তামিল নাড়ুর আবেগের সাথে মিশে গেছে সিএসকে

একটা প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েন যখন চলে, তখন তো রাগ, ক্ষোভ, অভিমান সবই হয়। মাত্রা ছাড়িয়ে কান্নাও পায়। সে কারণেই চিপকের বাইরে দর্শকদের প্রতিক্রিয়াতে দ্বিধাহীনভাবেই মনের ভেতরকার অনুভূতির প্রকাশ ঘটছে।

চেন্নাই সুপার কিংস একটা আবেগ, একটা অনুভূতি, তামিল নাড়ুর মানুষদের জন্যে এটা স্রেফ একটা দল নয়। তামিল নাড়ুর প্রতিটা জনগণ এই দলটাকে নিজেদের মনে করে। পরম আরাধ্য পৈত্রিক সম্পত্তি। তাইতো এবারের আসরে দলের বেহাল দশাতে মুষড়ে পড়েছেন সমর্থকরা।

আবেগের বহি:প্রকাশ ঘটছে প্রতিনিয়ত। রাগ, ক্ষোভ, হতাশা উগড়ে দিচ্ছেন প্রত্যেকে। কিন্তু কেন এত গভীর আবেদন একটি ক্রিকেট দলকে নিয়ে? কেনই বা সকলে এত বেশি আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ছেন চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যর্থতার দিনে?

এর উত্তর জানতে হলে, জানা প্রয়োজন তামিল নাড়ুর সংস্কৃতি, জানা প্রয়োজন সেই অঞ্চলের মানুষদের মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও আর্থিক পরিস্থিতি। চেন্নাই সুপার কিংসে খুব বেশি তামিল নাড়ুর খেলোয়াড় খেলেন না, তবুও দলটাকে নিজেদের আপন করে নিয়েছেন সেই প্রদেশের প্রত্যেকটা মানুষ। এর পেছনে বিশাল বড় এক কারণ মহেন্দ্র সিং ধোনি।

যদিও এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও অবদান রয়েছে। তারা ধোনিকে কেন্দ্র করে একটা বলয় সৃষ্টি করতে সহয়তা করেছেন। যে বলয়ের মাঝে রয়েছে স্রেফ আনন্দ আর উদযাপনের উপলক্ষ। ধোনি তামিল নাড়ুর ছেলে না হয়েও দলকে ঠিকই নিজের ছেলের মত আগলে রেখেছিলেন দীর্ঘকাল। সফলতাও তো কম আসেনি তার হাত ধরে।

এ কারণে তামিল নাড়ু ধোনিকে নিজেদের ঘরের ছেলেই মেনে নিয়েছে। ঘরের ছেলের সাফল্য তো উদ্বেলিত করবেই সকলকে। তাছাড়া সাংস্কৃতিকভাবে বরাবরই নতুনত্বের পেছনে ছুটেছে তামিল নাড়ুর সাধারণ জনগণ। এমনকি প্রদেশটির রাজনীতিতেও রয়েছে সেই ছাপ। চেন্নাই সুপার কিংস সেই পালসটা ধরতে পেরেছিল। তারা জনগণের মাঝে মিশে যেতে পেরেছিল।

তামিলের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার রাজনিকান্তের মুক্তি পাওয়া সিনেমার প্রথম দিনের প্রথম শো দেখাটা একটা উৎসবের মত করে পালিত হয়। ঠিক তেমনি চেন্নাইয়ের খেলাকেও উৎসবের মত করেই উদযাপিত হয়ে আসছে বিগত বছরগুলোতে, এর কারণ অবশ্য একই ধারার বিনোদন থেকে একটু বেড়িয়ে আসার প্রয়াশ।

 

তামিল নাড়ুতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে টিভি সেটের পর্দায় বসে একটু নিখাঁদ বিনোদনের সন্ধান চালায় প্রতিটি পরিবার। সেই সন্ধানের একটা উত্তর হতে পেরেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) চেন্নাই সুপার কিংস। আয়োজন করে দেখা হয় চেন্নাইয়ের প্রতিটি ম্যাচ।

ওই অভ্যাসের জায়গাও দখল করে ফেলেছে চেন্নাই সুপার কিংস। তাছাড়া রাত্রির বিষাদ ঘিরে ধরার আগেই চেন্নাই বহুবার দিয়েছে শিরোপা জয়ের আনন্দ। ক্যারিয়ার নিয়ে সংগ্রাম চালানো প্রতিটা যুবক সেই সাফল্যের সাথে নিজেকেও জুড়ে নিয়েছে। তাদের মনে হয়েছে চেন্নাইয়ের জয় মানেই তো তাদেরও জয়।

মাস দুই ধরে তামিল নাড়ুর মানুষের কাছে আলোচনার করবার রসদ থাকে। এতে করে সামাজিক বন্ধনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, স্রেফ চেন্নাই সুপার কিংস ও আইপিএলের কল্যাণে। সে কারণেও চেন্নাইকে এতটা আবেগ নিয়ে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন তামিল নাড়ুর ছেলে-বুড়ো সকলে। প্রত্যেকেই ভালবাসে দলটাকে।

আর একটা প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েন যখন চলে, তখন তো রাগ, ক্ষোভ, অভিমান সবই হয়। মাত্রা ছাড়িয়ে কান্নাও পায়। সে কারণেই চিপকের বাইরে দর্শকদের প্রতিক্রিয়াতে দ্বিধাহীনভাবেই মনের ভেতরকার অনুভূতির প্রকাশ ঘটছে। কয়েক বছর আগেও যে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেখতেই মাঠে এসেছেন দর্শকরা, সেই ধোনিকে ঘিরেও প্রশ্ন তুলছে। এসব ঘটছে স্রেফ ওই যে ভালবাসার সম্পর্কের কারণে।

– ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে

Share via
Copy link