ছয় ফুট উচ্চতার দীর্ঘদেহী পশ্চিমবঙ্গের এক যুবক। সম্ভবত প্রদেশটির ইতিহাসের সেরা পেস বোলার ছিলেন। দুই দিকেই তিনি বল স্যুইং করাতে ছিলেন পারদর্শী, বিশেষ করে তাঁর আউট স্যুইং ছিল মারাত্মক। এই পেসার লাইন লেন্থেও ছিলেন নিখুঁত, পাশাপাশি কাটারটাও ছিল কার্যকর।
ফলে ভারতের সেরা পেসারদের একজন হবার সবকিছুই তাঁর মধ্যে ছিল। তবে ক্রিকেটীয় রাজনীতি কিংবা সময় বোধহয় পক্ষে ছিল না সুব্রত গুহের। ফলে, বাংলার ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনি কেবলই আক্ষেপ, যার বিরাট ফাস্ট বোলার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল।
সুব্রত গুহদের আদি ভূমি মূলত বাংলাদেশে। তাঁর বাবাও বড় হয়েছেন ঢাকাতেই। তবে দেশ ভাগের সময় পরিবার নিয়ে ওঠেন কলকাতার লেক রোডে। সেখানেই তাঁর তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহন করেন সুব্রত গুহ।
তবে তাঁর বেড়ে ওঠাটা খুব একটা সুখকর ছিল না। মাত্র ৯ বছর বয়সেই বাবা-মা দুজনকেই হারান। তাঁর বড় ভাইদের কাছেই বড় হয়েছেন সুব্রত গুহ।
তবে, বাবার পরিচয়ের সূত্রে কেউ আগ বাড়িয়ে সুব্রতকে ঢাকার ছেলেও বলে ফেলতে পারেন। যদিও, তাঁর বেড়ে ওঠা একেবারেই কলকাতাতেই, সেখানেই তাঁর ক্রিকেটার পরিচয়ের আত্মপ্রকাশ ও বিকাশ।
বড় ভাইরাও সুব্রত’র ক্রিকেট খেলাটা খুব একটা পছন্দ করতেন না। তবে তাঁর ভাবীরা তাঁকে ক্রিকেট খেলার জন্য বেশ অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছেন। কলকাতার মাঠে দ্রুতই পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন সুব্রত গুহ।
সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তিশালী দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। রঞ্জি ট্রফিতে নিজের অভিষেক ম্যাচেই নজর কেড়েছিলেন। সেখানে প্রথম ইনিংসে ৩৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।
পরের ইনিংসে নেন আরো দুই উইকেট। তবে শিরোনাম হয়েছিলেন ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে বোম্বের বিপক্ষে সেমি ফাইনাল ম্যাচে। ওই ম্যাচে গুহ একাই ৫৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট।
এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারত সফরে আসলে তাঁদের সাথেও ভারতীয় ইউনিভার্সিটির হয়ে ম্যাচ খেলেন গুহ। তবে সেই সিরিজে টেস্ট অভিষেক হয়নি তাঁর। সেই সময় এতটা প্রতিভা নিয়েও ভারতীয় দলে জায়গা না পাওয়ার কিছু কারণ ছিল।
প্রথমত, তৎকালীন বাংলার পত্র পত্রিকা গুলো রায় দিয়েছিল ক্রিকেটীয় রাজনীতির কারণে দলে ডাক পেতেন না সুব্রত। এছাড়া সেই সময় ভারত দলে খুব বেশি পেসারদের খেলানো হত না। দেশের মাটিতে তো খেলানো হতই না। স্পিনারদেরই প্রাধান্য দেয়া হত।
বিদেশের মাটিতে খেলা হলেই একাদশে পেসারদের সুযোগ মিলত। ফলে পেসারদের ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়াটা বেশ কঠিনই ছিল। এর মধ্যেও ১৯৬৭ সালে অবশেষে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বলার মত খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। মাত্র চার টেস্টেই থেমে যায় তাঁর ক্যারিয়ার। নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। তাঁর বাদ পড়া নিয়েও সেই সময় পশ্চিম বঙ্গের পত্রিকাগুলোতে তুমুল হইচই হয়েছিল। প্রাদেশিক রাজনীতির গন্ধও পেয়েছিলেন অনেকে।
তবে বাংলার ক্রিকেটকে সার্ভিস দিয়েছেন দীর্ঘকাল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন ২৯৯ উইকেট। ব্যাট হাতেও করেছিলেন হাজার খানেক রান। তবুও বাংলার ক্রিকেটে তিনি এক আক্ষেপের নাম।
পেসার হিসেবে যে সামর্থ্য তাঁর ছিল তাতে হয়তো ভারতের ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছুই দিতে পারতেন। তবে সময়ের গ্যাঁড়াকলে এসবই শুধু কল্পনার আলাদীন।