লেগস্পিন হাহাকার ঘুচাবেন ওয়াসি সিদ্দিকী!

লেগস্পিনারের জন্য বাংলাদেশের হাহাকার বহুকাল আগে থেকেই। গত এক দশকে বিশ্ব ক্রিকেটে কব্জি ঘোরানো স্পিনারদের দাপট বেড়েছে সমানুপাতিক হারে। কিন্তু সেই স্রোতে বাংলাদেশ থেকে উঠে আসেনি মানসম্মত কোনো লেগি। তবে এবার সেই শূন্যতা ঘোচানোর দিকেই ছুটছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের লেগস্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকী।

শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরিয়ে এখন সেমিতে টাইগার যুবারা। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ম্যাচের নায়ক বনে গিয়েছেন আশিকুর রহমান শিবলী। তবে প্রথমে শ্রীলঙ্কাকে ২০০-এর মধ্যে আটকে দেওয়ার মূলে ছিল ওয়াসি সিদ্দিকের স্পিন। তাঁর স্পিনঘূর্ণিতে লঙ্কান মিডল অর্ডার রীতিমত গুঁড়িয়ে যায়।

আর মাঝের ওভারে সেই ধাক্কা পরে কাটিয়ে উঠতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ১৯৯ রানেই তাই থেমে যায় তাদের ইনিংস। দলের হয়ে হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ওয়াসি সিদ্দিকী। দেশের ক্রিকেটে এখনও তেমন পরিচিত নন ওয়াসি। স্বীকৃত পর্যায়ের ক্রিকেটেও এখনও অভিষেক হয়নি তাঁর।

তবে একদম অচেনাও নন। অবশ্য সামান্য যে পরিচিত এসেছিল তা সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপের বদৌলতেই হয়েছিল। ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে বিশেষ একজন নেট বোলার ছিলেন আগে থেকেই।কেরালার বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার জিয়াস কারাপ্পা নেটে বোলিং করেছেন প্রস্তুতির সময় থেকেই। তবে বিশ্বকাপ শুরুর কিছুদিন পরই তাঁর সঙ্গী হন আরেক লেগি। তিনি ওয়াসি সিদ্দিক।

মূলত নেটে লেগ স্পিন খেলার অনুশীলনের জন্যই দেশ থেকে উড়িয়ে আনা হয়ে তরুণ এ লেগস্পিনারকে। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। গত এপ্রিল-মে মাসে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এক ইনিংসে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এছাড়া গত মার্চ থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ওয়ানডে খেলছেন তিনি। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭ টি যুব ওয়ানডে ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১১ টি।

এমনিতে ওয়াসির লেগস্পিনে চোখে পড়ার মতো তেমন টার্ন নেই। বেশ জোরের ওপর বোলিং করেন তিনি। গতিই মূলত তাঁর বোলিংয়ের মূল শক্তির জায়গা।বোলিং রান আপে ছুটে যান দ্রুতগতিতে। বলে ফ্লাইট দিতে জানেন। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, ফ্ল্যাট পিচেও সে দারুণ বল করতে সক্ষম। গুগলিতে এখনও সেভাবে পটু হয়ে ওঠেননি। তবে গুগলি ডেলিভারিতে নিয়ন্ত্রণ আছে তাঁর।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, যুব এশিয়া কাপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টিম ম্যানেজমেন্ট খুব সম্ভবত নিজেরাই এ স্পিনারের প্রতি আস্থাশীল না। প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে ছিলেন না। সেমি আগেই নিশ্চিত হওয়ায় লঙ্কানদের বিপক্ষে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয় ওয়াসিকে।

এমনিতে লেগিরা বাংলাদেশ ক্রিকেটে তেমন একটা সুযোগ পান না। তবে এই সীমিত সুযোগেই যেন নিজেকে আলাদা করে চেনাচ্ছেন ওয়াসি। শ্রীলঙ্কার ইনিংস যেভাবে এগোচ্ছিল, তাতে বড় রান হতেই পারতো। কিন্তু সেই সংগ্রহের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ওয়াসি। তাঁর ৩ উইকেটেই নড়বড়ে হয়ে লঙ্কানদের ইনিংস।

বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে দলের সঙ্গে থেকেছেন ওয়াসি। দেশের শীর্ষ ব্যাটারদের বিপক্ষেও তিনি বল করেছেন। এমন সব অভিজ্ঞতায় তাঁকে আরো পরিণত করেছে নিশ্চিতভাবেই। সামনে কতটা সুযোগ পাবেন, কিংবা নিজেকে কতটা মেলে ধরবেন, তা সময়ই বলে দিবে। তবে ওয়াসির চোখেমুখে যে ছাপ দেখা গেছে, তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আগামীর গল্পে তাঁকে খুঁজে নেওয়াই যায়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link