বয়সটা যখন ৩৮ হয়ে যায় তখন বুঝে নিতে হয় পেশাদার ক্রিকেট খেলার জন্য আর বেশি সময় নেই। এই বয়সে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টাইমিংয়ে গড়বড় হতে শুরু করে, রিফ্লেক্স নষ্ট হতে শুরু করে। নিজের সেরা ফর্ম ধীরে ধীরে অতীত হয়ে উঠে। বিদায় বলার ক্ষণ গণনা করতে হয়। কিন্তু দীনেশ কার্তিক বোধহয় সাধারণ কেউ নন, তাইতো ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে আরো বেশি ছন্দময় হয়ে উঠেছেন।
চলতি আইপিএলেই সেটার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে পারফরম করে যাচ্ছেন তিনি; সবশেষে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ৩৫ বলে ৮৩ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস খেলেছেন। এই ইনিংস খেলার পথে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে পাঁচটি চার আর সাতটি ছয়।
না, এমন পারফরম্যান্সের পরও দলকে জেতাতে পারেননি এই ব্যাটার। তিনি যখন উইকেটে আসেন তখনি অবশ্য হেরে বসেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু; কেননা ১০.৩ ওভারে তখন ১৬৭ রান প্রয়োজন ছিল। তবু হার মানেননি, লড়াই করেছেন শেষ বল পর্যন্ত। তাঁর ব্যাট হয়ে উঠেছিল একাকী সৈনিকের তলোয়ারের মত, এমনকি একটা পর্যায়ে তাঁকে ঘিরে অসম্ভব এক জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল সমর্থকেরা।
হাফসেঞ্চুরি করতে এই ডানহাতির লেগেছিল মোটে ২৩ বল, তবে এতটুকুতেই তুষ্ট হননি তিনি। উল্টো আরো আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন পরের সময়টাতে। হাফসেঞ্চুরির পর স্রেফ ১২টি ডেলিভারি মোকাবিলা করেই ৩৩ রান আদায় করেছিলেন – ২৮৮ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও ব্যাঙ্গালুরুকে বড় কোন পরাজয়ের স্বাদ পেতে হয়নি সেটার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব তাঁর পাওনা।
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির ছায়াতেই ছিলেন এই হার্ডহিটার। নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয়া ছাড়া কি-ই বা করার ছিল তখন; কিন্তু এখন করার অনেক কিছু আছে। তাই কঠোর পরিশ্রমের বদৌলতে নিজের ক্রিকেটীয় অধ্যায়ের উপসংহার নিজ হাতে লিখে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৯ সালে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছেন, খেলেছেন ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
সামনে আবারো অপেক্ষা আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের, এবার কি স্কোয়াডে সুযোগ পাবেন দীনেশ কার্তিক? উত্তরটা ভাল দিতে পারবেন, নির্বাচকরাই। তবে নিজের কাজে কোন কমতি রাখছেন না তিনি, আইপিএলে এখন পর্যন্ত ২০০ এর ওপর স্ট্রাইক রেটে ২২৬ রান করেছেন। এখন দেখার বিষয়, তাঁর ভাগ্যে আমেরিকা ও উইন্ডিজগামী বিমানের টিকিট আছে কি না।