যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশ, ক্রিকেট অবকাঠামো বলতে তেমন কিছু নেই, নেই মানসম্পন্ন ঘরোয়া লিগ – এত না থাকার মাঝেও আছে ক্রিকেটের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা। তাই তো শরণার্থী শিবিরে থেকেই ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন আফগানিস্তানের ছেলেরা; অনেক প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ক্রিকেট মানচিত্রে একটি সম্ভাবনাময়ী শক্তি হয়ে উঠেছে তাঁরা।
আসলেই সম্ভাবনাময়ী আফগানিস্তান দল, এশিয়া কাপের প্রায় প্রতিটা দলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে তাঁরা। সব ফরম্যাট মিলিয়ে একবার হলেও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে আফগানিস্তান। এবারের এশিয়া কাপেও তাই কাগজে কলমে এগিয়ে থাকা দলগুলোকে হারিয়ে দেয়া অসম্ভব নয় রশিদ খানদের জন্য।
তবে এই সম্ভাবনাময়ী ট্যাগ অনেকদিন ধরেই বয়ে বেড়াচ্ছে আফগানিস্তান; সে হিসেবে ছাপ রাখতে পারেনি খুব বেশি। বিশেষ করে বড় মঞ্চে প্রত্যাশার চাপ নিতে পারেনি দলটি। ২০১৯ বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি; এমনকি প্রিয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিশ্বকাপেও গত দুই আসরে তেমন কিছু করতে পারেনি।
এবার কি তবে অন্য গল্প লিখতে পারবে মুজিব, নবীরা? স্কোয়াডের দিকে তাকালে অবশ্য সেই আশা করতেই পারে ভক্ত-সমর্থকেরা।
রহমানউল্লাহ গুরবাজের মত বিধ্বংসী ওপেনার আছেন আফগানিস্তানের লাইনআপে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫১ রানের ইনিংস তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়। আর বোলিংয়ে রশিদ খান, মুজিবুর রহমান তো রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন প্রতিনিয়ত। এরা তিনজনই ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে গ্লোবাল স্টার; ওয়ানডেতেও প্রতিপক্ষের ভিত কাঁপিয়ে দিতে জানেন।
এছাড়া আছেন মোহাম্মদ নবি, হাসমতউল্লাহ শহিদীর মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। তাঁদের সঙ্গে একসারিতে লড়বেন ফজলহক ফারুকী, ইব্রাহিম জাদরানের মত প্রতিভাবান তরুণেরা। ফলে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে দারুণ এক দল নিয়েই এশিয়ান মঞ্চে নামতে যাচ্ছে আফগানিস্তান।
তবে, এসব ছাপিয়ে আফগানিস্তানের ভয়ের কারণ চাপ নিতে না পারা। গেমপ্লেনে হুটহাট বদল আনতে গেলেই যেন রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করে ক্রিকেটারদের উপর। তাই তো একবার মোমেন্টাম হারালে সহজে ম্যাচে ফিরতে পারে না তাঁরা। আবার শেষদিকে স্নায়ু ধরে রাখাতেও একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে আফগানরা।
অতীত পরিসংখ্যানও মানসিকভাবে পিছিয়ে দিবে ক্রিকেটের এই নব্যশক্তিকে। এশিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বারবারই শেষ মুহুর্তে হৃদয় ভেঙেছে দলটির। ২০২২ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হাতের মুঠোয় পেয়েও হারাতে পারেনি তাঁরা, ২০১৮ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল; সেই আসরে বাংলাদেশের কাছেও সুপার ফোরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিন রানে হারতে হয়েছিল।
আবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও ভারত, পাকিস্তান দুই দলকেই হারানোর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল আফগানিস্তান, কিন্তু শেষমেশ ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়েই। এবার অন্তত তেমন কিছু চাইবে না; শিরোপা না আসুক, তবু স্মরণীয় কিছু করতে বদ্ধ পরিকর রশিদ, মুজিবরা।