যতোই পেস সহায়ক হোক, আশ্বিনের স্পিনকে নিয়ে আলাদা রণকৌশল সাজাতেই ভারত। তবে আশ্বিনকে সামলাতে এতক্ষণে অস্ট্রেলিয়াও বোধহয় নিজেদের আলাদা এক পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এখন দেখার পালা, শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ তাদের পরিকল্পনায় সাফল্য ছুঁতে পারে।

অবশ্য ভারতের শুধু স্পিন শক্তিই নয়, রয়েছে সমৃদ্ধ এক পেস বোলিং লাইনআপও রয়েছে। যেখানে জাসপ্রিত বুমরাহর অনুপস্থিতিতেও শামি, সিরাজকে নিয়ে দলটা হয়ে উটেছে দুর্বার, দুর্দান্ত। ওভালের ফাইনাল হবে ডিউক বলে। অর্থাৎ পেসাররা বেশি সুবিধা পাবেন।

প্যাট কামিন্স, মিশেল স্টার্কদের বিপরীতে মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজরাও কিন্তু ততটা পিছিয়ে নেই। এ ছাড়া উমেশ যাদব, জয়দেব উনাদকাতরাও রয়েছেন স্কোয়াডে। সব মিলিয়ে এমন একটা পেস বোলিং লাইনআপে স্বপ্নের বুনন বুনতেই পারে ভারত।

গোটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যাটাররা তেমন ভাল করতে পারেননি। তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় ব্যাটাররা রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। যদিও বিরাট, গিলের আগের ওভাল রেকর্ড চোখ রাঙানি দিচ্ছে। তবে, সে সব তিক্ততা মাখা স্মৃতি মুছে ফেলে তাদের সামনে এখনই প্রমাণ করার মোক্ষম সময়।

ওভালের ফাইনাল কে জিতবে, তা সময়ই বলে দিবে। বেশি না। আর দিন পাঁচেকের অপেক্ষা মাত্র। তবে গত দুই বছরের সেরা দুই টেস্ট দলের লড়াইটার দিকে যে পুরো বিশ্ব ক্রিকেটের চোখ তাক করা থাকবে, তা অবশ্যম্ভাবীই বটে। লাল বলের ক্রিকেটীয় এ মহাযজ্ঞ কোন দল শেষ পর্যন্ত নিজদের রঙিন করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...