টেন হ্যাগ, কি চেয়ে কি পেলেন!

আশ্বাস পেয়েই আয়াক্স ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসেন তিনি। আসার আগে এরিক টেন হ্যাগকে বলা হয়েছিল দলবদলের বাজারে তাকে যথেষ্ট সমর্থনই দেওয়া হবে। তবে বর্তমান চিত্রটা একদম ভিন্ন, ক্লাবের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং স্পোর্টিং ডাইরেক্টর ব্যর্থ হয়েছেন টেন হ্যাগের পছন্দের খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে। দলবদলের বাজার এবং খেলার মাঠ দুই ক্ষেত্রেই রেড ডেভিলদের করুণ অবস্থা টাক মাথার এই ডাচ ম্যানেজারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, চিন্তা একটাই – চাকরিটা বুঝি এবার গেল!

এই গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে এরিক টেন হ্যাগকে তাঁর পছন্দের ৫ জন খেলোয়াড় কিনে দেওয়া হবে – এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও সেন্টার ব্যাক লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, লেফট ব্যাক টাইরেল মালাসিয়া এবং ফ্রি ট্রান্সফার হিসেবে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ছাড়া আর কাউকে দলে ভেড়াতে পারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। হ্যাঁ, সর্বশেষ তালিকায় যোগ হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে আসা ক্যাসেমিরোর নামও। 

পগবা, মাটিচ, কাভানি, মাটা সহ অনেক ফুটবলারই এই গ্রীষ্মে রেড ডেভিলদের ছেড়ে চলে গিয়েছে ফলে খেলোয়াড়দের ওয়েজ বিলে বেশ কিছুটা জায়গা এখন ফাঁকা। টেন হ্যাগকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একজন হাই প্রোফাইল ফুটবলার সহ ৫ জন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে তাই কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয় কিন্ত এক্ষেত্রে দলটির ট্রান্সফার কমিটি ব্যর্থতা চোখে পরার মত। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, যাকে টেন হ্যাগ নিজের এক নম্বর টার্গেট হিসেবে বিবেচনা করছিলেন, তাঁর সাথে প্রায় ১৪ সপ্তাহ ধরে আলাপ আলোচনা করেও এই দলবদলটি সম্পন্ন করতে পারেনি ক্লাবটির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড আর্নল্ড এবং স্পোর্টিং ডিরেক্টর জন মার্তো। 

কিছুদিন আগে রেড ডেভিলরা অফিসিয়ালি ডি ইয়ংয়ের ট্রান্সফার বিডটি ফিরিয়ে নেয় আর এর সাথেই শেষ হয় এই ট্রান্সফার সাগা। গুজব শোনা যাচ্ছে এই ডাচ ফুটবলার চেলসিতে আসতে পারেন, এই চুক্তি সম্পন্ন হলে রেড ডেভিলদের জন্য তা খুবই দু:খজনক হবে আর তা আবারো ইউনাইটেডের ট্র্যান্সফার কমিটির অক্ষমতা প্রমান করবে।

ডি ইয়ংয়ের পর ইউভেন্তাস মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান রাবিওটের সাথে এখনো চুক্তি করতে ব্যর্থ হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সাধারণত অফিসিয়ালি ট্রান্সফার বিড করার আগে খেলয়ারদেরদের এজেন্টের সাথে ব্যক্তিগত শর্তাবলির ব্যাপারে একমত হয়ে নেয় ক্লাবগুলো। রাবিওটের মা ভেরনিক রাবিওট যিনি তার ছেলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তার সাথে বেতনের অংক নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে এই চুক্তিটিও সম্পন্ন হবে না।

এছাড়া ব্রাইটনের কাইসেদোর ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ক্লাবটি সাফ জানিয়ে দেয় তাকে বিক্রি করা হবে না। উলভসের মিডফিল্ডার রুবেন নেভেসের ব্যাপারেও রেড ডেভিলরা আগ্রহী।

তবে, ডি ইয়ং চেয়ে সম্পূর্ণ আলদা ধাঁচের ফুটবলার। ডি ইয়ং যেখানে টেন হ্যাগের পজেসনাল ফুটবলের বিল্ডআপের ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করতেন, সেখানে ক্যাসেমিরো একজন ডেসট্রয়ার যার কাজ একদম বিপরীত। ট্রান্সফার প্ল্যান বা টার্গেট বাদ দিয়ে দলবদলের বাজারে এখন যাকে পাচ্ছে তাকেই দলে নেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

স্টাইকার হিসেবে ডারউইন নুনেজকে চেয়েছিলেন টেন হ্যাগ। তবে ইউনাইটেড বোর্ডের ঢিলেমির কারণে লিভারপুলের কাছে তাকে হারাতে হয়। এরপর আয়াক্সের অ্যান্থনির পেছনে ঘুরলেও ডাচ ক্লাবটি পরিস্কার জানিয়ে দেয় এই দলবদলের বাজারে মার্টিনেজ অথবা অ্যান্থনির মধ্যে শুধু একজনকেই তারা এই বিক্রি করবে। 

এরপর রেড ডেভিলরা যাকে পেয়েছে তাকেই দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছে। আর্নাটোভিচ, সেস্কো, কালাইজিচ, মোরাতা সকলের সাথেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যোগাযোগ করেছে এবং কোন না কোন কারণে চুক্তি সম্পন্ন করা থেকে বিরত থেকেছে। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের স্টাইকার মাথেয়াস কুনহা এবং পিএসভির উইঙ্গার কোডি গ্যাকপোকে দলে ভেড়াতে চায় রেড ডেভিলরা এছাড়া ধারে চেলসির ফুটবলার পুলিসিচকে আনার ব্যাপারেও কথা বার্তা চলছে।

অপরদিকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের আরেক ফরওয়ার্ড জাও ফেলিক্সের ব্যাপারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আগ্রহ দেখালেও স্প্যানিশ ক্লাবটি সাফ জানিয়ে দেয় তারা তাকে বিক্রি করবে না। এছাড়া ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ট্রান্সফার নাটক তো বোনাস হিসেবে আছেই।

সর্বশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধমে তিনি জানিয়েছেন আগামী দুই সপ্তাহ পর তিনি প্রেস কনফারেন্সে এসে সব খোলাসা করবেন। তার দাবি গণমাধ্যমে তার ব্যাপার যে সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে যার মাত্র পাঁচ ভাগ সত্যি আর বাকি সব মিথ্যা এবং তিনি তা নিজের নোটবুকে টুকে রাখছেন। রক্ষণে নতুন রাইট ব্যাক খুঁজছেন টেন হ্যাগ, অ্যারন ওয়ান বিসাকাকে বিক্রি করে দিতে চান তিনি কারণ এই রাইট ব্যাকের খেলার ধরণ তার সিস্টেমের সাথে মানাসই না। 

টেন হ্যাগ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেওয়ার পর সবাই ভেবেছিল ক্লপ কিংবা গার্দিওলা যেমন নিজেদের সিস্টেমের উপযোগী খেলোয়াড় দিয়ে দল সাজিয়েছেন তিনিও তাই করবেন। তবে ইউনাইটেডের ট্রান্সফার কমিটির ব্যর্থতার কারণে পরিকল্পনা নামক বস্তুটিকে আপাতত দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। দলবদলের বাজারে যাকে পাওয়া যাচ্ছে তাকে দিয়েই কাজ চালাতে হবে তার। তা ইতোমধ্যে তিনি বুঝে গিয়েছেন , হোক সেই খেলোয়াড় তাঁর সিস্টেম পরিপন্থী। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link