ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) ২০২২ সালের আসর শেষ হলো মাত্রই। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ও জম জমাট ক্রিকেট লিগ। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত পারফর্মারদের পাশাপাশি এবার অনেক তরুন ক্রিকেটার-ও নিজেদের প্রমান করেছেন। বাইশ গজে দাপট দেখানো অনেকেই হয়তো নির্বাচকদের সুদৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সেরা একাদশ নির্বাচন করেছে খেলা ৭১। সেরাদের এই তালিকায় সংখ্যার পাশাপাশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ম্যাচ পরিস্থিতি এবং গুরুত্বপূর্ণ পারফরম্যান্স গুলোকে।
- এনামুল হক বিজয় (প্রাইম ব্যাংক)
এবারের ডিপিএলে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট যেন খোলা তরবারি হয়ে উঠেছিল। ১৫ ম্যাচে খেলে করেছেন ১১৩৮ রানের। দেশের ইতিহাসে কোন লিস্ট-এ ক্রিকেটের টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান তো বটেই, বিশ্বের কোন প্রান্তেই লিস্ট-এ ক্রিকেটের একটি আসরে এত রান করতে পারেনি কেউ-ই।
৯টি অর্ধশতকের পাশাপাশি এনামুল হাঁকিয়েছেন তিনটি শতক। পুরো টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমানভাবে দাপট দেখিয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের এই ওপেনার। মজার ব্যাপার, এবারের ডিপিএলে বল হাতেও দেখা গিয়েছে তাকে, এমনকি দুইটি উইকেটও পেয়েছেন।
- তামিম ইকবাল খান (প্রাইম ব্যাংক)
ডিপিএলের গ্রুপ পর্বে না খেললেও তামিম ইকবাল সুপার লিগে ৪টি ম্যাচ খেলেছিলেন প্রাইম ব্যাংকের হয়ে। এ চার ম্যাচে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে এসেছে দুইটি সেঞ্চুরি এবং একটি ৯০ রানের ইনিংস।
সব মিলিয়ে রান করেছেন ৩৪৪; গড়টা ১১৪! স্ট্রাইক রেট-ও প্রায় একই, ১১৩.৫৩। অবিশ্বাস্য এই পারফরম্যান্সের বদৌলতে তুলনামূলক কম ম্যাচ খেলা স্বত্তেও তামিমকে রাখতে হচ্ছে ডিপিএলের সেরা একাদশে।
- জাকির হাসান ( রূপগঞ্জ টাইগার্স)
মূলত ওপেনার হিসেবেই ডিপিএলে রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে খেলেছিলেন জাকির হাসান। তবে টিম কম্বিনেশনের কারনে সেরা একাদশে জাকির হাসানকে রাখতে হচ্ছে তিন নম্বর পজিশনে। এবারের মৌসুমে ১৫ ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
৪২ এর বেশি গড়ে ৬৩৬ রান করেছেন। তিনটি হাফসেঞ্চুরির পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেছেন দুইটি। তার এমন ফর্মের কারনেই নিজেদের অভিষেক আসরে সুপার লিগে কোয়ালিফাই করতে পেরেছিল রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব।
- নাঈম ইসলাম (লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ)
এনামুল বিজয়ের পর যার ব্যাটে সবচেয়ে বেশি রানফোয়ারা সৃষ্টি হয়েছিল তিনি নাঈম ইসলাম। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার এবার ডিপিএলে খেলেছেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে। সর্বমোট ১৫টি ম্যাচ খেলে পাঁচটি অর্ধশতক এবং দুইটি শতকের সাহায্যে নাঈম ইসলাম মোট ৮৫৯ রান করেছেন।
একটা সময় এক হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার সম্ভাবনা জাগালেও পরে সেটি পূরন করতে পারেননি। এছাড়া ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতি অফ স্পিন বোলিংয়ে টূর্নামেন্টে মোট ১১ উইকেট শিকার করেছেন নাঈম।
- মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (আবাহনী লিমিটেড)
জাতীয় দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম ধারাবাহিক পারফর্মার মোসাদ্দেক সৈকত। সদ্য সমাপ্ত ডিপিএলেও নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন আবাহনীর হয়ে খেলা সৈকত। কোন সেঞ্চুরি করতে না পারলেও সাতটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলা মোসাদ্দেক প্রায় একা হাতেই সামলেছিলেন আবাহনীর মিডল অর্ডার।
৬৫৮ রান করে হয়েছেন টূর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। এছাড়া সৈকত বল হাতে ১৬ উইকেট নিয়ে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হিসেবেই নিজেকে প্রমান করেছেন। গত মৌসুমের পাশাপাশি এবারও আবাহনীর অধিনায়কত্ব করা মোসাদ্দেক সৈকত আছেন সেরা একাদশের অধিনায়ক হিসেবে।
- চিরাগ জানি (লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ)
একাদশের একমাত্র বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে দলে আছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার চিরাগ জানি। ব্যাটিং কিংবা বোলিং দুই বিভাগেই নিজ দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে বেশ ভাল সেবা দিয়েছেন তিনি৷ ব্যাট হাতে প্রায় ৫০০ এর মত রান করা চিরাগ বল হাতেও নিয়েছেন ২৭ উইকেট। এছাড়া ব্যাটিংয়ের স্ট্রাইক রেট এবং বোলিংয়ের ইকোনমি’র দিক দিয়েও সেরাদের একজন চিরাগ জানি।
- নুরুল হাসান সোহান (শেখ জামাল ধানমন্ডী ক্লাব)
তামিম ইকবালের মতই কম ম্যাচ খেলেই একাদশে জায়গা পাওয়া আরেক ক্রিকেটার নুরুল হাসান সোহান। তবে মাত্র আট ম্যাচ খেলেই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের শিরোপা জয়ে বড় ভুমিকা রেখেছেন সোহান।
বিশেষ করে সুপার লিগে দলের বিপর্যয়ের সময় ৭৩, ১৩২*, ৭১ এবং ৮১* রানের ইনিংস খেলা সোহানকে তাই রাখতেই হচ্ছে সেরাদের এই একাদশে। সব মিলিয়ে আট ম্যাচে সোহান করেছেন ৪টি ফিফটি এবং ১টি সেঞ্চুরি, মোট রান ৪৮৩। বলা বাহুল্য, খেলা-৭১ এর নির্বাচন করা সেরা একাদশের উইকেট কিপিং করবেন দেশসেরা এই উইকেট কিপার।
- মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (আবাহনী লিমিটেড)
ইনজুরি থেকে ফেরা সাইফউদ্দিনের জন্য এবারের ডিপিএল ছিল প্রমানের মঞ্চ-ও। আর নিজেকে প্রমানের ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ সফল এই বোলিং অলরাউন্ডার। টূর্নামেন্টের শুরুতে একটু পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেরা উইকেট শিকারীর তালিকায় পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছেন সাইফ।
বল হাতে বাইশ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও নিজের দল আবাহনীর লোয়ার মিডল অর্ডারে ভরসা যোগ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। ১১ ইনিংস খেলে সাইফের মোট রান ২৭০। তাছাড়া ১১২ স্ট্রাইক রেটের পাশাপাশি তার ব্যাটিং গড়টা ৬৭.৫০।
- রাকিবুল হাসান (প্রাইম ব্যাংক)
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য রাকিবুল হাসান এবারের ডিপিএলে খেলেছেন প্রাইম ব্যাংকের হয়ে। সেরা উইকেট শিকারীর তালিকায় সবচেয়ে উপরে থাকা এই বাঁহাতি স্পিনারের সেরা একাদশে জায়গা পাওয়া তাই স্বাভাবিক বটে। পুরো টুর্নামেন্টে মোট ২৯টি উইকেট শিকার করেছেন রাকিবুল, এছাড়া ৪.২৭ ইকোনমিতে বোলিং করে প্রতিপক্ষের রান আটকানোর কাজটাও বেশ ভালোভাবেই করেছেন তিনি।
- তানভীর ইসলাম (আবাহনী লিমিটেড)
সংখ্যার বিচারে নাসুম আহমেদ এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও দলে আরেক বাঁহাতি রাকিবুল হাসান থাকায় নাসুম’কে তাই বাদ দিতে হয়েছে। তার পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন ডান হাতি স্পিনার তানভীর আহমেদ। আবাহনী লিমিটেডের এই তরুন স্পিনার এবারের ডিপিএলে সর্বোমোট ২২ উইকেট শিকার করে উইকেট শিকারীর তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন৷ এছাড়া ইকোনমিক্যাল বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করার কাজেও নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি।
- মাসুম খান টুটুল (খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি)
সেরা একাদশে একমাত্র স্পেশালিষ্ট ফাস্ট বোলার হিসেবে আছেন মাসুম খান টুটুল। খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি’র এই পেসার সুপার লিগে খেলতে না পারলেও গ্রুপ পর্বে ছিলেন দারুন ছন্দে। উইকেটের হিসেবে ফাস্ট বোলারদের মাঝে সাইফুদ্দিন এবং চিরাগ জানি’র পরেই আছেন তিনি। বারো ম্যাচে পাঁচের কম ইকোনমিতে তুলে নিয়েছেন বিশ উইকেট। সুপার লিগের পাঁচটি ম্যাচ খেলতে পারলে হয়তো আরো কয়েকটি উইকেট নিজের ঝুলিতে নিতে পারতেন মাসুম।
- পারভেজ রসুল (শেখ জামাল ধানমন্ডী ক্লাব)
দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন পারভেজ রাসূল। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের শিরোপা জয়ের পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন কাশ্মীরের এই ক্রিকেটার। বল হাতে ২৮ উইকেটের পাশাপাশি কিপটে বোলিংয়েও নজর কেড়েছেন তিনি। ওভার প্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৩.১৬ রান। এছাড়া ব্যাট হাতে ২৯০ রান করেছেন এই অলরাউন্ডার।