ব্রাজিলের বিশ্বকাপ খরার জন্য দেশটির ফুটবল ফেডারেশন নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় আগে সর্বশেষ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছিল ব্রাজিল। জাতীয় দলের জন্য বিদেশি কোচ নয়, বরং দেশী কোচ দিয়েই সফলতা আনতে হবে, ব্রাজিলে অলিখিত এই নিয়মের শেষ পর্যন্ত হয়তোবা অবসান হতে যাচ্ছে।
গত মাসে কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার কাছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেবার পর ছয় বছরের মেয়াদ শেষে তিতেও ব্রাজিলের কোচের পদ ছেড়েছেন। বিশ্বকাপের আগেই অবশ্য তিতে বিদায়ের ঘোষনা দিয়ে রেখেছিলেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) সভাপতি এডনালডো রডরিগুয়েজ এখনো তিতের উত্তরসূরি খুঁজে পাননি। এখন তিনি তার দৃষ্টি আরো প্রসারিত করেছেন।
এ সম্পর্কে ব্রাজিল ফুটবল প্রধান বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে কোন ধরনের জাতিগত কুসংষ্কার নেই। আমরা এমন একজন সমন্বিত কোচ চাই যিনি খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সকে মানসম্মত জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। ব্রাজিল সব সময় যে ধরনের আক্রমনাত্মক খেলা উপহার দিয়েছে সেটাই আমরা করতে চাই।’
শীর্ষ স্থানীয় ফুটবল শক্তিগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া গত এক দশকে কোন দেশই জাতীয় দলের জন্য বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয়নি। ইংল্যান্ড এর মধ্যে সুইডেনের সেভেন গোরান এরিকসেন ও ইতালিয়ান ফ্যাবিও ক্যাপেলোকে নিয়োগ দিয়েছিল।
২০০২ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছিল সেলেসাওরা। ঐ সময়ে দলে রোনাল্ডো, রোনালদিনহো ও রিভালডোর মত বিশ্বমানের স্ট্রাইকাররা ছিলেন। রেকর্ড পঞ্চম বারের বিশ্বকাপের শিরোপা এই তিনজনের হাত ধরেই এসেছিল। ২০০২ শিরোপা জয়ী দলের কোচ লুইজ ফিলিপ স্কলারি সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমাদের অনেক মানসম্পন্ন কোচ রয়েছে। কিন্তু এখনকার তুলনায় অতীতে আমরা আরো বেশী কোচ তৈরী করেছি। নতুন প্রজন্ম যথেষ্ট শিরোপা জিততে পারছে না।’
ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য কোচের নাম প্রকাশ করেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন স্প্যানিশ পেপ গার্দিওলা ও লুইস এনরিকে, ইতালিয়ান কার্লো আনচেলত্তি, ফ্রেঞ্চম্যান জিনেদিন জিদান, পর্তুগালের হোসে মরিনহো ও আর্জেন্টিনার মার্সেলো গালারডো ও মরিসিও পোচেত্তিনো। ম্যানচেস্টার সিটির গার্দিওলা ও রিয়াল মাদ্রিদের আনচেলত্তি সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও গার্দিওলা দুই বছর আগে জানিয়েছিলেন ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন দল ছাড়ার পর জাতীয় দলের নেতৃত্ব নিতে তিনি আগ্রহী।
আগামী মার্চের মধ্যে নতুন কোচ নিয়োগ দেবার ব্যপারে আশাবাদী রডরিগুয়েজ। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘গত বছরের শেষে আমি অন্তত ২৬টি নাম শুনেছি। তাদের মধ্যে থেকেই হয়তো কাউকে বেছে নেব।’
তবে সিবিএফ সভাপতির জন্য বিশ্বমানের কোচ নিয়োগ দেওয়া সহজ হবে না। ইউরোপের ক্লাবগুলোর লোভনীয় বেতন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লিগ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছেড়ে খুব কম কোচই ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে আসতে আগ্রহী হবেন। এ ছাড়া অন্য সমস্যা আছে। বিদেশি কোনো কোচকে ব্রাজিলিয়ানরা মেনে নেবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। গত ডিসেম্বরে এ নিয়ে চালানো জরিপে ৪৮ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান বিদেশি কোচ নিয়োগের বিপক্ষে ভোট দেন। ৪১ শতাংশ এর পক্ষে ভোট দেন। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই জরিপের আগে সর্বশেষ যে জরিপ চালানো হয়েছিল তাতে আরও বেশিসংখ্যক ব্রাজিলিয়ান বিদেশি কোচ নিয়োগের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
এর আগেও অবশ্য ব্রাজিলে বিদেশি কোচ এসেছে। ১৯২৫ সালে উরুগুয়ের রামোন প্লাটেরো, ১৯৪৪ সালে ব্রাজিলিয়ান ফ্লাভিও কস্তার সাথে পর্তুগালের জর্জ হোমেস ডি লিমা ও ১৯৬৫ সালে স্বল্প সময়ের জন্য আর্জেন্টাইন ফিলপো নুনেজ দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্থানীয় কোচ হিসেবেও কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যমে ২০২২ কোপা লিবাটেডরস জয়ী ফ্লামেঙ্গোর কোচ ডোরিভাল জুনিয়র, ফ্লুমিনেন্সের ফার্নান্দো দিনিজ, গ্রেমিরোর রেনাটো পোর্টালুপ্পি ও ইন্টারসিওনালের মানো মেনেজেসের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও তিতের মানের সাথে তুলনা করলে এরা সবাই বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছেন।