ভারতীয় ক্রিকেটে ঔদ্ধত্য বাসা বেঁধেছে— এমনটাই মনে করেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি পেসার অ্যান্ডি রবার্টস। মূলত বিশ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ওভালের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভরাডুবির পরই এমন সব সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। শুধু অ্যান্ডি রবার্টসের মতো ভিনদেশিরা নয়, ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররাই রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছেন দলকে।
এমন সমালোচনার স্রোতে তাই রাহুল দ্রাবিড়-রোহিত শর্মা যুগলবন্দী কতদূর ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে বাঁধছে শঙ্কা। আলোচনাও হচ্ছে প্রবল। রাহুল দ্রাবিড় কি আদৌ ভারতীয় দলের ডাগ আউট সামলানোর জন্য দক্ষ কেউ? প্রশ্নটা একেবারে অবান্তর নয়। এমনকি শেষ ১১ বছর ভারতের শিরোপা খরা ঘুচানোর যাত্রা ব্যর্থ হওয়ার কারণেও নয়।
প্রশ্নটা হচ্ছে, ভারতীয় দলের হারের ধরণ নিয়ে। ২০৯ রানের ব্যবধান! কত বড় ব্যবধানে হেরেছে, তার জন্য বোধহয় আঙ্কিক বিশ্লেষণে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
শুধু সেটি নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারতীয় এ দলটা ছিল বিবর্ণ। সেমির টিকিট ঠিকই পেয়েছিল ভারত। কিন্তু সেবার বিশ্বকাপ মিশন ভারতের জন্য মোটেই তৃপ্তকর কিছু ছিল না।
ভারতের এমন অতৃপ্ততা অবশ্য ধোনি যুগের পর থেকেই। বরাবরই ফেবারিট তকমা নিয়ে বৈশ্বিক আসরগুলোতে পা রেখেছে দলটা। কিন্তু সেই ঔদ্ধত্যের ঠিকঠাক প্রমাণ মেলেনি মাঠে। তাই ২০১৩ এর পরে আর কোনো আইসিসির শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি ভারত।
এই শতাব্দীতে ভারতীয় দলকে নেতৃত্বের মুনশিয়ানায় সর্বপ্রথম টেনে তুলেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ক্রিকেট মানচিত্রে ভারত তখন মোটেই বড় কোনো দল নয়। কিন্তু সেই ভারতকেই বড় দল হিসেবে গড়ে তোলার কাজটা করেছেন গাঙ্গুলি।
শ্রীলঙ্কার সাথে যুগ্মভাবে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতেছিলেন। বিশ্বকাপ জেতারও খুব কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু অজিদের প্রতাপে ২০০৩ বিশ্বকাপ আর ছুঁয়ে দেখা হয়নি ভারতের।
তবে বিদেশে মাটিতে গাঙ্গুলির ঐ দলটা চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহসটা সঞ্চার করেছিল। গাঙ্গুলির পরে ভারতের সেই সাফল্য যাত্রাটা আরেকটু পরিণত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এক ধোনির ছোঁয়াতেই আইসিসির সব শিরোপা জিতেছে ভারত।
২০০৭ এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা দিয়ে শুরু। এরপর ২০১১ সালে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়। ধোনির শিরোপা সফলতায় ভারত ততদিনে বড় দল ছাপিয়ে ভয়ংকর দল হয়ে উঠেছে।
কিন্তু ধোনি অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরই যেন সেই সাম্রাজ্য উড়ে গেল। শেষ ১১ বছরে বিরাট কোহলি, রোহিতকে দিয়েও ভারত ঘরে আনতে পারেনি একটি শিরোপাও। কোচ হিসেবে রবি শাস্ত্রী এসেছেন। প্রস্থানও হয়েছে। এরপর ডাগআউটে রাহুল দ্রাবিড় এসেছেন।
কিন্তু, কেউই ভাগ্যের বাঁকবদল ঘটাতে পারেননি। বিরাট-শাস্ত্রী, রোহিত-রাহুল কোনো যুগলবন্দীই ভারতকে শিরোপা এনে দিতে পারেনি। ব্যর্থতার পাল্লা তাই বছরের পরিক্রমায় ভারিই হচ্ছে। মাস তিনেক পরেই ওয়ানডে বিশ্বকাপ। রাহুল দ্রাবিড়-রোহিত শর্মা হয়তো আরেকটা লাইফ লাইন পাচ্ছেন।
শেষবার যখন ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল, তখন বিশ্বকাপটা হয়েছিল ঘরের মাটিতে। এবার সেই আয়োজনের পুনরাবৃত্তি। একই ভাবে ভারতের সেই শিরোপা জয়ের মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি এবার হবে কি? সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়া রোহিত-রাহুল কি সময়ের ব্যবধানে প্রশংসার জোয়ারে কখনো ভাসবেন? এ সব কিছুই বলে দিবে সময়।