১৫ বছর পর বিশ্বকাপে মূলপর্বে প্রথম জয় পাওয়া বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন নিয়েই মাঠে নেমেছিলো। বিপরীতে বৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাচে পয়েন্ট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালের সম্ভবনা জিইয়ে রাখতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হতো। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মুখোমুখি হওয়া ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে সেমিফাইনালের স্বপ্ন শঙ্কায় বাংলাদেশের।
সিডনির উইকেটের কথা মাথায় রেখে উভয় দল একজন করে বাড়তি স্পিনার নিয়ে মাঠে নামে। বাংলাদেশ ইয়াসির আলী রাব্বির পরিবর্তে মেহেদী হাসান মিরাজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার লুঙ্গি এনগিডির জায়গায় একাদশে ডাকে স্পিনার তাবরাইজ শামসিকে।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা তাসকিন আহমেদের করা প্রথম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে দারুন বোলিং করা বাংলাদেশ দলের বোলাররা হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে তৃতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদের টানা দুই নো বলে।
দুই ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ১০ রানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা চোখের পলকে ৫.৩ ওভারে পৌঁছে যায় ৬০ রানে। এসময় বাংলাদেশ বোলারদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে সিডনির বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার পর খেলা পুনরায় শুরু হলে শুরুর দিকে কিছুটা শান্ত থাকেন কুইন্টন ডি কক ও রাইলি রুশো। ৬,৭ ও ৮ এই তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান করে তারা।
তবে এরপর যেন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে দুই ব্যাটার। ১১তম ওভারে শত রান পার করা প্রোটিয়ারা ১৪তম ওভার শেষে ১৬০ রানে পৌঁছায়। দুই বাঁ-হাতি ব্যাটারের ঝড়ে ছিটকে যেতে থাকা ম্যাচে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন। ইনিংসের ১৫তম ওভারেই বোলিংয়ে এসে তুলে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক ব্যাটার কুইন্টন ডি কককে।
৩৮ বলে ৬৩ করা ডি কককে ফিরিয়ে ১৬৮ রানের জুটি ভাঙ্গেন ডানহাতি এই অফস্পিনার। এরপর বাংলাদেশ এর বোলাররা দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন বাংলাদেশকে। একপ্রান্তে রাইলি রুশো অবিচল থাকলেও অপর দিকের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষ পাঁচ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৯ রান সংগ্ৰহ করে।
১৭তম ওভারে মাত্র ৫২ বলে শতক পূর্ণ করা রাইলি রুশো থামেন ৫৬ বলে ১০৯ রান করে।সাকিবের বলে লিটন কুমার দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। বাঁ-হাতি রুশো ১০৯ রানের ইনিংসে ৭ টি চার ও ৮ টি বিশাল ছক্কা হাঁকান। শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা সুবিধা করতে না পারায় ৫ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রানে থামে তাদের ইনিংস। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান প্রথম ওভারে ২১ রান দিলেও তিন ওভারে ৩৩ রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নেন।
বিশাল রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারের বিশাল দুই ছয়ে ১৭ রান তোলে ভিন্ন কিছুরই যেন স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো বাংলাদেশ। তবে বোলিংয়ের মতোই ব্যাটিংয়েও প্রথম দুই ওভারে বেশ আক্রমণাত্মক খেললেও তৃতীয় ওভারে পা হড়কায় টাইগার ওপেনাররা।
এনরিচ নরকিয়ার করা প্রথম ওভারে দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফেরান এই প্রোটিয়া। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আবারও বোলিংয়ে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশ এর জয়ের আশা ধূলিসাৎ করে দেন। যদিও রিপ্লাইয়ে দেখা গিয়েছিলো সাকিব আল হাসান যদি রিভিউ নিতেন তবে তিনি বেঁচে যেতেন। পাওয়ারপ্লের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৭ রান তুলতেই হারান চার উইকেট।
এরপর একদিকে লিটন কুমার দাস টিকে থাকলেও অন্যদিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে সাকিব বাহিনী। বাংলাদেশ শেষ ছয় উইকেট হারায় মাত্র ৩৫ রানে। লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ ও পেসার তাসকিন আহমেদ ব্যতীত বাকি সকল ব্যাটার আউট হয়েছেন এক অংকের ঘরে।
দলীয় ৮৫ রানে তাবরাইজ শামসির বলে লিটন কুমার ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে বাংলাদেশের বড় পরাজয় নিশ্চিত হয়। শেষ পর্যন্ত ১৬.৩ ওভারে ১০১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ দল। ৩.৩ ওভারে ১০ রান দিয়ে চার উইকেট তুলে নেন এনরিচ নরকিয়া। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম শত রানের মাইলফলক ছোঁয়া রাইলি রুশো ম্যাচ সেরা হন।
প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ভিন্ন কিছুর স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ বাস্তবে ফিরে আসলো দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরে। এই হারে ব্যাটিং বোলিংয়ের পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বও প্রশ্নের মুখে। বোলিংয়ের সময় নেওয়া দুটি রিভিউ এবং ব্যাটিংয়ে নিজের আউটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ না নেওয়া ছাড়াও বোলিং পরিবর্তনও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সাকিব আল হাসানের সামনে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচ দিয়েই নিশ্চয়ই সকল প্রশ্নের জবাব দিতে চাইবেন সাকিব আল হাসানরা।