বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ জৌলুস হারিয়েছে। এমন এক তকমা নিয়েই মাঠে গড়িয়েছিল বিপিএলের নবম আসর। মাস খানেকের মাঠের লড়াই প্রায় শেষের দিকে। তবে সেই জৌলুসহীন তকমা থেকে খানিকটা বেড়িয়ে আসতে পেরেছে বিপিএল সেটা বলতেই হয়। সেদিক থেকে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ধন্যবাদ জানাতেই পারে।
কেননা মানসম্মত বিদেশি খেলোয়াড়দের ভেড়াতে পারবে না অথবা পারেনি বিপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। ঠিক সে কারণেই টুর্নামেন্টের মান নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। মাঠের ক্রিকেটে লড়াইটা হবে নাকি ঠিকঠাক সেটা নিয়েও সন্দিহান ছিলেন বহু ভক্ত। তবে সকল শঙ্কার উত্তর হয়ে যেন হাজির হয়েছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। প্রায় প্রতিটা দলেই পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সরব উপস্থিতি বাড়তি উন্মাদনা ছড়িয়েছে এবারের আসরে।
তবে ঢাকা শেষ পর্ব শুরু হতে না হতেই বেজে গিয়েছে বিদায়ের ঘন্টা। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা এক এক করে ছেড়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ দলের শিবির। সেদিক থেকে এগিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নাসিম শাহ ও খুশদীল শাহ। ইতোমধ্যে তাঁরা বাংলাদেশ ছেড়েছেন। মূলত পাকিস্তান সুপার লিগ শুরু হচ্ছে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে। তাইতো প্রস্থান যাত্রার শুরু পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, গেল বারের চ্যাম্পিয়ন দল। তাদের দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য দল ছেড়েছেন। তবে এখনও দলের সাথে রয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, হাসান আলী ও আবরার আহমেদ। তাঁরা সবাই ৯ তারিখে চূড়ান্তভাবে ছেড়ে যাবেন বিপিএল। যদিও একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে নাসিম ও খুশদীলের ফিরে আসার। তবে তাদের বিকল্প ইতোমধ্যে খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে কুমিল্লার ফ্রাঞ্চাইজি। বেশ বড় বড় নামের গুঞ্জন ভেসে আসছে।
আরেকদিকে, এবারের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানে থাকা সিলেট স্ট্রাইকার্সের বোলিং আক্রমণে দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যই ছিলেন পাকিস্তানের। মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমদের উপরই আস্থা রেখেছিল মাশরাফির দল। তবে তাঁরাও ইতোমধ্যে পাকিস্তানের পৌঁছে গেছেন। এই দুই বোলারের বিকল্প অবশ্য খুঁজে পেয়েছে দলটি। পাকিস্তানের আরেক বাঁ-হাতি পেসার ইরফান খানকে দলে ভিড়িয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্সরা। সেই সাথে আফগান ক্রিকেটার গুলবাদিন নাইবকে দলের নিয়েছে তাঁরা।
একই রকম পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে টেবিলের দুইয়ে থাকা ফরচুন বরিশাল। তাদের দলের পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ ওয়াসিম দল সাত তারিখে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। তবে ইফতেখার আহমেদ থেকে যাচ্ছেন লিগ পর্বে একেবারে শেষ ম্যাচ অবধি। ১০ তারিখে তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা। অন্যদিকে, আফগান ক্রিকেটার রহমানউল্লাহ গুরবাজ আবার দলের সাথে যুক্ত হবেন। ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে সাকিবের দল সে কথা বলে দেওয়াই যায়।
তবে সবচেয়ে বেগতিক পরিস্থিতিতে পড়তে পারে রংপুর রাইডার্স। দলটির মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় আস্থার নাম শোয়েব মালিক। কিন্তু তাঁকেও চলে যেতে হবে। মালিকের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার মাঝপথেই দলের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ। এই তিনজন খেলোয়াড় টিম হোটেল ছাড়বেন ৯ তারিখে। বদলি হিসেবে রংপুর দলে ফিরবেন সিকান্দার রাজা। টুর্নামেন্টের শুরুতে রাইডার্সদের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার।
তাঁর সাথে রংপুর ডেরায় হাজির হবে মুজিব-উর রহমান। আফগান এই স্পিনার বর্তমান বিশ্বের সেরাদের একজন। সুতরাং রংপুরও ঘাটতির জায়গাগুলোতে খুব একটা হোঁচট খাবে না বলে ধরে নেওয়া যায়। কেননা শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা ও রাজাপাকশেও মাঠে নামবেন রংপুরের হয়ে। তেমনটাই শোনা যাচ্ছে।
খুলনা টাইগার্স দল ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে। তাদের দলে থাকা আজম খান ও আমাদ বাটও ইতোমধ্যে দল ছেড়েছেন। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রস্থান নিশ্চয়ই একটা প্রভাব ফেলবে এবারের বিপিএলে। তবে ওই যে ইংরেজি প্রবাদের মত করেই ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’।