বিরাট কোহলি, রাজা ফিরলেন রাজার বেশেই

টি টোয়েন্টিতে বিরাট কোহলি নাকি আগের মতো কার্যকরী নন, বড্ড বেশি রক্ষণাত্নক ব্যাটিং করেন। সমালোচকদের এমন অভিযোগ চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে এবারের আইপিএলে যেন ব্যাট হাতেই সমস্ত সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন এই তারকা। 

আইপিএলে কোহলি এবং রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু নাম দুটো যেন একে অন্যের পরিপূরক। দিল্লীর ছেলে কোহলি আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু থেকেই খেলছেন ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে। আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের  রেকর্ড গড়েছেন এই দলটির হয়েই। 

তবে ব্যক্তিগত সাফল্যের চূড়ায় উঠলেও এখনো আইপিএল শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাঁর। তিনবার দলকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও প্রতিবারই পুড়তে হয়েছে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়। তবে ব্যাট হাতে কোহলির রানবন্যা থামেনি, প্রতি মৌসুমেই রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন দলটির হয়ে। 

কিন্তু ২০১৯ মৌসুমের পর থেকেই যেন হুট করে কোথায় হারালেন সেই পুরনো কোহলি। ব্যাটে হয়তো রান পেয়েছেন, কিন্তু সেটা ঠিক কোহলিসুলভ ছিল না। খানিকটা খোলসে ঢুকে গিয়েছিলেন, বড় ইনিংসের দেখা পাচ্ছিলেন না। আগের সেই আগ্রাসী কোহলি যেন তখন সোনালী অতীত। 

সমালোচকরা যেন এই দিনগুলোর অপেক্ষাতেই ছিলেন। একদিকে তরুণ প্রতিভারা উঠে আসছে, অন্যদিকে কোহলির ম্রিয়মান দশা, সবমিলিয়ে কোহলিকে টি টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেবার দাবি উঠতে সময় লাগলো না। ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব ছাড়লেন, জাতীয় দলের নেতৃত্ব থেকে তো একপ্রকার জোর করেই বাদ দেয়া হলো। সবমিলিয়ে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন কোহলির টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের খুব বেশি বাকি নেই। 

তবে কোহলি যেন অন্য ধাতুতে গড়া। ক্রিকেট তাঁর ধ্যানজ্ঞান, ছোটবেলা থেকে লড়াই করেই এই পর্যায়ে আসা। জানেন পরিশ্রমটা চালিয়ে গেলে একদিন সুদিন ফিরবেই। সংবাদমাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করেননি, বরং ক্যারিয়ারের দুই যুগ পেরিয়েও খুঁজেছেন উন্নতির জায়গা। 

এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু করেছিলেন টি টোয়েন্টি ফেরার লড়াই। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিলেন টি টোয়েন্টি ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস। যদিও সেমিতে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল। তবুও পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভারতকে টেনেছেন কোহলি। 

আইপিএলেও ধরে রেখেছেন নিজের ফর্মটা। মৌসুমের শুরু থেকেই আছেন দারুণ ছন্দে, ফাফ ডু প্লেসিকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক উদ্বোধনী জুটি। দলকে দুর্বল মিডল অর্ডারের অভাব বুঝতে না দিতে প্রতি ম্যাচেই এনে দিচ্ছেন উড়ন্ত সূচনা।

মাঝে গৌতম গম্ভীরের সাথে মাঠে তর্কাতর্কি নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছিল বেশ। বাকিরা নানা মন্তব্য করলেও মাঠের বাইরে মুখ খোলেননি কোহলি। সবকিছুর জবাবটা কিনা ব্যাট হাতে দিতেই পছন্দ করেন এই তারকা। 

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জন্য ম্যাচটা স্রেফ নিয়মরক্ষার হলেও ব্যাঙ্গালুরুর জন্য ছিল বাঁচামরার লড়াই। জিতলে উজ্জ্বল হবে শেষচারের স্বপ্ন , হারলে বিদায় একপ্রকার সুনিশ্চিত। সবমিলিয়ে ১৮৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামার আগে মোটেই স্বস্তিতে ছিলেন না এই তারকা। 

তবে ব্যাটিংয়ে নামতেই সমস্ত চাপ যেন এক নিমিষে উড়িয়ে দিলেন কোহলি। ইনিংসের প্রথম বলেই ভুবনেশ্বর কুমারকে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে বুঝিয়ে দেন আজকে দিনটা কেবলই তাঁর। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, কোহলি বন্দনায় মেতেছে গোটা বিশ্ব।

অসাধারণ সব শটে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে, স্টেডিয়াম মুখরিত হয়েছে ‘কোহলি কোহলি’ গর্জনে। আইপিএলে তিন মৌসুম ধরে সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না, সেই আক্ষেপ মেটাতে বেছে নিলেই এই ম্যাচকেই। ১২ চার এবং চার ছক্কায় ৬৩ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে যখন সাজঘরে ফিরছেন ততক্ষণে ম্যাচ পকেটে পুরে নিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু। 

কোহলি ফিরেছেন, কোহলি ফিরেছেন রাজার বেশেই। আরো একবার বুঝিয়ে দিলেন আইপিএলে রান তাড়ায় কোহলিই শেষ কথা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link