একটা ধুম্রজালের মায়া কাটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল পেয়ে গেছে তাদের নতুন কোচ। ঠিক নতুন না। পরিচয়টা অবশ্য আগেই হয়ে গেছে। একটা লম্বা সময় চন্ডিকা হাতুরুসিংহে ছিলেন টাইগার ক্রিকেটের বস। তিনিই আবার ফিরছেন। তবে তাঁর এই ফেরাটা নতুন করে নানান সব প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু দেশ বরেণ্য কোচ, সবাই একটা শঙ্কার কথা জানান দিচ্ছে। সবার মনেই চাপা এক উৎকণ্ঠা। কেননা চান্ডিকার বিদায় বেলায় দেশের ক্রিকেটের আবহাওয়া খুব একটা স্বচ্ছ ছিল না। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে, গুমট এক আবহাওয়ার মাঝেই প্রস্থান ঘটেছিল হাতুরুসিংহের। সেই তিনিই যখন আবার কোচ হয়ে এসেছেন তখন শঙ্কা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা স্বাভাবিক।
তবে দেশের অন্যতম সেরা কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম যেন খানিকটা আশার বার্তাই শোনাতে চাইলেন। বাস্তবতার করুণ সুর তাঁর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগে এখন ভালো কোচ পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। যারা ভালো, একনামে জানি-চিনি বা যাদের চাই—তারা হয়তো খুব ব্যয়বহুল হবেন বা রাজিই হবেন না দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে। বিসিবির হাতে হয়তো বেছে নেওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না।’
ফ্রাঞ্চাইজির এই দুনিয়ায় সত্যিকার অর্থেই ভাল মানের কোচ দুষ্প্রাপ্য। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ভারতীয় শ্রীধরন শ্রীরামের নামটা বেশ জোরেসোরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু তাঁর সাথেও বণিবনা হয়নি ঠিকঠাক। কেননা তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সময় থাকবেন ব্যস্ত। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড লম্বা সময়ের জন্যে কাওকে খুঁজছিলেন। সেদিক বিবেচনায় হাতুরু বেশ ভাল পছন্দ, তেমনটাই মত দিয়েছেন ফাহিম।
তিনি বলেন, ‘সেদিক দিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সহজ পছন্দ। কারণ, তিনি আমাদের এখানে কাজ করে গেছেন, তাঁর সময়ে আমরা কিছু সাফল্যও পেয়েছি।’ তাঁর সময়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান ঘটে ওয়ানডে ক্রিকেটে। তিনি ঘরের মাঠে টাইগারদের পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটের জন্যে রীতিমত শক্ত দলে পরিণত করেন।
তবে বেশ জোর গুঞ্জন ছিল দলে থাকা সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাথে বৈরিতা ছিল চান্ডিকার। ঠিক সে কারণেই প্রস্থান ঘটেছিল তাঁর। সেই তিনিই যখন আবার ফিরে আসবেন তখন দলের অন্দরমহলের পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে সংশয় হওয়াও ভীষণ স্বাভাবিক। তবে দেশের বহু ক্রিকেটারদের আস্থাভাজন কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম স্যার নতুন কিছুর আশাই ব্যক্ত করেছেন।
তাঁর মতে হাতুরুসিংহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংস্কৃতিটা বোঝেন। তিনি দেশের ক্রিকেটের সাথে বেশ ভালভাবেই পরিচিত। এমন একজনের কাছ থেকে প্রত্যাশার মাত্রাটা একটু বেশিই থাকে। সেটার ব্যত্যয় ঘটছে না এবার। তিনি বলেন, ‘হাথুরুসিংহে অভিজ্ঞ, উপমহাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে তাঁর ধারণা আছে। বাংলাদেশ সম্পর্কেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় এখন নিশ্চয়ই তিনি কোচ হিসেবে আরও পরিণত হবেন। নতুন কিছুই তাঁর কাছ থেকে আশা করব। তবে আমাদের প্রত্যাশা কিন্তু আগের মতো নেই। এটা অনেক বেশি এখন। সেটির সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেবেন, সেটিই চ্যালেঞ্জ হবে হাথুরুসিংহের জন্য।’
হাতুরুসিংহে তাঁর নতুন মেয়াদে ঠিক কেমন করবে সে প্রশ্নের উত্তর সময় বলে দেবে। তবে নতুন করে তিনি বসছেন বাংলার ক্রিকেটের কোচের গদিতে। জায়গাটা বেশ ঝুকিপূর্ণ। যেকোন সময় সমালোচনার তীব্র আগুনে পুড়ে যেতে পারে সবকিছু। সেটা নিশ্চয়ই তিনি জানেন।