বুমরাহ = ম্যালকম+ম্যাকগ্রা

যদি ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন, তবে একদিন তিনিই হয়তো হয়ে উঠবেন বিশ্বের সবচেয়ে সম্পূর্ণ ফাস্ট বোলারদের একজন। সেটাই প্রমাণ করেছেন বুমরাহ।

জাসপ্রিত বুমরাহ একজনই। ২০১৮ সালে অভিষেকের পর মাত্র ৪৯ টেস্টেই ২২২ উইকেট তুলে নিয়েছেন বুমরাহ, গড় মাত্র ১৯.৮৯ এবং স্ট্রাইক রেট ৪২.৮। পরিসংখ্যান বলছে, এই পর্যায়ে এসে বুমরাহ খোদ কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা ও ম্যালকম মার্শালের চেয়েও এগিয়ে।

টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ২০০ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া ৮৭ জন বোলারের মধ্যে গড় ২০-এর নিচে কেবল একজন—জসপ্রিত বুমরাহ। টেস্টে গড় ২৫-এর নিচে থাকলেই বোলারকে ‘এলিট’ ধরা হয়, আর ২০-এর নিচে মানে তিনি অবিসংবাদিত সেরাদের একজন। এভাবেই আধুনিক ক্রিকেটে বুমরাহ নিজেকে এক অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়েছেন।

ম্যালকম মার্শাল যেমন স্যুইং করাতে পারতেন দু’দিকেই, তেমনই বুমরাহ সিম হিট করা ও রিভার্স সুইং দুটোতেই সমান দক্ষ। দুজনেই দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে বোলিংয়ের ধরন বদলাতে পারেন। মার্শাল ছিলেন অপারেশন থিয়েটারে সার্জনের মতো নিখুঁত—এক জায়গায় ছয় বল ফেলতে পারতেন নির্ভুলভাবে।

অন্যদিকে বুমরাহ আধুনিক যুগের নির্ভুলতার প্রতীক। তাঁর ইয়র্কার, হঠাৎ বাউন্সার কিংবা ‘ওবল সিম’—সব কিছুই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মেনে করা।

মার্শাল মাত্র ৫’১১” উচ্চতার হলেও ভয়ঙ্কর বাউন্স তুলতেন নিখুঁত অ্যাকশন ও কাঁধের শক্তিতে। বুমরাহও নিজের অদ্ভুত রিলিজ ও ছোট রান-আপ দিয়েই তৈরি করেছেন গতি ও সঠিকতা—যেন ফাস্ট বোলিংয়ের নতুন সংজ্ঞা।

‘পিজিয়ন’ খ্যাত ম্যাকগ্রা ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের পেসার। গতির বদলে তিনি ভরসা রাখতেন নির্ভুল লাইন-লেংথে। অফস্টাম্পের বাইরে ‘করিডর অব আনসারটেনটি’ অঞ্চলে বল রেখে ব্যাটসম্যানকে ভুল করানোই ছিল তাঁর অস্ত্র।

৬’৫” উচ্চতার কারণে বাউন্স তুলতে পারতেন সহজেই। ধৈর্য ধরে ওভার ধরে চাপ তৈরি করে, তারপর মারাত্মক এক বলেই উইকেট তুলতেন।

ম্যাকগ্রা ও মার্শাল ছিলেন এমন এক যুগের নায়ক, যখন টেস্ট ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের প্রাধান্য ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ, উইকেটের ধরণ ছিল পেস সহায়ক। কিন্তু বুমরাহ খেলছেন একদম ভিন্ন সময়ে—যেখানে ব্যাটসম্যানরা আরও আক্রমণাত্মক, পিচ ফ্ল্যাট, আর বাউন্ডারি ছোট।

এই বাস্তবতায় থেকেও তাঁর গড়, স্ট্রাইক রেট ও ধারাবাহিকতা অবিশ্বাস্য। জসপ্রিত বুমরাহ যেন দুই কিংবদন্তির সংমিশ্রণ—
ম্যাকগ্রার মতো শৃঙ্খলিত, আবার মার্শালের মতো বিধ্বংসী।

আধুনিক যুগেও নিখুঁত পরিকল্পনা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহস থাকলে ফাস্ট বোলাররাও ইতিহাস লিখতে জানেন। যদি ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন, তবে একদিন তিনিই হয়তো হয়ে উঠবেন বিশ্বের সবচেয়ে সম্পূর্ণ ফাস্ট বোলারদের একজন। সেটাই প্রমাণ করেছেন বুমরাহ।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link