মজার এক ঘটেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে। না, পুরুষদের বিশ্বকাপে নয়। ঘটনাটি ঘটেছে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে। মূল ঘটনায় যাবার আগে চলুন একটা কাল্পনিক দৃশ্যপট আঁকার একটা প্রচেষ্টা করা যাক। ইদের দ্বিতীয় দিন গ্রামের বিবাহিত ও অবিবাহিতদের মধ্যকার এক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সেই সকাল বেলা থেকেই চলছে আয়োজন।
ম্যাচ তো একটি উপলক্ষ্য মাত্র। আসলে তো ম্যাচটি এক মিলনমেলার কেন্দ্রবিন্দু। গ্রামের সকলকে এক করার এক প্রচেষ্টা। তো যথারীতি বিকেল নাগাদ ম্যাচ শুরু হলো। বিবাহিত দল ব্যাটিং-এ টসে হেরে। অবিবাহিতদের সেরা বোলার বোলিং প্রান্তে, অপরদিকে প্রতিপক্ষেরও সেরা ব্যাটার ব্যাটিং প্রান্তে। প্রথম বলেই টাইমিং মিস হয়ে বল উঠলো আকাশে। সেই বল লুফে নিতে দৌড়ে গেলেন বোলার সহ আরো ক’জন ফিল্ডার।
কিন্তু সবচেয়ে সহজ ক্যাচটা মিস করে ফেললো। এতে যতটা না দোষ ফিল্ডারদের তাঁর থেকেও বেশি দোষ ব্যাটারের। তিনি রীতিমত ফিল্ডারদের মাঝে এসে তৈরি করলেন প্রতিবন্ধকতা। এতেই ক্যাচ মিস হলো এবং বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে গেলো দুই দল। এমন ঘটনা গ্রাম-বাংলায় অহরহই ঘটছে।
কিন্তু একটাবার ভেবে দেখুন তো পেশাদার ক্রিকেটের মাঠে এমন ঘটনা ঘটতে খুব একটা দেখেছেন কি না? না, আমার মনে হয় না এমন ঘটনা পেশাদার ক্রিকেট অঙ্গনে খুব একটা বেশি ঘটে থাকে। কারণ এমন ঘটনার তাৎক্ষণিক শাস্তিস্বরুপ ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করার এখতিয়ার রয়েছে আম্পায়ারের। ফিল্ডিং-এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি আইসিসির নীতিমালা অনুযায়ী এক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন ঘটনা আইসিসির নীতিমালার ৩৭.৩ নম্বর ধারার পরিপন্থী।
কিন্তু এমন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েও পার পেয়ে গেছেন কানাডার এক নারী ক্রিকেটার। না, কোনো পাড়া-মহল্লা, গ্রাম বা গলির ক্রিকেট নয় – ঘটনাটা রীতিমত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ময়দানে ঘটেছে। মেক্সিকোর রিফর্মা অ্যাথলেটিক ক্লাব মাঠে চলছিলো নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই পর্ব। এইতো সপ্তাহখানেক আগেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন কানাডা নারী দলের ওপেনিং ব্যাটার দিব্যা সাক্সেনা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলতে নামা ওই ম্যাচের প্রথম ওভারেই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান দিব্যা। বোলিং করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পেস বোলার সারা ফারুক। দুর্দান্ত বল করেতে থাকা সারার চতুর্থ বলে ব্যাটিং করতে আসেন দিব্যা একটি সিঙ্গেল রানের সুবাদে। চতুর্থ বল ছুড়ে দিলেন সারা। কিছুটা খাটো লেন্থের বলে ঠিকঠাক টাইমিং করতে ব্যর্থ হন দিব্যা। তাতেই তৈরি হয় ক্যাচের সমূহ সম্ভাবনা।
একেবারে সহজ ক্যাচ। খুব সহজেই ধরে ফেলা সম্ভব। তবুও সারা এবং তাঁর তিন সতীর্থ বল নিজেদের তালুবন্দি করতে ছুটলেন। দিব্য বুঝে গিয়েছিলেন তিনি আউট হতে চলেছেন। সেটা আন্দাজ করে তিনি ক্যাচ নিতে আসা খেলোয়াড়দের মাঝে গিয়ে সৃষ্টি করলেন প্রতিবন্ধকতা। যা এক চূড়ান্ত অখেলোয়াড়সূলভ আচরণ।
যা হবার তাই হলো ক্যাচ মিস হলো। তবে দিব্যার এমন কাণ্ডের থেকেও বড় অবাক করা ঘটনা ঘটিয়েছেন ম্যাচের আম্পায়ার নাইজেল ডুগুইড। ৮১ টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ও পাঁচটি টেস্টে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করা এই ডুগুইড যেন ভুলে গিয়েছিলেন আইসিসির নিয়ম। যেখান ৩৮.৩ নং ধারায় স্পষ্টই বলা আছে কোন ব্যাটার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিপক্ষের ফিল্ডিংরত কোন খেলোয়াড়ের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে সেই ব্যাটার আউট বলে বিবেচ্য হবেন।
সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো এই প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে আম্পায়ার ডুগুইড ছিলেন নিশ্চুপ। খুবই দুঃখজনক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য়ে। এই ঘটানার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলের অলরাউন্ডার জেমি নিশাম তাঁর এক টুইট বার্তায় এ নিয়ে নিন্দা করে তিনি লেখেন, ‘আমি জানি এটা আদর্শ পরিপন্থি এবং অমার্জিত প্রতারণা তবুও এটা যথেষ্ট হাস্যকর একটি ঘটনা।’
তবে সে যাই হোক। কানাডার পক্ষে সেই ঘটনা ফলাফল বয়ে নিয়ে এসেছিল। কানাডার সংগ্রহের ৮৫ রানের মধ্যে ৪০ রানই এসেছিল তাঁদের ওপেনিং ব্যাটার দিব্যা সাক্সেনার ব্যাট থেকে। শেষমেষ এই পুঁজিতে জয় তুলে নিতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি কানাডার নারী ক্রিকেট দলকে।
এমন ঘটনার নজির বিশ্ব ক্রিকেটে খুব একটা দেখা মেলে না। কিন্তু নিকটবর্তী অতিতে এমন কাণ্ড করেছিলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটার ধানুশকা গুনাথিলাকা। তবে তাঁকে আউট ঘোষণা করেছিলেন কর্তব্যরত আম্পায়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই উদাহরণের সৃষ্টি করেছিলেন ধানুশকা।