অদম্য বিদায়ী আগ্রাসন

এরপরই ছক্কা ও পর পর দুই চার হাঁকিয়ে ৫৩ বলে তখন ৯৬ রানে ম্যাককালাম! হ্যাজেলউডের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে পারলেই এই কিউই তারকার নাম উঠবে অনন্য এক রেকর্ডে! ব্যাপারটা যখন বাউন্ডারি হাঁকানোর, ম্যাককালামের জন্য যেন নিতান্তই সবচেয়ে সহজ কাজ। ৩৬ তম ওভারের শেষ বলে হ্যাজেলউডকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে কভারের উপর দিয়ে বাউন্ডারি! ব্যাস, সাফল্যের ষোলকলা পূর্ণ! ৫৪ বলে সেঞ্চুরি করে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে নাম লেখালেন এই মারকুটে তারকা।

ক্রিকেট ইতিহাসের বিধ্বংসী ব্যাটারদের তালিকা করলে নাম আসবে ব্ল্যাকক্যাপ্স তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককালামের। বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করাই তার একমাত্র লক্ষ্য। প্রতিপক্ষ, বোলার কিংবা কন্ডিশন এসব মোটেও চিন্তায় আনেন না তিনি। বরং তার দোর্দণ্ড দাপটে আতংকে থাকতো বোলাররাই। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই বোলারদের উপর তাণ্ডব চালিয়ে ২২ গজে রাজত্ব করেছেন এই তারকা।

টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট যাই হোক না কেনো তাঁর লক্ষ্য শুধু বাউন্ডারি। তিন ফরম্যাটেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন সমান ভাবে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টও ব্যতিক্রম ছিল না। ২০১৬ সালে নিজের বিদায়ী ম্যাচে ক্রাইস্টচার্চে সাদা পোশাকে তাণ্ডব চালিয়ে গড়ে গেছেন অনন্য এক রেকর্ড!

৫৪ বলে সেঞ্চুরি করে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ম্যাককালাম বিদায় জানিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে দাপটের সাথে খেলা ম্যাককালাম বিদায়ী ম্যাচেও তাঁর আগ্রাসী রুপের সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া।

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের শেষ টেস্টে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ তা আগেই জানিয়েছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। বিদায়ী ম্যাচে প্রিয় খেলোয়াড়কে বিদায় দিতে তাই ক্রাইস্টচার্চে ছিল সমর্থকদের ঢল।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে নিউজিল্যান্ড! এমন হতাশাজনক অবস্থার পরেও হঠাৎ দর্শকদের মাঝে ভিন্ন উত্তেজনা। পুরো ক্রাইস্টচার্চ যেন হঠাৎ জেগে উঠেছে। কারণ ব্যাট হাতে তখন মাঠে প্রবেশ করছিলেন ম্যাককালাম। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পেলেন ‘গার্ড অব অনার’। পুরো স্টেডিয়াম তখন দর্শকদের করতালিতে মুখরিত।

বিদায়ী ম্যাচেও যে স্বভাবসুলভ আগ্রাসী রূপে ব্যাট করবেন সেটা জানান দিয়েছিলেন নিজের দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। এরপর বাকিটা সময় অজি বোলারদের উপর তাণ্ডব চালিয়েছেন এই তারকা। মাঝে কেন উইলিয়ামসন দ্রুত ফিরলে ৭২ রানেই ৪ উইকেট হারায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। টপ অর্ডারে ল্যাথাম, উইলিয়ামসনদের থামাতে পারলেও অজি বোলাররা থামাতে পারেনি ম্যাককালামকে। ম্যাককালাম ঝড়ে ক্রাইস্টচার্চে তখন বাউন্ডারি বৃষ্টিতে চাপের মুখে তখন অজি বোলাররা!

কোরি অ্যান্ডারসনকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে অজি বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে মারকাটারি ব্যাটিং করেন ম্যাককালাম। মাত্র ৩৪ বলেই তুলে নেন ফিফটি! এরপর আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠেন এই ব্ল্যাকক্যাপস তারকা। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে তখন ৪৮ বলে তখন ৮২ রানে অপরাজিত তিনি। টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়তে দরকার ৭ বলে ১৮ রান! কমেন্ট্রি বক্সেও আলোচনা তখন এই রেকর্ড নিয়েই। দর্শকদের মাঝেও একটা চাপা উত্তেজনা।

৩৬ তম ওভারে বল করতে আসলেন জশ হ্যাজেলউড। প্রথম দুই বল ডট দেওয়ার পর ম্যাককালামের সামনে রেকর্ড গড়ার সমীকরণ তখন ৫ বলে ১৮ রানের! হাত ছোঁয়া দূরত্বে থেকেও রেকর্ড ছুঁতে পারবেন না ম্যাককালাম?

এরপরই ছক্কা ও পর পর দুই চার হাঁকিয়ে ৫৩ বলে তখন ৯৬ রানে ম্যাককালাম! হ্যাজেলউডের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে পারলেই এই কিউই তারকার নাম উঠবে অনন্য এক রেকর্ডে! ব্যাপারটা যখন বাউন্ডারি হাঁকানোর, ম্যাককালামের জন্য যেন নিতান্তই সবচেয়ে সহজ কাজ। ৩৬ তম ওভারের শেষ বলে হ্যাজেলউডকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে কভারের উপর দিয়ে বাউন্ডারি! ব্যাস, সাফল্যের ষোলকলা পূর্ণ! ৫৪ বলে সেঞ্চুরি করে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে নাম লেখালেন এই মারকুটে তারকা।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরির দিনে অনন্য এক রেকর্ড গড়েন এই ব্ল্যাকক্যাপস তারকা। এর আগে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করে এই রেকর্ডে যৌথভাবে ছিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি তারকা ভিভ রিচার্ডস ও পাকিস্তানের মিসবাহ উল হক। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রিচার্ড ও ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েছিলেন মিসবাহ।

সেঞ্চুরি করেই ক্ষান্ত হননি ম্যাককালাম। ৭৯ বলে ৬ ছক্কা ও ২১ চারে খেলেন ১৪৫ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। ম্যাককালামের ১৪৫ ও অ্যান্ডারসন-ওয়াটলিংদের জোড়া ফিফটিতে প্রথম ইনিংসে ৩৭০ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।

জবাবে প্রথম ইনিংসে জো বার্নস ও স্টিভ স্মিথের সেঞ্চুরিতে ৫০৫ রানে গুড়িয়ে যায় অজিরা। ১৩৫ রান পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে উইলিয়ামসনের ৯৭ ও ম্যাট হেনরির ফিফটির পরেও বাকিদের ব্যর্থতায় ৩৩৫ রানে অলআউট হলে অজিদের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২০১ রানের! শেষদিনে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সফরকারীরা।

ম্যাককালামের বিদায়ী সিরিজে অজিদের কাছে ঘরের মাটিতে ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ হয় ব্ল্যাকক্যাপসরা। তবে শেষ টেস্টে ৫৪ বলে সেঞ্চুরির সেই বিধ্বংসী ইনিংসে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বিদায়ী ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন ম্যাককালাম। যে দাপট দেখিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, সেই দাপটেই রেকর্ড গড়ে মাথা উঁচু্ করে বিদায় নিয়েছেন ২২ গজ থেকে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...