এক দশক পর হিসাবের খাতা নিয়ে সকলেই বসছেন। আমরাও বসি। তবে দশক সেরা দল অনেকেই বানাচ্ছেন, তাই সেই পথ দিয়ে হাঁটছি না। টেস্ট ও ওয়ানডের নিরিখে, দশকের সেরা পাঁচ ম্যাচ, সেরা পাঁচ ইনিংস, সেরা পাঁচ স্পেল ইত্যাদি বেছে নেবো।
আজ থাকছে টেস্টের সেরা পাঁচ ইনিংসের গল্প। এই ইনিংস গুলি বাছাই করাব ব্যাপারে আমার কাছে রান সংখ্যার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে কোন পরিস্থিতে সেই রান এসেছে, রানের গুণগত মান এবং বিপক্ষের আক্রমণ। তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
- বিরাট কোহলি ১১৯ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, জোহানেসবার্গ ২০১৩
সিরিজের প্রথম টেস্ট। জোহানেসবার্গের সুপার স্পোর্ট পার্কের শক্ত বাউন্স ভরা উইকেটে সেরা ফর্মের স্টেন, মরকেল, ফিলান্ডার। অল্প রানেই দুই উইকেট গেছে। শচীন উত্তর প্রথম সিরিজ। এর আগে ওয়ানডে সিরিজে কচুকাটা হওয়া। এর থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতে কোহলি আর পড়েছেন কিনা সন্দেহ।
কিন্তু, সেটা যেন বিরাটের কাছে বাড়তি রসদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেভাবে স্টেন, মরকেলদের অলস ঔদ্ধত্যে পুল মেরেছেন সেরকম আর কখনো মারতে দেখিনি। বিরাটের সেই ইনিংস ভারতকে ২৮০ রানের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেয় যেটা না থাকলে গত দশকের অন্যতম সেরা টেস্টের জন্ম হতো না।
- স্টিভেন স্মিথ ১৪৪ ও ১৪২ বনাম ইংল্যান্ড, এজবাস্টন ২০১৯:
এক বছরের নির্বাসন শেষে ফিরে এসেই যদি কেউ স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসন, ক্রিস ওকসের স্যুইং করতে থাকা ডিউক বলের সামনে পড়েন ১৭ রানে ২ উইকেটের স্কোরে, তাহলে কি হবে? হলফ করে বলতে পারি স্মিথ, কোহলি, উইলিয়ামসন ক্লাসের ব্যাটসম্যান ছাড়া যে কেউ কেঁপে যাবেন।
স্মিথ এমনই এক প্রতিভা যিনি সেই পরিস্থিতিতে পাল্টা মার দিয়েছিলেন। ১২২ রানে ৮ উইকেট সেই অবস্থা থেকে প্রথমে অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধার করা, তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে বার করে দেয়া ১৪২। এশেজ সিরিজের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া এই ইনিংসদ্বয় অ্যাশেজ ক্রিকেটের ইতিহাসে ততদিন বেঁচে থাকবে যতদিন টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে থাকবে।
- শাই হোপ ১৪৭ ও ১১৮, বনাম ইংল্যান্ড, হেডিংলি ২০১৭
স্মিথের জোড়া সেঞ্চুরির চেয়ে আমার খাতায় হোপের জোড়া এগিয়ে থাকবে দুটো কারণে। এক, হেডিংলের অপেক্ষাকৃত কঠিন ব্যাটিং পরিবেশ। হেডিংলের ইতিহাসে হোপ ছাড়া আর কেউ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এই মাঠে জোড়া সেঞ্চুরি করেননি। দ্বিতীয়, চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করার চাপ।
ভাবলে অবাক লাগে, এই দুই ইনিংসের পর হোপ আর তেমন সাফল্য পাননি। কিন্তু তাঁর এই জোড়া সেঞ্চুরি বহুদিন মনে থেকে যাবে।
- কুশল পেরেরা ১৫৩, বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ডারবান ২০১৯
লালমোহন বাবুর ভাষায়, ডারবানের সেই দুপুরে পেরেরা ছিলেন ‘এক দিন কে সুলতান’। ডারবানের সেই ধুন্ধুমার ইনিংস পেরেরা জীবনে ওই একবারই খেলেছিলেন। কিন্তু জাতে, সাহসে, চাপ নেয়ার ক্ষমতায় সেই ইনিংস ছিল একমেবাদ্বিতীয়ম। শ্রীলঙ্কার সেই টেস্ট জয়, পেরেরার সেই ইনিংস সবই ছিল ফ্লুক। কিন্তু এমন ফ্লুক দশকে এক-আধবার হলে মন্দ হয় না।
- বেন স্টোকস ১৩৫ বনাম অস্ট্রেলিয়া, হেডিংলি ২০১৯
জাতে পেরেরার ইনিংস স্টোকস এর চেয়ে অনেকটাই ভালো। স্টোকস তো বেশ কয়েকবার ক্যাচ তুলে বা এলবি হতে হতে বেঁচে গেছেন। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে স্টোকসের ইনিংস বেশ কিছুটা এগিয়ে।
অ্যাশেজ হেরে যাবেন ম্যাচ হারলে, বোলিংয়ে জশ হ্যাজেলউড, প্যাটিনসন, নাথান লিওঁ, লক্ষ্যমাত্রা ৩৬২ হেডিংলিতে যা আগে কখনো হয়নি। কিন্তু সেই বছর স্টোকস এর বছর ছিল। বিশ্বকাপ ফাইনালে অতিমানবিক খেলার পর ওই ইনিংস ভাবাই যায় না। তাই আমার খাতায় গত দশকের শ্রেষ্ঠ ইনিংস স্টোকসের ১৩৫।
এর বাইরেও কয়েকটা ইনিংসের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। যেমন, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ৩০২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন ভারতের বিপক্ষে, ২০১৪ সালে ওয়েলিংটনে। আবার ২০১২ সালে কেভিন পিটারসেন মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে ভারতের বিপক্ষে করেন ১৮৬ রান। এখানে মহেন্দ্র সিং ধোনিও আসবেন। সাবেক ভারতীয় এই অধিনায়ক ২২৪ রান করেন ২০১৩ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চেন্নাইয়ে।