Social Media

Light
Dark

বিখ্যাত-কুখ্যাত কোচ বিতর্ক!

ক্রিকেটে কোচ হচ্ছেন অভিভাবক। প্রত্যেক খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনাই তাঁর দায়িত্ব। তাই তাঁকে প্রত্যেকের আলাদা পরিচর্যার ব্যাপারে হতে হয় যথেষ্ট যত্নবান। মাঠে ও মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ও আচরণই বলে দেয় দলের কোচ কতটা দক্ষ।

তবে, এই দায়িত্ব পালনের সাফল্য-ব্যর্থতার বাইরেও কোনো কোনো কোচ আলোচিত হন মাঠের বাইরে তাঁদের ঘিরে ঘটা নানা বিতর্কের কারণে। যে খেলোয়াড়দের আস্থার মানুষ হয়ে ওঠা উচিৎ একজন কোচের, সেই মানুষটিই কখনো তাঁদের দুই চোখের বিষ হয়ে ওঠেন। ড্রেসিংরুম ও মাঠের বাইরের এমন কয়েকজন কোচের দেখা মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে।

  • গ্রেগ চ্যাপেল (ভারত)

২০০৫ সালে সৌরভ গাঙ্গুলি, তৎকালীন ভারতীয় কোচের আগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই কিংবদন্তি এই সাবেক অজি ব্যাটসম্যানকে দায়িত্ব দেয় বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। কোচের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে শ্রীলঙ্কায় যাননি সৌরভ। কারণ, তিনি আইসিসির দেওয়া ছয় ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাহুল দ্রাবিড়।

পরের সফর ছিল জিম্বাবুয়েকে। তখনই ভিলেন বনে যান চ্যাপেল। তিনি সৌরভকে বলেন, তাঁর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিৎ যাতে করে ভারতের সেরা একাদশ মাঠে নামাতে সুবিধা হয়। প্রিন্স অব ক্যালকাটা ওই সময় গণমাধ্যমেও বলেন যে, অধিনায়কত্ব ছাড়ার জন্য তাঁর ওপর চাপ আসছে।

শুরু হয় ভারতীয় ক্রিকেট কাঁপানো এক বিতর্কের! চ্যাপেল বিসিসিআইকে একটা মেইল করেন, যেখানে সৌরভকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে অধিনায়কত্বের জন্য আনফিট বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই মেইল মিডিয়াতেও ফাঁস হয়, আগুন জ্বলে ভারতে। এরপর আরো অনেক বিতর্কিত ঘটনা ঘটান চ্যাপেল, যার ফলে ২০০৭ সালেই তাঁর সাথে সম্পর্ক চুকেবুকে যায় ভারতের। তবে, ততদিনে সৌরভ গাঙ্গুলিও ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছেন। চ্যাপেল জমানা না আসলে ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরভ অধ্যায় নি:সন্দেহে আরো বড় হত।

  • চান্দিকা হাতুরুসিংহে (বাংলাদেশ)

লঙ্কান সাবেক ক্রিকেটার, ডেভ হোয়াটমোরের শিষ্য। কাজ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার শেফিল্ড শিল্ড ও বিগ ব্যাশে, এর আগে ছিলেন শ্রীলঙ্কায় টম মুডির ডেপুটি হিসেবে – এমন যার প্রোফাইল তাঁকে নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেটে।

হাতুরুসিংহে এসেছিলেনও জাদুর কাঠি নিয়ে। তাঁর অধীনেই ২০১৫ বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ দল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে, দু’বছর বাদে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলে। দেশের মাটিতে পায় অভাবনীয় সাফল্য। কিন্তু, গোল বাঁধে অন্য জায়গায়।

দল গঠনে হাতুরুসিংহের হস্তক্ষেপ ছিল বিস্তর। কার্যত তিনিই ছিলেন নির্বাচক। মাশরাফির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ করা, মুমিনুলকে টেস্ট থেকে সরানো – এমন সব সিদ্ধান্তে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ হন। সাথে সাথে খেলোয়াড়দের মধ্যেও তাঁর প্রতি তৈরি হয় অনাস্থা।

তবে, শেষটা হাতুরুসিংহে নিজেই করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি নিজের দেশ শ্রীলঙ্কায় নৌকা ভেড়ান। দায়িত্ব নেন সেই দলের, কোচ হিসেবে। তবে, এই যাত্রায় তিনি ব্যর্থতা ও বিতর্ক – দু’টোই পেয়েছেন। মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে ইতি হয় তাঁর লঙ্কা অধ্যায়ের।

  • অনিল কুম্বলে (ভারত)

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিরাট সাফল্য পান।  কিংবদন্তিতুল্য এই লেগ স্পিনার ২০১৬ সালে ভারতের কোচ হন। তাঁর অধীনে ১৭ টি টেস্ট খেলে ১২ টি জিতে ভারত, হারে মাত্র একটিতে। তবে, মাত্র এক বছরের মাথায় তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

কেন পদত্যাগ করেছিলেন? কারণ, বিরাট কোহলি ও শীর্ষ অন্যান্য ক্রিকেটাররা নাকি কুম্বলের অতি-শৃঙ্খলায় খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। ফলে, বিসিসিআইকে ব্যাপারটা অধিনায়কের তরফ থেকে জানানো হয়।

কুম্বলে নিজেও দায়িত্ব ছাড়ার পর বলেছিলেন, ‘আমার কোচিংয়ের ধরণ নিয়ে অধিনায়কের আপত্তি ছিল।’ ভক্ত-সমর্থকরা স্বপ্নেও ভাবেননি এত দ্রুত কোচ হিসেবে ইতি ঘটবে অনিল কুম্বলের। এরপরই ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন করে শুরু হয় রবি শাস্ত্রী যুগের।

  • মিকি আর্থার (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের ‘হোমওয়ার্ক’ দিয়ে বিপাকে পড়েন কোচ মিকি আর্থার। তখন ২০১৩ সাল। ভারত সফরে আসে অস্ট্রেলিয়া দল। প্রথম দুই টেস্টই হারে বাজেভাবে। সেই দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩৪ টিই নেন স্পিনাররা।

দ্বিতীয় টেস্টের পর খেলোয়াড়দের একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেন কোচ মিকি আর্থার। পারফরম্যান্স ভাল করার জন্য কি কি করা যেতে পারে? – এমন কিছু আইডিয়া লিখতে বলেন কোচ। শেন ওয়াটসন, জেমস প্যাটিনসন, উসমান খাজা ও মিশেল জনসন সময়মত ‘হোমওয়ার্ক’ জমা দিতে ব্যর্থ হন। আর এর শাস্তি হিসেবে পরের টেস্টে তাঁরা একাদশ থেকে জায়গা হারান।

এটা ‘ব্যাকফায়ার’ করে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের ইতিহাতে অন্যতম কুখ্যাত বিতর্কের জন্ম দেয়। ফলে, কোচিং মেথড নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দ্রুতই চাকরি হারান মিকি আর্থার। তখন অ্যাশেজ শুরু হতে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link