এনিগমা…

কারসান ঘাউরিকে নিয়ে লড়ে যাওয়া বিশ্বনাথ, ঈশান্তকে নিয়ে লড়ে যাওয়া ভিভিএস কিংবা ঋদ্ধিকে নিয়ে লড়ে যাওয়া বিরাট – আজ সবাই ‘সঞ্জয়’শৈলীর শরণাগত; প্রশান্ত মহাসাগরের ওপার থেকে যেন শোনা যাচ্ছে তাদের অভিবাদন – ‘ওয়েল ডান ঋষভ। ওয়েল ডান ঋষভ এনিগম্যাটিক পান্ত।’

দু’পায়ে ভর দিয়ে শক্ত ব্যাকফুট আর ডাউন দ্য পিচ বরাবর কিছুটা আগু পিছু; তাতেই লাল উইকেটের চারিদিকে বেড়ার মতো আগলে থাকা লেগ গালি, শর্ট লেগ, সিলি মিড অফ আর সিলি পয়েন্টের ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়া এক একটা ড্রাইভ, ঠিক যেন ঘূড়ন্ত পাখার ব্লেডে লেগে ছিটকে যাওয়া কাগজের বল।

এটাকে কি বলবেন? – অ্যাগ্রেশন? – কিছুটা তো বটেই। ইনসাইট? – কিছুটা তো বটেই। নাকি নতুন বলে হ্যাজ-মিচ-প্যাটের সাঁড়াশি আক্রমণের আগেই সেঞ্চুরি করে অজিদের মানসিক ধৈর্যচ্যুতি করবার ক্রিকেট মস্তিষ্কের ক্ষুর? – সেটাও কিছুটা তো বটেই।

অবশেষে সঠিক শব্দটি চয়ন করে গেলেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, ধারাভাষ্যে বসে – এনিগমা, অর্থাৎ যাকে ব্যাখ্যা করা কঠিন কিংবা অতি অসম্ভব। আমার আপনার মাথায় যখন নব্বইয়ের কোটায় দাঁড়ানো ঋষভের যাহোক করে ঠিকিয়ে ঠিকিয়ে একশো পার করবার বাসনা, ঋষভের মাথায় তখন চলছিল অন্যকিছু।

সেটা আরো বেশি করে প্রকট হল লাঞ্চ ব্রেকের পর। নতুন বল নেওয়ার তখন প্রায় আট ওভার বাকি। টিম পেইন বল করিয়ে যাচ্ছেন ক্রিস গ্রিন আর নাথান লিওঁকে দিয়ে। গ্রিন যখন বল করছেন, তখন থার্ড ম্যান নেই। ঋষভ লক্ষ্য করেছিলেন সেটি। ল্যাটা হাতি ঋষভকে তখন ঘিরে ধরেছে অফের জাল। ঋষভ পড়ে ফেলতে পেরেছিলেন অজিদের পরিকল্পনাটা।

গ্রিনকে দিয়ে সফট বলে এই আট ওভার শর্ট ওয়াইড বল করানো আর লিওঁকে দিয়ে হালকা ফ্লাইট দেওয়া। যাতে লোলুপ হয়ে অফের ট্র‍্যাপে ধরা পড়ে যান পন্থ।সেটা যদি নাও হয় টিম পেইন, হ্যাজেলউড-মিশে-প্যাটকে তৈরি রেখেছিলেন নতুন বলে সাঁড়াশি আক্রমণের জন্য। কিন্তু যে ভুলটা পেইন করেছিলেন সেটা হলো গ্রিনের ওভারে থার্ডম্যান না রেখে।

তাই অজিদেরকে দ্রুত পড়ে ফেলা চেতেশ্বর-পান্তের মাথায় চললো কাউন্টার প্ল্যান। ৭৫ থেকে ৯০-এ পান্ত পৌঁছালেন স্রেফ পিটিয়ে। শটগুলো খুব বুদ্ধি করে খেলছিলেন ঋষভ। কারণ যদি ব্যাটের এজেও লাগে, তাতে কি, থার্ড ম্যান তো নেই। পরপর দুটো চার খাবার পর পেইন অবশেষে থার্ড ম্যানে ফিল্ডার রাখলেন।

তাতেও বা কি! লিওঁকে মিড অন আর গ্রিনকে মাঝেমাঝে মিড অফের পথ দেখানো হলো। লিওঁর যে বলটিতে আউট হলেন ঋষভ, সে বলেও অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিলো কারণ লিওঁর ওভারটাই পুরোনো বলের লাস্ট ওভার। শুধু বলটা পড়ল দুই মিলিমিটার ওয়াইডার আর দুই মিলিমিটার বেশি উচ্চতায়।

লিওঁকে একটা ক্ল্যাপ দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে – ব্রিলিয়ান্ট। সাত বছর আগে অ্যাডিলেড টেস্টের ফোর্থ ইনিংসেও ৩৬৪ এর টার্গেটে ধেয়ে চলা বিরাটকে শর্ট টপ স্পিনে থামিয়েছিলেন এই নাথান লিওঁই।

কূপমণ্ডূকতার স্তুপে দাঁড়িয়ে পান্তের দিকে নিক্ষিপ্ত ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’, ‘আনাড়ি’, ‘ফাটকা’ – ইত্যাদি শব্দবানগুলির ফাঁকে কনভেনশনাল কমেন্ট্রির যাদুময়ী ব্যাখ্যায় হয়ত বানভেদী দৃঢ় সঠিকতম শব্দটি চয়ন করে গেলেন সঞ্জয় মঞ্জরেকার -এনিগমা। একটা অগমেন্টিন আর একটা ইনজুরড্ কনুইয়ে ভর করে ঋষভপ্রসূত সাতানব্বই রানকে আদৌ ব্যাখ্যা করা যায় কি? ঠিক গত দুবছর ধরে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের কোটায় আটকে যাওয়া ঋষভের মতো এটাও যে এনিগমেটিক।

কারসান ঘাউরিকে নিয়ে লড়ে যাওয়া বিশ্বনাথ, ঈশান্তকে নিয়ে লড়ে যাওয়া ভিভিএস কিংবা ঋদ্ধিকে নিয়ে লড়ে যাওয়া বিরাট – আজ সবাই ‘সঞ্জয়’শৈলীর শরণাগত; প্রশান্ত মহাসাগরের ওপার থেকে যেন শোনা যাচ্ছে তাদের অভিবাদন – ‘ওয়েল ডান ঋষভ। ওয়েল ডান ঋষভ এনিগম্যাটিক পান্ত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link