ডেভন কনওয়ে, চেন্নাইয়ের ভরসার স্তম্ভ

বেঞ্চ শক্তিশালী রাখতেই মূলত তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। কারো অনুপস্থিতি কিংবা ইনজুরি হলেই কেবল একাদশে জায়গা মিলত তাঁর। কিন্তু সুযোগ পেতেই দারুণ পারফর্ম করা ডেভন কনওয়ে বনে গেছেন দলটির সমর্থকদের চোখের মণি। 

বেঞ্চ শক্তিশালী রাখতেই মূলত তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। কারো অনুপস্থিতি কিংবা ইনজুরি হলেই কেবল একাদশে জায়গা মিলত তাঁর। কিন্তু সুযোগ পেতেই দারুণ পারফর্ম করা ডেভন কনওয়ে বনে গেছেন দলটির সমর্থকদের চোখের মণি। 

অথচ গত মৌসুমে চেন্নাইতে নাম লেখানো কনওয়ে কখনোই দলটির প্রথম পছন্দ ছিলেন না। গত মৌসুমে ভিসাজনিত সমস্যায় মঈন আলী দলের সাথে শুরুতে যোগ দিতে পারেননি। সে কারণেই প্রথম তিন ম্যাচে একাদশে সুযোগ পান এই কিউই তারকা। পরে মঈন দলে যোগ দিতেই কনওয়ের জায়গা হয় বেঞ্চে। যদিও মৌসুমের শেষদিকে টানা তিন ফিফটি হাঁকিয়ে জানান দেন নিজের সামর্থ্যের। 

এবারের মৌসুমেও একাদশে থাকার কথা ছিল না কনওয়ের। কেননা ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকে রীতিমতো রেকর্ড মূল্যে দলে ভেড়ায় দলটি। ফলে স্টোকসকে বসিয়ে তাঁকে খেলানোর কথা স্বপ্নেও ভাবেননি কেউ। কিন্তু স্টোকস ইনজুরিতে ছিটকে যাবার সুবাদে দারুণ পারফর্ম করে দলে নিজের জায়গা পাকা করেন কনওয়ে। এবারের মৌসুমে ১৩ ম্যাচ চেন্নাইয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৯৮ রান করেছেন এই ব্যাটার। 

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে উপমহাদেশে খেলার অভিজ্ঞতাই ছিল না এই তারকার। সবেধন নীলমণি বলতে ২০০৫ সালে স্কুল দলের হয়ে শ্রীলংকা সফরে এনেছিলেন। ২০২২ আইপিএলের আগে ভারতের মাঠে কখনো মাঠে নামার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর।

অথচ মাঠে তাঁর পারফরম্যান্স দেখে তা বোঝার উপায় কই! স্পিনারদের বিপক্ষে সাবলীল ব্যাটিংয়ে চমকে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে। কেবলমাত্র শুভমান গিলই এবারের আইপিএলে স্পিনের বিপক্ষে তাঁর চাইতে বেশি রান করেছেন। 

ওয়েলিংটনে ফায়ারবার্ডসে তাঁর কোচ গ্লেন পোকনাল বলেন, ‘সে অন্য ব্যাটসম্যানদের তুলনায় দ্রুত পিচের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। সে বরাবরই ভালো স্পিন সামলাতো। ভারতের মাটিতে আগে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও সেটা তাঁর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি।’

স্পিনারদের বিপক্ষে সফল হবার সকল অস্ত্রই আছে কনওয়ের ব্যাটিংয়ে। পাকিস্তানের মাটিতে আবরার আহমদেকে সামলানোর পাশাপাশি ভারতের বিপক্ষে আক্সার প্যাটেল এবং কুলদ্বীপ যাদবের বিপক্ষে দারুণ সফল এই ব্যাটার। স্পিনারদের বিপক্ষে মোট রানের এক চতুর্থাংশই সুইপ এবং রিভার্স সুইপে তুলেছেন এই তারকা।

কনওয়ে বলেন, ‘আমি সুইপ এবং রিভার্স সুইপ শেখার জন্য বেশ পরিশ্রম করেছি। লিংকনে মার্লিন নামের স্পিন বোলিং মেশিনের সামনে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাট করেছি। এছাড়া চেন্নাইতে এই কন্ডিশনে অভিজ্ঞ ব্যাটারদের সাথেও কথা বলেছি নিজের ব্যাটিং নিয়ে।’

এছাড়া ২০২১ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে পিচে কিটি লিটার মিশিয়ে প্র্যাকটিস করেছিলেন রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে সামলাতে। পোকনেল বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের পিচে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং অনুশীলন করে সে নিজেকে স্পিনের বিপক্ষে দক্ষ করে তুলেছে। পিচে কিটি লিটার দেবার ফলে বল উঁচুনিচু হয়ে আসে। এভাবে প্র্যাকটিস করার ফলে আপনি বল আরো ভালোভাবে দেখতে পারবেন, শট খেলার জন্য সময় বেশি পাবেন।’ 

কেবলমাত্র স্পিন নয়, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দ্রুত গতির বাউন্সার সামলাতে খানিকটা সমস্যা হতো এই ওপেনারের। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই দুর্বলতাও কাটিয়ে উঠেছেন কনওয়ে। এবারের আইপিএলেই জোফরা আর্চারের তিন বাউন্সার সীমানাছাড়া করেছেন দারুণ সব পুল শটে। এছাড়া কাগিদো রাবাদার বিপক্ষেও আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করেছেন এবারের আসরে। 

চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি দারুণ খুশি কনওয়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। তিনি বলেন, ‘সে অসাধারণ। সে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে আগ্রহী এবং নিজের ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে দলের জন্য সব সময় নিজের সেরাটা দিতে চায়। সে খেলা নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে, সবার সাথে আলোচনা করে। সে ব্যাটিংয়ে সব সময় খুব বেশি কিছু নিয়ে ভাবে না, বল বাই বল চিন্তা করে যায়। ভিন্ন কন্ডিশন, ভিন্ন বোলারদের সামলাতে সে দারুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা আশা করছি মৌসুমের বাকি সময়েও সে ফর্মটা ধরে রাখবে।’

ফাফ ডু প্লেসিকে ছেড়ে দেবার পর চেন্নাই সমর্থকরা খানিকটা বিরক্ত হয়েছিলেন টিম ম্যানেজমেন্টের উপর। কিন্তু ডু প্লেসিকে হারিয়ে যেন নিজেদের নতুন মাইক হাসিকেই পেয়ে গিয়েছেন দলটির সমর্থকরা। চিপকের গ্যালারীতে তাই ‘কনওয়ে কনওয়ে’ চিৎকারে কান পাতা দায়। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...