বাংলাদেশের অবিসংবাদিত স্পিন কিংবদন্তি

২০০১ সালে খুলনা বিভাগের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক। জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম আসরেই দলকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন রাজ্জাক। সেখান থেকে উঠে আসেন এ দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ নজরকাঁড়া পারফরম করছিলেন। মোহাম্মদ রফিক তখন স্পিন বিভাগের কান্ডারি, সাথে তরুণ এনামুল হক জুনিয়রের উত্থান। এর মাঝে ঘরোয়া ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দিলেন রাজ্জাক।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকেই বাঁ-হাতি স্পিনারদের দাপট। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে বাঁ-হাতি স্পিন ব্যাপারটা ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। যুগে যুগে বহু বাঁ-হাতি স্পিনার জাতীয় দলে এসেছেন, অনেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন। বাঁ-হাতি ক্রিকেটারদের আতুরঘর বললে মোটেও ভুল হবে না। এদের মধ্যে বিশ্ব দরবারে সেরাদের কাতারে যেতে পেরেছেন দু’জন; একজন সাকিব আল হাসান, আরেকজন আব্দুর রাজ্জাক।

এনামুল হক জুনিয়র, মোহাম্মদ রফিকদের শেষে আব্দুর রাজ্জাক, সাকিবদের শুরু। যতদিন খেলেছেন রঙিন পোশাকে ছিলেন দলের নিয়মিত মুখ।

২০০১ সালে খুলনা বিভাগের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক। জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম আসরেই দলকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন রাজ্জাক। সেখান থেকে উঠে আসেন এ দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ নজরকাঁড়া পারফর্ম  করছিলেন। মোহাম্মদ রফিক তখন স্পিন বিভাগের কাণ্ডারি, সাথে তরুণ এনামুল হক জুনিয়রের উত্থান। এর মাঝে ঘরোয়া ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দিলেন রাজ্জাক।

বছর কয়েকের মধ্যে জাতীয় দলে অভিষেক। ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলা শুরু। এই ওয়ানডে দিয়েই বনে গেছেন অন্যতম সেরাদের একজন। এই ফরম্যাটকে আপন করে ২২ গজে ছুঁটে বেড়িয়েছেন প্রায় এক যুগ। বাঁ-হাতি স্পিনে নিজের নাম লিখিয়েছেন সেরাদের তালিকায়।

২০০৪ এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিপক্ষে অভিষেক। আর অভিষেকেই তিন উইকেট শিকার করে জাতীয় দলের জার্সিতে শুরুটা করলেন রঙিন। স্কোয়াডে থাকলেও দলে তখনও নিয়মিত মুখ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। স্পিনার হিসেবে তখন দলের প্রথম পছন্দ মোহাম্মদ রফিক।

২০০৬ এর এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। তবে সাদা পোশাকে অভিষেকটা বল হাতে রাঙাতে পারেননি তিনি। ছিলেন উইকেটশূন্য। এরপর বাদ পড়লেন, বছর খানেক ছিলেন টেস্ট দলের বাইরে। মাঝে টি-টোয়েন্টিতেও যাত্রা শুরু। রঙিন পোশাকে নিজের জায়গাটা তখন অনেকটাই পাঁকা করে ফেলেছেন রাজ্জাক।

বছর খানেক বাদে শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে আবার ফিরলেন টেস্ট দলে। এরপর ২০০৮ সালের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টেস্টে সুযোগ পেলেন। ওই সিরিজেই সাদা পোশাকে তিন উইকেট নেন রাজ্জাক। কিন্তু, প্রশ্ন উঠে রাজ্জাকের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে।

অক্টোবর, ২০০৮। আম্পায়ার ড্যারেল হার্পার ও অশোক ডি সিলভা রাজ্জাকের বোলিং অ্যাকশন সন্দেহ হওয়ায় আইসিসির কাছে রিপোর্ট করলেন। অবশ্য এর আগেও একবার রাজ্জাকের বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক মনে করেছিলেন আম্পায়াররা। সর্বোচ্চ ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত কনুই বাঁকানোর নিয়ম থাকলেও রাজ্জাক ২২-২৮ ডিগ্রি পর্যন্ত কনুই বাঁকাতেন। ফলস্বরুপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পেলেন নিষেধাজ্ঞা।

তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিং চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান। নজরে থাকবেন তিনি এমনটাও জানানো হল। দুঃসময়ে রাজ্জাকের পাশে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রখ্যাত কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। রাজ্জাকের অ্যাকশন ঠিক করতে নিজের সেরাটা দিলেন। মাত্র চার মাসের মাঝেই রাজ্জাককে পুনরায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার জন্য তৈরি করলেন সালাহউদ্দিন।

২০০৯ সালের মার্চে রাজ্জাকের বোলিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয় আইসিসি। কোচের সহযোগিতায় ক্যারিয়ারে আবারও নতুন করে সুযোগ পান। নতুন অ্যাকশনে, নতুন উদ্যমে সেই যে শুরু; বহু চড়াই-উৎরাই পার করে রাজ্জাক নিজের ঝুলিতে পুরতে থাকলেন একের পর এক উইকেট।

২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা। প্রথম ম্যাচেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ের ম্যাচ সেরা হন রাজ্জাক। বছর খানেক বাদে ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক সহ পাঁচ উইকেট নেন রাজ্জাক। প্রথম বাঁ-হাতি স্পিনার ও সাকলাইন মুশতাকের পর দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক উইকেট শিকার করেন।

ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। ওয়ানডেতে থিতু হলেও টেস্টে নিজের জায়গা পাঁকা করতে পারেননি। বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে টেস্টে সেই জায়গাটা নিজের করে নিয়েছিলেন সাকিব।

২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে শিকার করেন পাঁচ উইকেট। সেই সাথে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দুইশো উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন রাজ্জাক। দুই মাস বাদে গড়েন আরেক রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাত্র ২১ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডে যৌথভাবে মোহাম্মদ আশরাফুলের পাশে নাম লিখান তিনি।

২০১৪ সালে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন রাজ্জাক। কালেভদ্রে ম্যাচের দেখা পেতেন, সেটিও বন্ধ হয়ে গেল। সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের ইতিটা হয়ত এখানেই দেখে ফেলেছিলেন রাজ্জাক। রঙিন পোশাকেও বিদায় নিয়েছিলেন ওই বছরই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজ্জাকের যাত্রাটা এখানেই শেষ হতে পারত। তবে, সাদা পোশাকে এক ভিন্ন প্রত্যাবর্তনের গল্পটা হয়ত ভাগ্যে লিখা ছিল।

২০১৮ সালে প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন রাজ্জাক। এরপর হুট করে প্রায় চার বছর পর টেস্ট দলে ডাক পান রাজ্জাক। সাকিবের ইনজুরিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে খেলার সুযোগ পেলেন। ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট শিকার করেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।

ওয়ানডেতে বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ চারবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন রাজ্জাক। এই রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সনাথ  জয়সুরিয়ার পাশে। ওয়ানডে ইতিহাসে রাজ্জাক নাম লিখিয়েছেন আরও কিছু রেকর্ডে।

সাকলাইন মুশতাক ও শেন ওয়ার্নের পর ক্রিকেট ইতিহাসে দ্রুততম ২০০ উইকেট শিকারের তালিকায় তিনে আছেন রাজ্জাক। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম একশো উইকেটের মালিকও তিনি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি সেরা। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছয়শো উইকেট নেন তিনি। সর্বোচ্চ পাঁচ ও দশ উইকেটের মালিকও তিনি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও এই রেকর্ডগুলো নিজের নামে করেছেন রাজ্জাক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...