গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দল পাননি তিনি। এবারের বিপিএলে ফিরলেন ঢাকা ডমিনেটর্স এর অধিনায়ক হয়ে। তবুও বিপিএল শুরুর আগে কেউ যদি বলতো যে প্লে অফ শুরু আগেও নাসির হোসেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হবেন কিংবা একই সাথে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় নাসির সেরা পাঁচে থাকবেন- তাহলে নিশ্চই সেটা হাস্যরসের খোড়াক হতো। তবে নাসির সেটি করে দেখিয়েছেন।
অধিনায়ক হিসেবে দলকে জয় এনে দিতে না পারলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে নিশ্চই মনে রাখার মত একটি বিপিএল কাটাচ্ছেন ‘দ্য ফিনিশার’। অথচ, ক্রিকেট থেকে প্রায় ‘ফিনিশ’ হয়েই যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে একসময় ‘দ্যা ফিনিশার’ হিসেবে খ্যাত নাসির হোসেন।
ক্রিকেটের চেয়ে ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণেই খবরের শিরোনাম বেশি হয়েছেন তিনি গত কয়েকবছর ধরে। জাতীয় দলের রাডার থেকেও তিনি চলে গেছিলেন বহুদূরে। গতবার বিপিএলে তো কোনো দলই নাসিরের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। এবার ঢাকার ফ্রাঞ্চাইজি আগ্রহ দেখিয়েছিলো।
শুধু আগ্রহই দেখায়নি, অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্বও তুলে দিয়েছিলো তাঁর হাতে। যদিও দল হিসেবে ঢাকা আছে পারফরম্যান্সের তলানিতে। ১১ ম্যাচের মধ্যে ৩ জয় আর ৮ হারে ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে তাদের। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে সবার নজর নতুন করে কাড়তে সক্ষম হয়েছেন নাসির।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক তিনি। প্রথম ম্যাচে থেকে ব্যাট হাতে রান পাচ্ছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত থাকেন ৩৬ রান করে। এরপরের ম্যাচগুলোতেই ফর্ম টেনে আনেন তিনি। ৪৪,৩০,৩৯,৬৬,৫৪-স্কোর গুলোই জানান দেয় নাসিরের দুর্দান্ত ফর্মের। প্রথম ছয় ম্যাচের তিনটিতেই অপরাজিত থেকে ছয় ম্যাচেই তখন নাসিরের রান ২৬৯। টুর্নামেন্টের এক পর্যায়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন তিনি।
কিন্তু এরপরের পাঁচ ম্যাচে কিছুটা ছন্দ হারান নাসির। পরের পাঁচ ম্যাচে করেন মোটে ৭৩ রান। তবে টুর্নামেন্ট জুড়েই নাসির ছিলন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় উপরের দিকেই। ১১ ম্যাচ শেষেও তিনি আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত,সাকিব আল হাসান আর ইফতিখার আহমেদের পরেই।
ব্যাটিং এর পাশাপাশি বল হাতেও দলে নিয়মিত অবদান রাখছেন তিনি। শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ ম্যাচে তো চার উইকেট নিয়ে রংপুরকে প্রায় একাই হারিয়ে দিচ্ছিলেন নাসির। কিন্তু এই চার উইকেট শিকারে ১৬ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এখন এই অলরাউন্ডার।
শুধু তাই নয়, চমকের আরেকটি জায়গা হলো শীর্ষ পাঁচ উইকেট শিকারীর তালিকায় একমাত্র স্পিনার নাসির। ব্যাট আর বল হাতে অলরাউন্ডার নাসির হয়েই যেন বিপিএলে ফিরে এসেছেন তিনি।
ঢাকা ডমিনেটর্স ইতোমধ্যেই বিদায় নিলেও টুর্নামেন্ট সেরা খেতাবের অন্যতম দাবীদার এখন নাসির। জাতীয় দলে ফেরার দাবীটাও একপ্রকার জানিয়ে রাখলেন তিনি। যদিও নাসিরের ইনিংস গুলো দলকে জেতাতে পারেনি বেশিরভাগ ম্যাচেই। অনেক ইনিংসেই নাসিরের ইনিংস দলের কোনো কাজে আসেনি। তাই উইনিং নক নাসির কতটা খেলতে পেরেছেন সেটা একটা বড় প্রশ্নের জায়গা।
কিন্তু এবারের বিপিএলের যে অন্যতম সেরা পারফর্মার নাসির তা নিয়ে সন্দেহ নেই মোটেও। বিপিএলে এমন প্রত্যাবর্তন ঘটবে নাসিরের তা নিশ্চই ভাবেননি কেউ। এই পারফরম্যান্সে হয়তো খুব শিঘ্রই জাতীয় দলে ডাক না পেলেও এমন পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে নিকট ভবিষ্যতেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেখা যেতে পারে নাসিরকে।