Social Media

Light
Dark

দ্য বেস্ট উইদআউট ব্যাগি গ্রিন

মাইক হাসি – ‘মিস্টার ক্রিকেট’ হিসেবে ক্রিকেট দুনিয়ায় সমাদৃত এই অস্ট্রেলিয়ান তারকা। ত্রিশ বছর বয়সে জাতীয় দলে এসে বনে গিয়েছেন বিশ্বসেরাদের একজন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট তথা বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা হাসি। মাইক হাসি সেরাদের একজন হলেও ছোট ভাই ডেভিড হাসি নিজেকে সফলতার শীর্ষে নিতে পারেননি।

তবে, অস্ট্রেলিয়ার আন্ডাররেটেড একজন পারফরমার হিসেবে খেলে গেছেন তিনি। সাদা পোশাক, ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ গায়ে না জড়াতে পারার আক্ষেপটা থাকবে। রঙিন পোশাকেও যে তিনি নিয়মিত ছিলেন এমন নয় – বড় ভাই শীর্ষে তো ছোটজন ছিলেন উপেক্ষার কাল ছায়ায়।

ডান হাতি ব্যাটার। অফস্পিন বোলিংয়ে উইকেট শিকার করতেন প্রায়ই। টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ একজন ক্রিকেটার ছিলেন ডেভিড। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বহু ম্যাচে তিনি অবদান রেখেছেন। রঙিন পোশাকে সামর্থ্যের সেরাটা দিতে পারলেও লম্বা সময় জাতীয় দলে খেলতে পারেননি তিনি।

ব্যাংকে ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি করে পরিবার ছেড়ে পার্থে পাড়ি জমান ডেভিড। প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করতেন। বড় ভাইর মত ক্রিকেট পাগল ছিলেন। ‘প্রহরান’ নামক ক্লাবের হয়ে সেখানেও খেলা শুরু করেন ডেভিড। ছুটির দিনগুলোতে সেখানেই খেলতেন তিনি। এরপর দ্রুতই ভিক্টোরিয়ার ক্রিকেট কমিটির নজরে আসেন ডেভিড। ভিক্টোরিয়ার সহকারী কোচ গ্রেগ শেফার্ডের মনে ধরলেন হাসি। তাঁর ব্যাটিং টেকনিক, প্রতিভা সবকিছুই নজর কাড়লো এই কোচের।

২০০৩ সালে ভিক্টোরিয়ার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। পরের মৌসুমেই করলেন প্রায় ৬০০ রান; দেখা পেলেন মেইডেন ডাবল সেঞ্চুরির। স্টিভ ওয়াহর ব্লুজের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান ডেভিড। বছর ছয়েকের মধ্যেই ২০০৭-০৮ মৌসুমে তিন ফরম্যাটেই ভিক্টোরিয়ার বর্ষেসেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার জেতেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পারফরম্যান্স দুর্দান্ত হওয়াত কাউন্টি খেলার প্রস্তাব পান ডেভিড। সেটি অবশ্য সাদরেই গ্রহণ করলেন এই অজি তারকা। ২০০৪ সালে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে খেলা শুরু করেন। একই বছর অস্ট্রেলিয়া এ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন।

সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া এ দলের সাথে পাকিস্তান সফরে যান ডেভিড। এর বছর খানেকের মাথায় উঠে আসেন জাতীয় দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুঁটিয়ে ২০০৮ সালে মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তাঁর। বল হাতে ১ উইকেট পেলেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি তিনি।

ওই বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। অভিষেকেই খেলেন ৫২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। পরের ম্যাচেই মাত্র ১৯ বলে রেকর্ডগড়া এক ফিফটি করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে তখন ড্যারেন লেহমেন, রিকি পন্টিং, ডেমি মার্টিন, মাইকেল ক্লার্করা খেলছিলেন। মিডল অর্ডারে জায়গা ধরে রাখাটা ছিল ডেভিডের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

পরের বছর ২০০৯ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মেইডেন ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন তিনি। একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ৮৮ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরির পর অজ্ঞাত কারণে বাদ পড়েন দল থেকে। পরের দু’বছর আর ওয়ানডে দলে ফিরতে পারেননি তিনি। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আবার ওয়ানডে দলে ফিরেন এই অজি ক্রিকেটার। তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে খেলেন ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।

২০১১-১২ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজে ৫৪.৮৮ গড়ে ৪৩৯ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ডেভিড।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পারফরমার তিনি। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের একজন এই অজি তারকা; প্রায় ছয় হাজার রানের মালিক তিনি।

মাইক হাসি ও ডেভিড হাসি এক সাথে খেলেছেন তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। মাইক হাসি অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে তিন ফরম্যাটের সবগুলো খেললেও ডেভিড মূলত ছিলেন টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটার। মাইকের চেয়ে ডেভিড টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এক ম্যাচ বেশিই খেলেছেন। বিশেষ করে ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ডেভিড ছয় উইকেট নেওয়ার সাথে সাথে দু’টি হাফ সেঞ্চুরিও করেন।

ডেভিডের নামের পাশে আরেকটি রেকর্ড আছে অবশ্য। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩৬ ইনিংসে তিনি একবারও তিনি এলবিডব্লিউ আউট হননি। ৩৯ ম্যাচে ৩৬ ইনিংসে ব্যাটিং করে একবারও তাঁকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলতে পারেননি কোনো বোলার।

ওয়ানডেতে খেলেছেন ৬৯ ম্যাচ। প্রায় ৩৩ গড়ে করেছেন ১৭৯৬ রান। ১৪ ফিফটির সাথে করেছেন এক সেঞ্চুরিও। অপরদিকে, ৩৯ টি-টোয়েন্টিতে তিনি ৭৫৬ রানের মালিক, সাথে আছে তিন ফিফটি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ডেভিড হাসির পরিসংখ্যানটা নিতান্তই সাদামাটা বলা চলে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের ধারাবাহিক পারফরার ছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আছে ১৪ হাজারের বেশি রান। ঘরোয়া ক্রিকেটে সব মিলিয়ে তিনি ২৮ হাজারের বেশি রানের মালিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link