১১৬ দিন পর ক্রিকেট ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত

হঠাৎ করেই থমকে গিয়েছিল ক্রীড়াঙ্গন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে জীবন রক্ষাই যখন দায়, তখন তাঁর প্রভাব পড়েছিল ক্রিকেটেও। বন্ধ হয়ে যায় সব রকম আসর।

গৃহবন্দি হয়ে পড়েন বিশ্ব ক্রিকেটের খেলোয়াড়রা। তাই এক দিন, দু’দিন, তিন দিন করে, ১১৬ দিন হয়ে গেল ২২ গজে ব্যাট-বলের লড়াই হচ্ছে না ক্রিকেটারদের মধ্যে। করোনার প্রকট এখনো কমেনি। তারপরও আর হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে রাজি নয় ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমন্ত্রন জানিয়ে বুধবার থেকে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। সাউদাম্পটনে সিরিজের প্রথম টেস্টটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায়। জীবাণুমক্ত ও রুদ্ধদার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে করোনাকালীন ঐতিহাসিক টেস্টটি।

শেষ কবে ব্যাট-বলের লড়াই দেখেছিলো ক্রিকেট বিশ্ব? এমন প্রশ্ন করা হলে, কেউই উত্তর দিতে পারবে না। কারণ করোনার থাবায় কাঁপছিলো বিশ্বের দুশো’র বেশি দেশ। করোনার চিন্তাতে ক্রিকেট নিয়ে ভাবার উপায় ছিলো না কারও।

তবে, পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ১৩ মার্চ সিডনিতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে খেলেছিলো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। রুদ্ধদার স্টেডিয়ামে হওয়া ঐ ম্যাচটি ৭১ রানে জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া। সেটিই ছিলো, সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ঐ ম্যাচের পরই করোনার কারনে সিরিজটি স্থগিত হয়ে যায়। এরপর আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি।

তবে কাল থেকে আবারো ক্রিকেট মাঠে ফিরছে, এতেই স্বস্তি ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের। তারপরও মনের মধ্যে নানা কৌতুহল তো থাকছেই। কারন এই টেস্টকে ঘিরে ব্যাপক আয়োজন ইসিবি। আয়োজনের পুরোটা জুড়েই রয়েছে সুরক্ষাবলয়।

ক্রিকেটার-স্টাফ থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকার, কর্মকর্তা, সকলকে রাখা হচ্ছে সুরক্ষিত বলয়ের মধ্যে। সাউদাম্পটনের মাঠের মধ্যেই রয়েছে হোটেল। সেখানেই থাকছেন ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, সকলে।

ক্রিকেটারেরা অনেক আগ থেকেই রয়েছেন সুরক্ষিত বলয়ে। আজ থেকে ধারাভাষ্যকারদেরও হোটেলে রুম দেয়া হচ্ছে। ধারাভাষ্য কক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে। ধারাভাষ্যের মাঝে নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে খেলা দেখতে পারবেন তারা।

খেলোয়াড়দের জন্য রাখা হয়েছে, সর্বোচ্চ চিকিৎসা ব্যবস্থা। খেলা চলাকালীন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাকে সব ধরনের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত সাউদাম্পটনের কর্মকর্তারা। মাঠের চারপাশে হ্যান্ড-স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এই টেস্টকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন ইসিবির প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসন। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট মাঠে ফিরছে, এতেই আমরা খুশী। তবে আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে আগামীকালের টেস্ট। সবকিছু ঠিক-ঠাক সম্পন্ন করতে হবে আমাদের। আমরা প্রস্তুত। সব ধরনের সুরক্ষা বলয় নিয়ে আমরা তৈরি।’

ইংল্যান্ডের জন্য যে, এটি চ্যালেঞ্জের সেটি বলতে দ্বিধাবোধ করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। এই টেস্টটি বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য বড় ধরনের উদাহরণ হবে বলে জানান সিমন্স, ‘ইংল্যান্ডে এই টেস্ট ম্যাচ উদাহরণ হতে চলেছে। এটা অন্যদের দেখিয়ে দিতে পারে, কঠিন সময়ে কী ভাবে খেলা সম্ভব। ইংল্যান্ড বোর্ডের প্রশংসা প্রাপ্য যে এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারনে মানুষও এখন মানসিকভাবে চিন্তিত। এই ক্রিকেট ম্যাচ দেখে মানুষও কিছুটা আনন্দিত হবে, উপভোগ করার সুযোগ পাবে।’

এই সিরিজ থেকে অন্যান্য দেশও ক্রিকেটকে ফেরানোর সাহস পাবে বলে মনে করেন সিমন্স, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ক্রিকেট কী ভাবে শুরু করা যাবে, এই সিরিজ সেই নকশা সকলের সামনে তুলে ধরবে। এখানকার মত বিশ্বের সকল দেশও ক্রিকেট নিয়ে মেতে উঠুক এমনটাই আমি চাই।’

আবারো ক্রিকেট লড়াইয়ে মাঠে নামতে মুখিয়ে আছেন জো রুটের অবর্তমানে ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বেন স্টোকস। তিনি বলেন, ‘সাউদাম্পটনে মাঠে সুরক্ষাবলয় দেখে, আমি অবাকই হয়েছি। এখানকার কর্মকর্তার কতটা পরিশ্রম করেছে। তাদের পরিশ্রমের প্রতিদান দিতে আমরা মাঠে ফিরতে মুখিয়ে আছি। আশা করি, সব কিছু সঠিক পরিকল্পনায় হবে। দু’দলের খেলোয়াড়রা ম্যাচটি উপভোগ করবে।’

স্টোকসের সুরে কথা বললেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। ম্যাচ আয়োজনের জন্য যারা সর্বক্ষণ পরিশ্রম করেছেন, তাদের ধন্যবাদও দিয়েছেন হোল্ডার, ‘একটি ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের জন্য এতটা পরিশ্রম করতে আমি কখনো দেখিনি। এখানে যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। আসলে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরাও সকল দিক-নির্দেশনা মানছি, যাতে কেউ কোন ধরনের সমস্যায় না পড়ে। সবকিছু ঠিক-ঠাকভাবে হলে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যান্য বোর্ডও সাহস পাবে ক্রিকেটকে ফেরাতে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link