গতিশীল স্পিনার আখ্যান

বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উত্থানের ফলে গত দুই দশকে ক্রিকেট খেলাটি বেশ খানিকটা রূপ বদলেছে৷ বর্তমানে ক্রিকেটটা হয়ে গেছে ব্যাটসম্যানদের খেলা। এখন ব্যাটসম্যানরা আরও বেশি নির্ভীক ব্যাটিং করছেন৷ ম্যাচের শুরু থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলছেন। তাই বোলাররাও তাদের বোলিংয়ে নানা বৈচিত্র্য আনতে বাধ্য হচ্ছেন।

এই যেমন, ফাস্ট বোলাররা নিজেদের সুবিধার্থে গতি ও সুইংয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে বলের গতি কমিয়ে ব্যাটসম্যানদের চমকে দেওয়ার কায়দাও রপ্ত করছেন। এদিকে স্পিনাররা ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করতে স্বাভাবিক গতির চেয়ে বেশি গতিতে বল করার একটা প্রয়াস চালাচ্ছেন। তাছাড়া ক্রিকেটবিশ্ব ইতোমধ্যে এমন কয়েকজন স্পিনারকেও দেখে ফেলেছে যারা স্বভাবতই দ্রুত গতিতে বল করতে পারেন। চলুন, দ্রুত গতির সেই স্পিনারদের সাথে পরিচিত হওয়া যাক আজ।

  • শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

একসময় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে উচ্চারিত হওয়া নামটা শহীদ আফ্রিদি। তবে লম্বা ইনিংস খেলার ক্ষমতা তিনি অকালেই হারিয়ে বসেন এবং ব্যাট হাতে হয়ে যান অধারাবাহিক। তারপরেও একটা দীর্ঘ সময় ধরে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি যার মূলে রয়েছে তাঁর অলরাউন্ড দক্ষতা।

মিতব্যয়ী ও উইকেটশিকারি বোলার হিসেবে বছরের পর বছর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন আফ্রিদি। তিনি সাধারণত জোরের ওপর বল করতেন যাতে ব্যাটসম্যানরা তাঁর বিপক্ষে আক্রমণাত্মক কৌশলে খেলতে না পারেন। এমনকি ঘণ্টায় ১৩৪ কিলোমিটার বেগেও বল করেছেন তিনি যা যেকোনো স্পিনারের ক্ষেত্রে দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ডটি দখল করে আছে।

  • অনিল কুম্বলে (ভারত)

একজন কিংবদন্তি স্পিনার যিনি দীর্ঘ ১৮ বছর বাইশ গজে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। নিজের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিতে পারদর্শী ছিলেন তিনি। সেইসাথে জোরে বল করতে পারায় মারাত্মক স্পিনার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর।

খেলোয়াড়ি জীবনে ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে নিয়মিতই বল করতেন কুম্বলে। স্পিডোমিটারে রেকর্ড হওয়া তাঁর ক্যারিয়ারের দ্রুততম বলটির গতি ১১৮ কি.মি./ঘণ্টা। এমনকি একজন ফাস্ট বোলারের মতো ইয়র্কারও করতে পারতেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা এই ভারতীয় লেগি।

  • ভগবত চন্দ্রশেখর (ভারত)

একটা সময় ছিল যখন কিংবদন্তি লেগ স্পিনার ভগবক চন্দ্রশেখরকে বিশ্বের দ্রুততম স্পিনার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে স্যার ভিভ রিচার্ডসকে চারবারের দেখায় তিনবার আউট করে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন চন্দ্রশেখর। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের স্মরণীয় পারফরম্যান্সটি ঘটে ১৯৭১ সালে।

ওভালে ৩৮ রানে ৬ উইকেট তুলে নেওয়ার ওই স্পেলটি ভারতকে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়ের স্বাদ আস্বাদনে সাহায্য করে। শুধু তা-ই নয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের প্রথম জয়ের কারিগরও ছিলেন এই চন্দ্রশেখর। ১৯৭৮ সালে মেলবোর্নে ১০৪ রানের বিনিময়ে ১২ উইকেট সংগ্রহ করে দলের সে জয়ে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন।

  • অজন্তা মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)

ভারতীয় ক্রিকেট অনুরাগীদের জন্য  রহস্য স্পিনার নামে পরিচিত অজন্তা মেন্ডিসকে ভোলাটা বেশ কষ্টসাধ্য। ২০০৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে এক দুঃস্বপ্ন হয়ে তিনি হাজির হন ভারতের ব্যাটসম্যানদের সামনে। মাত্র ১৩ রান খরচায় ৬ উইকেট তুলে নিয়ে একাই শিরোপা জেতান শ্রীলঙ্কাকে।

মেন্ডিস ছিলেন এমন একজন বোলার যিনি ক্যারম বল, লেগ স্পিন ও টপ স্পিন দিয়ে ব্যাটসম্যানদের নিয়মিত কঠিন পরীক্ষা নিতেন। তাছাড়া স্বাভাবিক স্পিনারদের চেয়ে বেশি গতিতে বল করতে পারায় ব্যাটসম্যানরা শট খেলার জন্য খুব কমই সময় পেতেন। ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে মেন্ডিসের দ্রুত গতির বোলিংয়ের বিপক্ষে উইকেট থেকে বেরিয়ে শট খেলাটা প্রায় অসম্ভব ছিল বলা চলে।

  • মারলন স্যামুয়েলস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

খণ্ডকালীন অফ স্পিনার হলেও মারলন স্যামুয়েলসের বোলিং দক্ষতা তাঁকে বছরের পর বছর একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তুলেছে। তিনি এমন একটা গতিতে বল করতে পারেন যা অন্যান্য স্পিনারদের চেয়ে তাকে আলাদা করে।

২০১০ এর শুরুর দিকে স্যামুয়েলসের দ্রুতগতির ইয়র্কার বহু ব্যাটসম্যানকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য ২০১৩ সালে তাঁর দ্রুতগতির ডেলিভারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আইসিসি। একই কারণে ২০১৫ সালে এক বছরের জন্য বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link