সমালোচনার আগুনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে শ্রেয়াস আইয়ার যেন জবাব দিলেন, ‘না, পাঞ্জাব কিংস ভুল কিছু করেনি।’ ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপি দিয়ে যখন শ্রেয়াসকে দলে ভেড়ালো পাঞ্জাব কিংস, চারিদিকে তখন ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ আর সমালোচনা। তবে সেই শ্রেয়াসই এখন পাঞ্জাবের অধরা স্বপ্নের রুপকার।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর কাছে হারের পর শ্রেয়াস বলেছিলেন, ‘আমরা কেবল একটা লড়াই হেরেছি, যুদ্ধ হারিনি।’ যুদ্ধের মঞ্চে আহত সৈনিক যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা দেখলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সেনাপতির মতো একা হাতে যুদ্ধের মঞ্চে কচুকাটা করলেন বুমরাহ, বোল্ডদের মতো প্রতিপক্ষকে।
শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্ব যেন জাদুর কাঠি, যেখানেই ছোঁয়া লাগে সেখানেই সাফল্য। ২০১৯ সালে দিল্লীকে সাত মৌসুম পর প্লে-অফে তুলেছিলেন, ২০২০ সালে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। ২০২৪ সালে কলকাতার ট্রফি খরা ঘুচিয়েছিলেন ১০ বছর পর। আর ২০২৫ সালে পাঞ্জাব কিংসকে ১১ বছর পর ফাইনালে তুললেন। এ যেন রূপকথার ফিনিক্স পাখির গল্প, যে শুধু উড়তেই জানে।
২০২৩ সালে ব্যাক ইনজুরিতে অস্ত্রোপচার হয়, সেন্ট্রাল কনট্রাক্ট থেকে বাদ পড়েন। তবে হাল ছাড়েননি। জানতেন সময়টা খারাপ যাচ্ছে, ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকলে দিন পাল্টাবে। ঘরোয়া থেকে জাতীয় দল, সব জায়গায় নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন আইয়ার।
টি-টোয়েন্টিতে শ্রেয়াস উপযুক্ত না—বারবার ভারতীয় দলে উপেক্ষিত হয়েছেন, তবুও হাল ছাড়েননি। চুপচাপ নিজের কাজটা করে গেছেন। ২০২৪ সালে যখন কলকাতা চ্যাম্পিয়ন হলো, সেই দলের অধিনায়ক শ্রেয়াস মূল্যায়নটা কম পেয়েছিলেন। লাইমলাইটে ছিলেন দলটির মেন্টর গৌতম গম্ভীর।
তবে মাঠে তো ১১ জনই নামে। আর সেই ১১ জনকে পরিচালনা করা, দায়িত্ব কাঁধে ঝড় সামলানো, প্রয়োজনে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো—সে তো এক শ্রেয়াসই করেছিলেন।
সময় সবসময় দ্বিগুণ করে সব ফিরিয়ে দেয়। শুধু লক্ষ্যটা ঠিক রেখে নিজের কাজটা করে যেতে হয়। ১৩তম ওভারে রিস টপলির বলে পরপর যে তিনটি ছয় হাঁকিয়েছিলেন, ওটাই তো ঘুরিয়ে দিয়েছিল ম্যাচের মোড়, আর ওটাই ছিল শ্রেয়াসের জবাব—বাকিটা তো সময়ের হাতে।
বাকি মাত্র একটা বাধা, এটা পার হলেই তো রাজ্যের সব দুঃখ অবসরে যাবে। এটা জিতে গেলেই চ্যাম্পিয়ন শ্রেয়াসের রেকর্ড হবে ভিন্ন দুই দলকে পরপর দুই মৌসুমে ট্রফি জেতানোর। শ্রেয়াস হয়তো পারবেন, হয়তো চ্যাম্পিয়ন ক্যাপ্টেন হয়েই মাঠ ছাড়বেন। ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে হয়তো ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে ভেসে আসবে—‘ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট।’