কানাডা ভুগিয়েছে বেলজিয়ামকে

দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বকাপ খেলতে এসে একটা ছাপ ফেলে যাওয়ার তাড়না। অপরদিকে নিজেদের স্বর্ণালী যুগের মুকুটে পালক যুক্ত করবার আপ্রাণ প্রয়াসের নতুন এক হাতছানি। এই দুই সম্ভাবনা নিয়েই দিনের শেষ ম্যাচে এফ গ্রুপ থেকে মুখোমুখি হয় বেলজিয়াম ও কানাডা। আলাদা আলাদা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই মাঠে নামে এই দুই দল।

বেলজিয়ামের অভিজ্ঞ লাইনআপের বিপক্ষে, একেবারে আনকোড়া একটা দল। ৩৬ বছর আগে কানাডা খেলেছিল নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ। এরপর আর বিশ্বকাপে সুযোগই পায়নি দলটি। এবার তো বাছাই পর্বে টেবিলের শীর্ষস্থানে থেকেই কাতার বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে কানাডা। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শুরু থেকেই যেন ভিন্নতার দেখা মেলে।

একটিবারের জন্যে যেন মনে হয়নি, দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে আসার চাপে রয়েছে কানাডা। বরং তাঁরা নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণের চেষ্টা করে গেছে। লড়াইটা করেছে প্রায় সমানে সমান। তবে অভিজ্ঞতার অভাবটুকু খানিকটা টের পাওয়া যাচ্ছিল কানাডার মাঠের খেলায়। অপরদিকে খানিকটা ছন্নছাড়া বেলজিয়াম। দলের আস্থাভাজন স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুকে ছাড়াই খেলতে নামে রেড ডেভিলরা। খানিকটা ব্যাকফুটে থেকে করা শুরুর দিকে আরও একবার ব্যাকফুটে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছিল বেলজিয়াম।

বেলজিয়ামের মধ্যমাঠের খেলোয়াড় ইয়ানিক কারাস্কোর হ্যান্ডবল কানাডাকে সুযোগ তৈরি করে দেয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে কানাডার হয়ে ইতিহাস রচনার সুযোগটি দেওয়া হয় আলফান্সো ডেভিসকে। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটলে সেরা গোলরক্ষকের পুরষ্কার জেতা থিবো কোর্তোয়া যেন সেই বিশ্বকাপের পর আর নিজের ফর্মকে হাতছাড়া করেননি। তাঁর সামনে দাড়িয়ে পেনাল্টি শ্যুট নেওয়া আর চাট্টিখানি কথা নয়। ডেভিসকে ইতিহাস লিখতে দিলেন না কোর্তোয়া।

ডানপাশে ঝাপিয়ে পড়ে দলকে পিছিয়ে পড়া থেকে বাঁচান, বেলজিয়ামের দেয়াল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের ম্যাচটি চলতে থাকে। প্রথমার্ধে গোল হবার সম্ভাবনা যখনই ক্ষীণ হতে শুরু  করে তখনই কানাডার জালে জড়িয়ে যায় বল। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে মিশি বাৎসুয়েইয়ের দারুণ শট ঠেকাবার কোন পন্থা হয়ত জানা ছিল না, কানাডার গোলরক্ষক মিলান বোর্হানের কাছে। অগ্যতা ১-০ গোলের ব্যবধান নিয়েই দুই দল টানেলে যায়।

বিরতি থেকে ফিরেই কানাডা চাপে ফেলে দেয় বেলজিয়ামের রক্ষণকে। ক্রমাগত আক্রমণ করে যেতে থাকে কানাডা। তবে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখাটাই যেন মিলছিল না। একের পর এক শট চালিয়েও তা প্রতিহত হচ্ছিল কিংবা হচ্ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। ভয়ডরহীন ফুটবল খেলে কানাডা রীতিমত ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বেলজিয়ামের মনে। এমনিতেই এই বিশ্বকাপটাই হয়ে উঠেছে জায়েন্ট কিলারের এক মহামঞ্চ। তবে বেলজিয়ামের আস্থা হয়ে বারে বারে সামনে এসেছেন কোর্তোয়া।

৩৬ বছর আগের বিশ্বকাপে কানাডা গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ মিলিয়ে নিয়েছিল ২৮টি শট। তবে সময়ের ব্যবধানে কানাডা এখন বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ। র‍্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় পজিশনে থাকা বেলজিয়ামকে বেশ ভুগিয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশটি। তবে শেষমেশ অভিজ্ঞতার এক গোলের ব্যবধানেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বেলজিয়াম।

তবে বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্টিনেজকে তাঁর দলকে নিয়ে আবারও নতুন করে চিন্তা করতেই হবে। অন্যদিকে কানাডার হারাবার কিছুই নেই এবারের বিশ্বকাপে। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে গোলের খাতাটা এই আসরে নিশ্চয়ই পূরণ করতে চাইবেন কানাডীয়ান ফুটবলাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link