একটা কিছু এগিয়ে আসছে। খুব সম্ভবত একটা প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড়। হয়ত দুমড়ে-মুচড়ে একেবারে উড়িয়ে নিয়ে যাবে ক্রিকেটকে। তবে শঙ্কার বিষয়, ঝড়টা অক্রিকেটীয় নয়। এটাই যেন সবচেয়ে চিন্তার বিষয়। ক্রিকেটই হতে পারে ক্রিকেটের ঘাতক। একটা সিনেমার প্লট কিন্তু দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়। ‘ক্রিকেট যখন ঘাতক’।
আচ্ছা ভণিতা বাদ দেওয়া যাক। গোটা ক্রিকেটই ক্রিকেটের জন্যে হুমকি নয়। হুমকি আসলে ‘ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট’। বর্তমান সময়ে এই শব্দযুগলের সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। ব্যবসায়ীদের নতুন এক দিগন্তই যেন উন্মোচিত হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিটা দেশের ব্যবসায়িকদের এক ইগলের নজর ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে।
আর ক্রিকেট খেলুড়ে প্রতিটা দেশের চিন্তা-ভাবনার একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট। এমনকি যে দেশ ক্রিকেটে শক্তিশালী কিংবা সদস্য দেশ হিসেবেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব একটা সরব নয় তারাও ঝুকছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে। এমনকি আমেরিকার মেজর লিগ সকার বন্ধ রেখে, মধ্যকালীন সময় হতে পারে মেজর লিগ ক্রিকেট। এতেই বোঝা যায় ঠিক কতটা উন্মাদনা ছড়াচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট।
বদ্ধ উন্মাদদের স্থান অবশ্য অ্যাসাইলামে। তা যা হোক। ক্রিকেট বিশ্বে বর্তমানে প্রচলিত আছে অগণিত ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ। নাটের গুরুটা অবশ্য ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। সেটাই যত নষ্টের মূল। না, আক্ষরিক অর্থে নষ্টের মূল নয় বরং ভারতের ক্রিকেটে আশীর্বাদ হয়েই আবির্ভূত হয়েছে আইপিএল। তবে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) একেবারে যেন ‘নাই মামা থেকে কানা মামা ভাল’।
দেশের ক্রিকেটের মান উন্নয়নে বিন্দুমাত্র ফারাক গড়ে দিতে পারেনি এই টুর্নামেন্টটি। তবে ভিন্ন চিত্র অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ। জমকালো আয়োজন আর অজি ক্রিকেটারদের হাতখুলে খেলার মুক্তমঞ্চ। পাকিস্তানের সুপার লিগকে পুনর্বাসন সেন্টারও বলা যেতে পারে। অবসর সময়ে খানিক বিনোদনের খোরাক মেটাতে ক্রিকেটারদের আগমন ঘটে। বিপিএলের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। ওদিকে ক্রিকেটের জনক দেশ তো আর হাতপা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না।
তারাও হাজির দি হান্ড্রেডস নিয়ে। আবার ধনীদেশ ব্যবসার গন্ধ অনুসরণ করে আয়োজন বসিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগের। আর ভ্রমণের একটা মাধ্যম হয়েছে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। এমন বহু টুর্নামেন্ট আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে জেকে বসেছে জোঁকের মত। ক্রিকেট ঠিক এখান থেকে নিস্তার পাবে কি করে? বিষয়টা এমন যে আপনি যদি কোনরকম ব্যাট নিয়ে হাত ঘোড়াতে পারেন তাহলে আপনি কোন একদিন নিজেকে আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন কোন এক ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে।
ঠিক সে দিকেই অগ্রসর হচ্ছে ক্রিকেট। এতে করে ক্রিকেটের শৈল্পিকতায় ব্যাঘাত ঘটা স্বাভাবিক। ক্রিকেটের সৌন্দর্য বহুলাংশের ব্যাহত হবে তা সুনিশ্চিত। ইতোমধ্যে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কুফলটা ভোগ করছে। সাংগঠিকভাবে খুব একটা শক্তিশালী বোর্ড না তাঁরা। তাই বলে ক্রিকেটাররা জাতীয় দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে উট হয়ে দেব ডুব ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে, তাও তো হতে পারে না।
অস্ট্রেলিয়ার দারুণ ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার তো বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে চাচ্ছেন না। এমন ঘটনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হতে খুব বেশি দেরি নেই। তবে ক্রিকেটের একেবারেই যে উন্নতি করছে না ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট সেটা বলারও সুযোগ নেই। ক্রিকেটের বিশ্বায়নটা করে দিচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট। কেমন একটা দোদুল্যমান অবস্থা!