আশাজাগানিয়া আক্ষেপ কিংবা গরিবের শেবাগ

একদম অল্প বয়সেই পায়ে প্যাড জড়িয়ে ব্যাট হাতে খেলছেন। হাফ প্যান্ট, ময়লা জার্সি গায়ে। স্বপ্ন ক্রিকেটার হবেন। ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন তো অনেকেরই থাকে। তবে বয়সের সাথে সাথে এই স্বপ্নটা যেন কোথায় হারিয়ে যায়।

বিভিন্ন কারণেই ক্রিকেটার হবার স্বপ্নটা বিসর্জন দিতে হয়। ১০ বছর বয়সেই বড় মাপের ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন জিম্বাবুয়ের স্টুয়ার্ট মাৎসিকেনেরি। দারিদ্রতা আর কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়াইয়ে তিনি জয় পেয়েছিলেন। কঠোর পরিশ্রমে স্বপ্ন পূরণ করে বনে যান ক্রিকেটারও। মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য কখনও আফ্রিকার বীরেন্দ্র শেবাগও বলা হত তাঁকে।

অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়ে অন্ধকারে ছেয়ে যায় মাৎসিকেনেরির ভবিষ্যৎ। স্কুলের বেতন দেওয়ার মতন সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। সে সময় নিজ এলাকায় ক্রিকেট খেলতে তিনি। অল্প বয়সেই বয়স ভিত্তিক দলগুলোতে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর ক্রিকেট খেলা যেন বন্ধ হবার উপক্রম। অল্প বেতনের এক স্কুলে ভর্তি হলেন। ছেলের স্বপ্ন পূরণে মা অবশ্য পিছপা হননি। ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘তুমি ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে সেখানেই নজর দাও। এখান থেকে তুমি বড় কিছু হতে পারবে।’

ব্যাস, মায়ের সমর্থনে আবার মনোযোগী হলেন ক্রিকেটে। স্কলারশিপ পেয়ে গেলেন। স্কলারশিপে ক্রিকেট খেলতেন সাথে অল্প খরচে পড়াশোনাও চালিয়ে যান। গায়ের গড়নে বেশ ছোটখাটো একজন। খুব যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেন এমন না। স্বভাগতভাবে অনেকটাই রক্ষণাত্মক খেলেন তিনি।

বয়সভিত্তিক দলে খেলাকালীন ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় এক তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন। দৃঢ় ব্যাটিং, বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য, পেশার ক্রিকেটারদের মতন এটিটিউড সবই ছিল মাৎসিকেনেরির মাঝে। অনূর্ধ্ব-১৬ দলে থাকাকালীনই সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।

এক পা, এক পা করে মাৎসিকেনেরি তখন জাতীয় দলের দোরগোড়ায়। সামর্থ্যের সবটা দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিতে অবশ্য খুব বেশি সময় লাগেনি। ২০০২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই তরুণের। ওপেনার হিসেবেই জাতীয় দলে অভিষেক।

এরপর ২০০৩ বিশ্বকাপেও খেলার সুযোগ পেলেন। যদিও এক ম্যাচের বেশি ওই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাননি মাৎসিকেনেরি। পরের বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে ৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে অঘটন ঘটিয়ে জয় এনে দেন জিম্বাবুয়েকে।

ক্যারিয়ারের শুরুতে কোয়ালিটি পেসারদের বিপক্ষে ছিলেন নড়বড়ে। লুজ শটে উইকেট দিয়ে আসতেন হরহামেশা। ২০০৬ সালে বোর্ডের সাথে নতুন চুক্তি সাক্ষর না করায় দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। পরের বছর অবশ্য দলে ফেরেন তিনি। ওই বছরই ওয়ানডেতে ১ হাজার রানের মাইল ফলক স্পর্শ করেন মাৎসিকেনেরি।

২০০৬ সালে ঘরের মাটিতে হারারেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে জয় এনে দিয়েছিলেন মাৎসিকেনেরি। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ওয়ানডেতে অনেকটাই নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এরপর পাড়ি দেন দক্ষিণ আফ্রিকায় লিগ খেলতে এরপর পুনরায় ফিরে এসে জাতীয় দলে খেলার চেষ্টা করলেও আর সুযোগ পাননি তিনি। ২০১৫ সালে এক ম্যাচে সুযোগ পেলেও বাদ পড়েন এরপরই। জাতীয় দলের জার্নিটা এখানেই শেষ হয়ে যায় এই জিম্বাবুইয়ান ব্যাটারের।

২০০৩ সালে সাদা পোশাকে অভিষেক হলেও টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারটা বড় করতে পারেননি মাৎসিকেনেরি। মাত্র ৮ টেস্টেই সীমাবদ্ধ ছিল তাঁর ক্যারিয়ার। দেখা পেয়েছেন মাত্র দুই ফিফটির। টি-টোয়েন্টিতেও ছিলেন অনিয়মিত মুখ। পাওয়ার হিটিং দূর্বলতার কারণে এই ফরম্যাটে সেরাটা দিতে পারেননি তিনি। মাত্র ১০ ম্যাচেই থেমে গেছে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। তবে ওয়ানডেতে খেলেছেন লম্বা সময়। ১১৩ ম্যাচে ২২ গড়ে এই ফরম্যাটে আছে ২২২৪ রান। করেছেন ১৩ ফিফটি।

তরুণ বয়সেই অস্ট্রেলিয়ার ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছিলেন তিনি। আইডল হিসেবে মানতেন সাবেক অজি তারকা ও জনপ্রিয় ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুনকে। টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে মেলে ধরতে না পারলেও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অবস্থান বিচারে ওয়ানডে তাঁর রেকর্ড ভালই বলা যায়। অন্তত দলের বিপর্যয় সামাল দিতে পারতেন তিনি। তবে প্রতিভা কিংবা যে সম্ভাবনা তিনি দেখিয়েছিলেন তার পূর্ণতা পায়নি সেটা নিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link