যৌন হয়রানি, তদন্তের অধীনে দানি আলভেস!

তাঁকে আটকে রাখা যায় না। তবে তিনি চাইলে আটকে দিতে পারেন যে কাউকে; তাঁর সামনে এসে থেমে গিয়েছে কত কত সুপারস্টার। বয়সটা প্রায় চল্লিশের ঘরে, তবু লক্ষ্য একটাই – ফুটবলটা খেলে যেতে চান। বয়স তাঁর জন্য সমস্যা নয় হয়তো। হয়তো তিনি মানেন, চাইলেই সব সম্ভব। সব কিছু সম্ভব করার এই মন্ত্র যিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন তিনি দানিয়েল আলভেস দা সিলভা।

বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জেতা ফুটবলার দানিয়েল আলভেস। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা তারকাদের তালিকায় দ্বিতীয় তিনি। এছাড়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে ব্রাজিলের প্রতিনিধিত্ব করার রেকর্ডও আছে তাঁর দখলে। তবে এবার ফুটবলীয় কারণে নয়, বরং নারী কেলেঙ্কারির জের ধরে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন এই রাইট ব্যাক।

৩০ ডিসেম্বর রাতে বার্সেলোনার সামাজিক অভিজাতদের জন্য জনপ্রিয় স্থান ক্যালে টুসেটে ঘটে এক অপ্রীতিকর ঘটনা। এদিন এক নারী যৌন হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন।

পরবর্তীতে জানা যায়, কোন এক অজ্ঞাত পুরুষ তাঁর শরীরে বাজেভাবে স্পর্শ করেছিল। এবং দানি আলভেসের দিকেই আঙ্গুল তুলেছিলেন হয়রানির শিকার সেই নারী। তিনি তখন তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের এই ব্যাপারে জানিয়েছিলেন এবং তারাই কাতালান পুলিশকে খবর দিয়েছিল।

খবর পাওয়া মাত্রই কাতালান পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি জেনে নেন। ততক্ষণে যদিও অনুমিত অপরাধী নাইট ক্লাব ছেড়ে চলে গিয়েছিল।

অবশ্য দানি আলভেসের সাথে সংবাদমাধ্যমগুলো যোগাযোগ করলে তাঁর দলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। তাঁরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বিবৃতি দিয়েছিল যে অভিযোগটি মিথ্যা। তবে এটা সত্যি যে সেসময় দানি আলভেস অল্প সময়ের জন্য সেই ঘটনাস্থলেই ছিলেন।

ভুক্তভোগী অজ্ঞাত নারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বললেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে কোন আনুষ্ঠানিক লিখিত অভিযোগ করেননি। স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, শনিবার ভোররাতে বার্সেলোনার একটি নাইটক্লাবে কথিত যৌন হয়রানির ঘটনাটির ব্যাপারে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন তাঁরা। অবশ্য দানি আলভেসকে এখনই অপরাধী হিসেবে দেখছে না কাতালান পুলিশ।

দানি আলভেস নিজেও এই ব্যাপারে চুপ করে আছে। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে কিছু বলেননি তিনি। বরং ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে ভক্তদের উদ্দেশ্যে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে নিজেকে নির্ভার হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন তিনি। এই ব্রাজিলিয়ানের স্ত্রী জোয়ানা স্যাঞ্জও স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া দেখান নি।

বর্তমানে আমেরিকান ক্লাব উনাম পুমাসে খেলা দানি আলভেস ক্যারিয়ার জুড়ে খেলেছেন জুভেন্টাস, প্যারিস সেন্ট জার্মেই, বার্সেলোনা, সেভিয়ার মত ক্লাবে। বিশেষ করে বার্সেলোনার সাথে আলভেসের সম্পর্ক একেবারেই অকৃত্রিম। ব্লাউগানা জার্সি গায়ে ফুলব্যাকের সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছিলেন দানি আলভেজ। বার্সেলোনার তৎকালীন সাফল্যের অনেকটা কৃতিত্ব আলভেসকে দিতেই হবে।

নিজের ভালবাসার বার্সেলোনাকে দুর্দশা থেকে টেনে তুলতে ২০২১ সালে আবারো ফিরেছিলেন দানি আলভেস। এসময় তাঁর বেতন ছিল সপ্তাহে মাত্র এক ইউরো। অবিশ্বাস্য এই বেতনে শুধু একজন দানি আলভেসই খেলতে পারেন। তিনি যে বার্সেলোনার শুধু খেলোয়াড়ই নয়, কাতালোনিয়ার সাথে তাঁর সম্পর্ক যে কল্পনার চেয়েও গভীর সেটির প্রমাণই দেয় এক ইউরো বেতনের চুক্তি।

তাই তো প্রিয় শহরে লজ্জাজনক কাজের দায়ে অভিযুক্ত হওয়া দানি আলভেসকে কুরে কুরে খাবে। নির্দোষ হয়ে থাকলে হয়তো এখন সত্যি প্রকাশের অপেক্ষাই করছেন এই কিংবদন্তি।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link