লম্বা সময় পর বিজয়ের ব্যাটে রান

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের সপ্তম রাউন্ডের প্রথম তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব, শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। দিনের প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই রান উৎসব হয়েছে। রান উৎসবের তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ছয় জন ব্যাটসম্যান।

হাফসেঞ্চুরি করেছেন রনি তালুকদার, এনামুল হক বিজয়, তানজিদ হাসান, রাকিবুল হাসান ইমরানউজ্জামান ও জিয়াউর রহমান। এছাড়া ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছেন তানভির হায়দার। আর মাত্র ১৯ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন শামীম পাটওয়ারী। বল হাতে অনবদ্য ছিলেন নাহিদুল ইসলাম।

এনামুল হক বিজয় ও রনি তালুকদারের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ১০১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম বারের মত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছে প্রাইম ব্যাংক। তবে দল জিতলেও আজও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

তামিমের ব্যর্থতার দিনে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন রনি তালুকদার। আর সেখান থেকে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত দলকে টানেন এনামুল হক বিজয়। কখনো ঝড় তুলে, আবার কখনো রানের জন্য সংগ্রাম করে এবারের আসরে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে দলকে ১৬৯ রানের বড় পুঁজি এনে দেন প্রাইম ব্যাংকের অধিনায়ক। শুধু এই আসরে না, লম্বা সময় পর বড় ইনিংস খেললেন বিজয়। ৪৯ বলে ৬৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

প্রাইম ব্যাংকের দেওয়া ১৭০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই নাহিদুল ইসলামের তোপের মুখে পড়ে রূপগঞ্জ। ইনিংসের প্রথম ওভারে নাহিদুলের বলে ১২ রান করে আজমির বোল্ড হয়ে যাওয়ার পরের ওভারেই রুবেল হোসেনের প্রথম শিকারে পরিণত হন রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান সাব্বির রহমান।

১৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর নাহিদুলের জোড়া আঘাতে পিনাক ঘোষ ও নাঈম ইসলাম ফিরে গেলে চাপে পড়ে রূপগঞ্জ। এরপর দ্রুত সোহাগ গাজী, সানজামুল ইসলাম ও জাকির আলী আউট হয়ে গেলে ৪৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে রূপগঞ্জ। শেষ পর্যন্ত আর ঘুড়ে দাঁড়াতে না পেরে মাত্র ৬৮ রানে অলআউট হয়ে যায় রূপগঞ্জ।

প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন নাহিদুল ইসলাম। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন এই স্পিনার। এছাড়া দুটি করে উইকেট শিকার করেন রুবেল হোসেন ও নাঈম ইসলাম।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। দলীয় ৩৫ রানে নাবিল সামাদের বলে বোল্ড হয়ে যান তামিম ইকবাল। ২০ বলে ১২ রান করে তামিম ফিরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে দলের হাল ধরেন এনামুল হক বিজয় ও রনি তালুকদার। ৬৭ রান যোগ করেন দুজন।

এবারের আসরের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৩১ বলে ৫৩ রান করে রনি ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। এরপর দ্রুত রান তুলতে গিয়ে মোহাম্মদ মিথুন ১৩ বলে ১৮ রান করে বিদায় নিলেও শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে দলকে ১৬৯ রানের বড় পুঁজি এনে দেন এনামুল হক। ৪৬ বলে ৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
রূপগঞ্জের পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন মুক্তার আলী।

দিনের আরেক ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ১৬৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৭২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও ষষ্ঠ উইকেটে জিয়াউর রহমান ও তানভির হায়দারের ৮৪ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে শেখ জামাল।

৩৩ বলে ৫৩ রান করে জিয়াউর আউট হয়ে গেলেও জয় পেতে সমস্য হয়নি শেখ জামালের। ৩৪ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন তানভির হায়দার। প্রাইম দোলেশ্বর পক্ষে চারটি উইকেট শিকার করেছেন কামরুল ইসলাম রাব্বি এছাড়া দুটি উইকেট পেয়েছেন এনামুল হক।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান সংগ্রহ করে প্রাইম দোলেশ্বর। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন ইমরানউজ্জামান। এছাড়া শেষের দিকে ১৯ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন শামীম পাটওয়ারী। শেখ জামালের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন জিয়াউর রহমান এবং ইলিয়াস সানি।

বিকেএসপিতে দিনের আরেক ম্যাচে ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাবকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। ১২০ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তানজিদ হাসানের ৫৯ বলে ৭৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে সহজেই জয়ের লক্ষ্য পৌছে যায় শাইনপুকুর। এছাড়া ২৮ রান করেন তৌহিদ হৃদয়। ডিওএইচএসের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন আসাদুজ্জামান পায়েল।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রান সংগ্রহ করে ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ বলে ৫৭ রান করে অপরাজিত থাকেন রাকিবুল হাসান। ১৯ বলে ২১ রান আসে মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাট থেকে। শাইনপুকুরের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন সুমন খান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

  • প্রাইম ব্যাংক-রূপগঞ্জ

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ১৬৯/৫ (ওভার: ২০; তামিম- ১২, রনি- ৫৩, এনামুল- ৬৯) (মুক্তার- ৪-০-২৮-৩)

লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৬৮/১০ (ওভার: ১৮; আজমির- ১২, জাকির- ১৬) (নাহিদুল- ৪-০-১৫-৩, নাঈম- ৪-০-১৩-২, রুবেল- ৪-১-১৭-২)

ফলাফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১০১ রানে জয়ী।

  • প্রাইম দোলেশ্বর-শেখ জামাল

প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব: ১৬৬/৬ (ওভার: ২০; ইমরান- ৬৬, সাইফ- ২২, শামিম- ৪৯*) (সানি- ৪-০-২৫-২, জিয়াউর- ৪-০-২৭-২)

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ১৬৭/৭ (ওভার: ১৯.৫; সৈকত- ১৫, নাসির- ১৪, সোহান- ১৭, তানভির- ৪৫*, জিয়াউর- ৫৩) (কামরুল- ৪-০-২৪-৪, এনামুল- ৪-০-৩২-২)

ফলাফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৩ উইকেটে জয়ী।

  • ওল্ড ডিওএইচএস-শাইনপুকুর

ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব: ১১৯/৬ (ওভার: ২০; ইমন- ৯, মাহমুদুল- ২১, রাকিবুল- ৫৭*) (সুমন- ৪-০-২৪-২)

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ১২০/৩ (ওভার: ১৯.১; তানজিদ- ৭৯*, তৌহিদ- ২৮) (পায়েল- ৪-০-১৮-২)

ফলাফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link