সাফের ফাইনাল যেন এক নাটকীয়তার রঙ্গমঞ্চ

রোমাঞ্চ, নাটক, অশ্রু, উল্লাস আর বিতর্ক। কী ছিল না এই এক ফাইনাল ঘিরে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের মঞ্চটা সাক্ষী হয়েছে সব কিছুরই। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ গোলে ড্র। এরপর পর টাইব্রেকার গড়িয়েছিল ১১-১১ সমতায়। শেষ পর্যন্ত ফাইনালভাগ্য নির্ধারিত হয় টসের মাধ্যমে। আর সেই ভাগ্যে বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ভারত। তবে নাটকীয়তার তখনও আরো পর্ব বাকি। 

রোমাঞ্চ, নাটক, অশ্রু, উল্লাস আর বিতর্ক। কী ছিল না এই এক ফাইনাল ঘিরে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের মঞ্চটা সাক্ষী হয়েছে সব কিছুরই। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ গোলে ড্র। এরপর পর টাইব্রেকার গড়িয়েছিল ১১-১১ সমতায়। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল-ভাগ্য নির্ধারিত হয় টসের মাধ্যমে। আর সেই ভাগ্যে বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ভারত। তবে নাটকীয়তার তখনও আরো পর্ব বাকি।

ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া দিলানের ভুলেই মূলত সব নাটকীয়তার সূত্রপাত। টাইব্রেকারে নির্ধারিত ৫টি করে পেনাল্টি শুটআউটে সমতা থাকলে সাডেন ডেথ চলার কথা। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ টাইব্রেকার ৫৪ শটের।

ফুটবলে এমন কোনো নিয়মই নেই যে ১১ পেনাল্টি শুটআউটে খেলা নিষ্পত্তি হবে। এমনকি সাফের রুলবুকেও নেই টসের কোনো নিয়ম। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণে ম্যাচ কমিশনারের মাঝে যেন বড্ড তাড়াহুড়ো কাজ করছিল সে সময়। আর তাঁর সিদ্ধান্তেই অবাক বনে যায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দল।

তবে, এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রীতিমত বাইলজ নিয়ে হাজির হয়েছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। আর সেই পদক্ষেপে বাংলাদেশ সফলও হয়। ম্যাচ কমিশনার নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবারো টাইব্রেকার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে আবার বেঁকে বসেছে ভারত।

সে সময় খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যায় তারা। এরপর চলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা। অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৫ ঘন্টার এ নাটকীয়তার সমাপ্তি ঘটে ভারত ও বাংলাদেশকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন করে। ঘন্টা দুয়েক আগেও যারা টসভাগ্যে শিরোপা ভাঙার হতাশা ভেঙে পড়েছিল, সেই তাঁরাই পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাসে পুরো স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে।

অবশ্য ম্যাচের মূলভাগেও নাটকীয়তার কমতি ছিল না। ম্যাচের ৮ম মিনিটেই গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রথমার্ধ পেরিয়ে দ্বিতীয়ার্ধেও একই ফলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচের এই ফল। ৯০ মিনিট পেরিয়ে গেলেও ১-০ গোলেই এগিয়ে ছিল ভারত।

তবে ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা চার মিনিটের শেষ মিনিটে গিয়ে বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে ফেরান সাগরিকা। ওই গোলেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। একই সাথে শুরু হয় শিরোপার পথে নতুন করে চোখ রাখার দিকেও।

টুর্নামেন্টে অতিরিক্ত সময়ের নিয়ম না থাকায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। তবে এরপর যে রূদ্ধশ্বাস মুহূর্তের অবতারণা ঘটেছে তার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। পাঁচ শটের টাইব্রেকারে ৫-৫ সমতায় হলে ম্যাচ গড়ায় সাডেন ডেথে। সেখানেও আবারো সমতা।

তবে, ভারতের নেহার নবম শটটি আটকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। আর তাতে শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসেই ফেটে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই উদযাপনটাও স্থায়িত্ব পায়নি।

নেহার শট নেওয়ার আগেই গোললাইন থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। আর তাতেই আরো একবার পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগ পান নেহা। দ্বিতীয় সুযোগ পেয়ে নেহা আর ভুল করেননি। তবে ততক্ষণে দুদলই প্রথম ১০ শট নেওয়া শেষ। বাকি ছিল দুই গোলকিপার। এরপর দুই গোলকিপারও গোল করেন।

আর এরপরের ঘটনা তো এতক্ষণে সবার জানা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাভাগ্য নির্ধারিত হয় টসের মাধ্যমে। তাতে প্রথমে ভারতকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে ম্যাচ রেফারি পরবর্তীতে নিজের ভুল স্বীকার করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার। এরপর আরো ঘন্টা দুয়েক সেই সিদ্ধান্ত ঝুলে ছিল।

তবে, প্রায় পাঁচ ঘণ্টার নাটক আর বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় দুই দলকেই। যা সাফের ইতিহাস তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসেই বিরল। অবশ্য রেফারির নির্দেশ থাকা স্বত্ত্বেও মাঠে ফেরাতে অস্বীকৃতি জানানো ভারতই হতে পারতো রানার্সআপ। তবে এ দিন যেন প্রকৃতি দুই দলকেই চ্যাম্পিয়ন রূপে দেখতে চেয়েছে। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম যেন এ দিন হয়ে উঠেছিল নাটকীয়তার রঙ্গমঞ্চ।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...