মাস খানেক আগে আইপিএলের মঞ্চে ছিলেন চরম ব্যর্থ। সাদা পোশাকে ব্যাট হাতে ভুগছিলেন রান খরায়। দলের ব্যর্থতা আর ব্যক্তিগত ব্যর্থতার মিশেলে ছিলেন সমালোচনায়। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, আবার ফিরেছেনও। তবে ব্যাট হাতে বড় ইনিংসের দেখা মিলছিল না।
তাঁর টেকনিক কিংবা মেজাজ কোনোটিই টেস্ট ক্রিকেটের সাথে মানানসই নয় – এমনটাও বলছিলেন ক্রিকেট সমর্থকরা। রঙিন পোশাকে যেমন ব্যাট হাতে আগ্রাসী ভূমিকায় দলের অন্যতম ভরসা, তেমনি টেস্ট ক্রিকেটে দলের জন্য হতাশা বনে যাচ্ছিলেন জনি বেয়ারস্টো।
ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন তো স্রেফ এক ইনিংস। একটা দুর্দান্ত ইনিংস বদলে দিতে পারে সবকিছু। সব সমালোচনা আর ব্যর্থতাকে আড়াল করে দিতে পারে একটা ম্যাচজয়ী ইনিংস। বেয়ারস্টো সেটি করে দেখিয়েছেন, বিধ্বংসী এক ইনিংসে ইংল্যান্ডকে জয় এনে দিয়েছেন টেস্টে। এক ইনিংসে সব সমালোচনা বাক্সবন্দি করে বনে গেছেন জয়ের নায়ক। সব ব্যর্থতাকে আড়াল করে দিয়ে তিনি এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন।
পুরো ট্রেন্ট ব্রিজ জুড়ে করতালির শব্দ, দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন সমর্থকরা। ড্রেসিং রুম থেকে সতীর্থদের উল্লাস। এক ইনিংসে ট্রেন্ট ব্রিজকে যেন নিজের করে নিয়েছেন জনি বেয়ারস্টো।
মাত্র ৭৭ বলে সেঞ্চুরি! টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডেতে বেশ স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু, টেস্ট ক্রিকেটে এমন ব্যাটিং অবিশ্বাস্য – যেখানে শেষ দিনে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে দল। এমনিতেই বেয়ারস্টো আগ্রাসী মেজাজের ব্যাটিং করে থাকেন। মারকাটারি ব্যাটিংটাই তাঁর জন্য স্বভাবসুলভ। কোচ হিসেবে যেখানে ড্রেসিং রুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, সেখানে বিপর্যয়ের মাঝেও সেরা কৌশলটা অবশ্যই – পালটা আক্রমণ।
মাত্র ৭৭ বলে বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরির পথে গড়েছেন রেকর্ডও। বলের ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। তবে অল্পের জন্য ছুঁতে পারেননি আরেকটি রেকর্ড। চতুর্থ ইনিংসের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল সাবেক ইংলিশ তারকা গিলবার্ট জেসপের দখলে।
১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওভালে মাত্র ৭৬ বলে সেঞ্চুরির পথে এই রেকর্ড গড়েন জেসপ। বেয়ারস্টোর সামনে হাতছানি ছিল এই রেকর্ড টপকে যাওয়ার। সেই সাথে হতে পারতেন ইংল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। তবে, মাত্র এক বলের ব্যবধানে সেই রেকর্ডটা নিজের করে নিতে পারেননি তিনি; চতুর্থ ইনিংসে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে আছেন দুইয়ে।
৯২ বলে ৭ ছক্কা ও ১৪ বাউন্ডারিতে ১৩৬ রানের দুর্ধর্ষ এক ইনিংস। প্রায় ১৪৮ স্ট্রাইক রেটে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর তাণ্ডব চালিয়েছেন বেয়ারস্টো। ৯৩ রানে দলের ৪ উইকেট নেই। ব্যাটিং বিপর্যয়ে থাকা দলটার এখান থেকে হারের শঙ্কাও ছিল। তবে, সব শঙ্কাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পালটা আক্রমণ শুরু করেন এই ইংলিশ তারকা। অধিনায়ক স্টোকসের সাথে গড়েন ১২১ বলে ১৭৯ রানের ধ্বংসাত্মক এক জুটি।
অধিনায়ক বেন স্টোকস আর নতুন কোচ হিসেবে দায়িত্বে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ব্যাট হাতে ভয়ংকর এই দুই অধিনায়ক-কোচ জুটির অধীনে টেস্টেও ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দেখা যাবে সেটা সিরিজের আগেই অনুমেয় ছিল। খোদ ম্যাককালাম নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। এবার কোচ হিসেবেও সেই কৌশলই রপ্ত করালেন ইংলিশ ব্যাটারদের।
বেয়াস্টোর জন্য দারুণ একটা ব্যাপার। আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং করতে পছন্দ করেন। স্টোকস-ম্যাককালামের যুগে তিনি যে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
অফ ফর্ম, অধারাবাহিকতা, ব্যাটিং টেকনিক – সব মিলিয়ে সমালোচনার ঘোরে ছিলেন। সেখান থেকে মারকাটারি ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংসে মিডল অর্ডারে দলের জয়ের স্থপতি তিনি।