ক্লাচ করাতে ক্রিশ্চিয়ানো অনন্য

হার না মানার অদম্য মানসিকতার কারণে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এতটা বরণ্যে, এতটা প্রশংসনীয়। ক্লাচ করায় নেই তার কোন প্রকার কার্পণ্য। 

বুড়ো হাড়ে যেন ক্ষয় ধরেনি। সংখ্যার বিচারে বয়স বাড়ে, কিন্তু শরীর জুড়ে তারুণ্য আর হৃদয়জুড়ে এখনও ছেলেমানুষী। তাইতো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ফুরিয়ে যান না। তিনি ফিরে আসেন প্রতিবার। প্রতাপের সাথে নিজের ছাপটা ফেলেন বিশ্ব ফুটবলের রঙিন ভুবনে।

ক্রিশ্চিয়ানোকে থামাতে পারেন স্রেফ ওই ঈশ্বর। আর কারো ক্ষমতায় কুলোয় না রোনালদোর লাগাম টেনে ধরার। তাইতো জার্মান ফোর্সের  বিদায় ঘন্টা তিনি বাজিয়ে দিতে পারেন এখনও। প্রতিপক্ষের সকল সমীকরণের ছকে পানি ঢেলে দেন ডান পা-য়ের আলতো টোকায়। দলকে নিয়ে যান আরও এক ফাইনালের মঞ্চে।

উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে সেই ক্লাচ গোলটাই এলো ক্রিশ্চিয়ানোর পা থেকে। একের পর এক শট যখন যায় বিফলে, তখন যেন রোনালদোর ট্যাপইন হয়ে ওঠে শেষ ভরসা। বয়সটা হয়ে গেছে ৪০। এই বয়সেও গোলের ক্ষুধা তাকে তাঁতিয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। ডি-বক্সের ভেতরে গোলের অন্বেষণে তিনি হানা দেন প্রতি মুহূর্তে।

ম্যাচ ৬৮ মিনিটের মাথায় তেমন এক অন্বেষণের শেষটায় ক্রিশ্চিয়ানোর নামের পাশে লেখা হয়ে গেছে আরও একটি গোল। নুনো মেন্ডিসের বাড়িয়ে দেওয়ার বলটাকে তিনকাঠির নিচে রাখলেন পর্তুগালের ‘পোস্টার বয়’। সেই গোলটাই এনে দিয়েছে পর্তুগালকে জয়।

কিন্তু এর আগে আছে পিছিয়ে পড়ার গল্প। ফ্লোরিয়ান উইৎজের হেড থেকে করা গোলে পিছিয়ে পড়েছিল পর্তুগীজরা। কিন্তু যে দলে ক্রিশ্চিয়ানো থাকেন, সে দল লেখে প্রত্যাবর্তনের রুপকথা। ৪০ বছরের ওই বুড়ো লোকটাও একটা আলাদা মানসিক শক্তির সঞ্চার ঘটাতে জানেন। অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে নয়, বরং নিজের চেষ্টায় তিনি থাকেন নেতৃত্বে।

শূন্যে ভেসে থেকে হেড থেকে শুরু করে, ডি-বক্সের ভেতর প্রায় প্রতিটা সুযোগে তার থাকে শিকারির নজর। পর্তুগালের জার্সিতে তার যেন নিবেদনের কমতি নেই। ক্যারিয়ারের নানা অপ্রাপ্তির মাঝেও তিনি বেঁচে থাকতে চান দেশটির সেরা তারকা হয়েই। ফুটবলের এই বর্ণালি ভুবনে তাইতো তিনি তারুণ্যের সাথে টেক্কা দিয়ে নিজেকে ফিট রেখে চলেছেন।

তিনি যেন মানতেই নারাজ তার সময় ফুরিয়ে এসেছে, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। তিনি নিজের জন্যে লড়াই চালিয়ে যেতে চান, তিনি দলের জন্যে লড়াই চালিয়ে যেতে চান। এই হার না মানার অদম্য মানসিকতার কারণে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এতটা বরণ্যে, এতটা প্রশংসনীয়। ক্লাচ করায় নেই তার কোন প্রকার কার্পণ্য।

Share via
Copy link