কাঠগড়ার স্থায়ী আসামী

অস্ট্রেলিয়াকে পেস স্বর্গ বলা হলে খুব বড় ধরণের ভুল কিন্তু হবার কথা নয়। আর সেই পেস বান্ধব কন্ডিশনেই বসতে চলেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। এই বছরের শেষ কোয়ার্টারেই আয়োজিত হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞ। প্রায় প্রতিটা দল নিজেদের টি-টোয়েন্টি দলটার একটা রুপরেখা তৈরি করে ফেলেছে। নিজেদের খেলোয়াড়দের বিভিন্ন পরিকল্পনায় বাজিয়ে দেখছে।

এখানটায় বাংলাদেশের যেন বড্ড অনীহা। বিশ্বকাপের আর খুব বেশিদিন সময় বাকি নেই। প্রায় প্রতিটা ডিপার্টমেন্টেই বাংলাদেশের দূর্বলতা যেন মধ্যদুপুরের সূর্যের আলো। প্রচণ্ড উজ্জ্বল আর তাপদাহ যেন ঝলসে দেবে সবকিছু। ঝলসে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা আয়ত্ত্বে ঠিক আনতেই পারছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশে পেস বোলিং ইউনিটটা দিক খুঁজে পাচ্ছে। আরেকটু বড় চিত্রে বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রশংসা হরহামেশাই হয়। তবে ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলছে ২০২২ সালের শুরু থেকে এখন অবধি। শুধু টি-টোয়েন্টির হিসেবটা করলে বিষয়গুলো আরও খানিকটা কদাচিৎ আকার ধারণ করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে চিন্তার জায়গা এখন ডেথ ওভার বোলিং।

এই বছরে এখন অবধি বাংলাদেশ তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে। প্রথমটা ঘরের মাঠে আফগানিস্তানে। সেখানে বাংলাদেশের পারফরমেন্স যতটা না প্রশংসিত মিরপুরের স্লো উইকেট তার থেকেও বেশি নিন্দিত। এমন বাজে উইকেট সম্ভবত ক্রিকেট দুনিয়ার কোথাও নেই। সে উইকেটে বাংলাদেশি বোলারদের ডেথ ওভারের বোলিংটা বাদ রেখে বাকি চারখানা ম্যাচের কথাই ধরা যাক।

চারটি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছে বিদেশের মাটিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে দুই সিরিজে বাংলাদেশী বোলারদের করুণ দশা উন্মোচিত হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের বোলাররা খরচ করেছেন ৭৪ রান। প্রায় ১৫ এর কাছাকাছি ইকোনমি রেটে বাংলাদেশ রান খরচ করেছে। তাঁর থেকেও বড় বিষয় বাংলাদেশি বোলাররা কেবল মাত্র দুইটি উইকেট শিকার করতে পেরেছিল।

তবে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু বিষয়টা ঘটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাঁদের বিপক্ষেই শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশি পেসাররা বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছে। মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুলদের তুলোধুনো করে ৭৭ রান জরো করে জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। বাংলাদেশ একটি উইকেটও নিজেদের করে নিতে পারেনি।

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি বোলারদের এমন ভরাডুবি নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগায়। ভাবতে বাধ্য করে। যেখানে রান আটকে রাখার প্রচেষ্টা করার কথা সেখানে বাংলাদশের বোলাররা খরচ করছেন দু’হাত খুলে। প্রায় ১৫ রান করে দিচ্ছে শেষের প্রতি ওভারে। এমন চিত্র মেনে নেওয়ার মত নয় নিশ্চয়ই। অন্যদিকে আরেক চিন্তার বিষয় ডেথ ওভারে পেসারদের শোচনীয় অবস্থা।

একটু পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেলে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়। ২০২২ সালে মুস্তাফিজুর রহমান ডেথ ওভারে বল করে রান দিয়েছেন প্রায় ১১ করে। একই চিত্র শরিফুল ইসলামের ক্ষেত্রেও। তিনিও প্রায় একইরকমভাবে রান খরচা করছেন। তাসকিন আহমেদ যেন মিতব্যয়ীতার সংজ্ঞাই ভুলে যান। অথচ এদের উপরই আস্থা। এই তিনজনই বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের ধারক।

এমন পারফরমেন্স নিশ্চয়ই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দারুণভাবে ভোগাবে বাংলাদেশকে। তবে একটা প্রশ্নের উদয় নিশ্চয়ই হয়। মুস্তাফিজ তো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও ডেথ ওভারে বল করেন। আর সেখানে তিনি যথেষ্ট ভালও করেন। তবে লাল-সবুজ জার্সিতে তিনি কেনই বা এত মলিন। এর উত্তর হতে পারে আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টের অপারগতা। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের নিয়ে খুব বেশি পর্যালোচনা করে না।

এই কারণটা বিশাল বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের বোলিং বিফলতার। অথচ উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি। আর প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিশ্বের প্রতিটি দেশ তাঁদের প্রতিপক্ষদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে আলসেমি বোধ করে না। তবে বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে বিশ্লেষকরা সর্বক্ষণ থাকেন তন্দ্রাচ্ছন্ন। এমন তন্দ্রাচ্ছন্নতা কখনোই বাংলাদেশকে বড় মঞ্চের ধারাবাহিক পারফরমার হতে দেবে না।

তন্দ্রার এই ঘোর কাটিয়ে উঠুক বাংলাদেশ। বোলারদের নিজেদের উন্নতির করার পাশাপাশি ঠিকঠাক বিশ্লেষিত হোক প্রতিপক্ষের দূর্বলতা। আকাশ ছোঁয়া অর্জনে কেবল তখনই ছেয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link