দানবীয় ব্যাটিংয়ে ফাইনালে কুমিল্লা

কী অসাধারণ এক ব্যাটিং প্রদর্শন দেখলো পুরো বাংলাদেশ। বিদেশি ব্যাটারদের ব্যাটিং তাণ্ডব যেন ছিলো মনোমুগ্ধকর, দৃষ্টিনন্দন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ইনিংসে দশবার বল গিয়ে আছড়ে পড়েছে সীমানার বাইরে, আর ১৩টি চার। এতেই মাটিতে মিশে যায় তারুণ্য নির্ভর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ফাইনালের আশা। সাত উইকেট এবং ৪৩ বলের এক বিশাল জয় নিয়ে ফাইনালে চলে গেলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে মিরপুর শের-এ বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম অধিনায়ক আফিফ হোসেন। তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিদান দিতে শুরু থেকেই মারমুখি ছিলো চট্টগ্রামের দুই ওপেনিং ব্যাটার উইল জ্যাকস ও জাকির হাসান।

বেশ আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে থাকা উইল দলীয় ৩১ রানের মাথায় আউট হয়ে চলে যান প্যাভিলনে। অন্যদিকে জাকির ধরে খেলার চেষ্টাটা করছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই রানে চট্টগ্রামের আরেক বিদেশি খেলোয়াড় চ্যাডউইক ওয়ালটন ফিরে গেলে বিপাকে পড়ে যায় চট্টগ্রাম।

সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আগেই চট্টগ্রামের সমুদ্রতটে আঘাত হানেন মঈন আলী। পরপর তিনটি উইকেট তুলে নেন এই অলরাউন্ডার। প্রথমে ফেরান জাকির হোসেনকে তারপর অধিনায়ক আফিফ শেষে শামীম হোসেনকে ফেরান শূন্য রানে।

এতেই যেন তাসের ঘরের মতো করে পড়ে যেতে নেয় চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইন আপ। তবে সেটা আর হতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ ও অনূর্ধ্ব১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনাইয়ক আকবর আলী। এই দুই ব্যাটার ৬১ রানের এক কার্যকরী পার্টনারশীপ গড়ে তোলেন নিজেদের মাঝে। হাতখুলে খেলতে থাকা আকবর হাঁকান দুইটি বড় ছক্কা। আর অন্যদিকে মেহেদীর ব্যাট থেকেও এসেছিলো তিনটি ছক্কার মার।

তাঁদের ব্যাটিং এর উপর ভর করে মোটামুটি একটা ভাল সংগ্রহের দিকে এগোতে থাকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কিন্তু কুমিল্লার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং বেনি হাওয়েলের অনাকাঙ্ক্ষিত রান আউট আর বেশিদূর এগোতে দেয়নি চট্টগ্রামকে। তাঁদের ইনিংস থামে ১৪৮ রানে।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান লিটন দাস। শুরুতেই তাঁকে সাজঘরে ফিরিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু আজকের সুনীল নারাইন ছিলেন  ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মেজাজে। তিনি শরিফুলের সেই ওভারে একটি সুবিশাল ছক্কা হাঁকানোর পাশাপাশি দুইটি চার মেরে তরুণ বোলারের সব উল্লাস ধূলিসাৎ করে দেন।

এখানেই থেমে জাননি নারাইন। বহুদিন বাদে আজ তাঁর ব্যাটটা হেসেছে অট্টহাসি। মাত্র ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে নারাইন বনে যান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাটার। তাঁর এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং এ শুভ সূচনা পেয়ে যায় কুমিল্লা।

নির্ভার হয়ে খেলতে থাকে ভিক্টোরিয়ান্স ব্যাটাররা। সবাই যেন আজ চট্টগ্রামের বোলারদের উপর চড়াও হবেন এমন প্রতিজ্ঞা করেই মাঠে নেমেছিলেন। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস থেকে শুরু করে ফাফ ডু প্লেসিস ও মঈন আলীরা। মঈন আলী ও ফাফ খেলাটা একেবারে শেষ করেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। তাঁরা দুইজনই সমান ৩০ রানে ছিলেন অপরাজিত।

১৩ তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে পরপর দুইটি ছক্কা মেরে নিজেদের জয় সুনিশ্চিত করেন মঈন আলী। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বিশাল বড় এক জয় নিয়ে ফাইনালের টিকিটটা কেটে ফেললো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি হোম অব ক্রিকেটে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে কুমিল্লা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link