ক্রিকেটে সময়কাল খুব গুরুত্ব বহন করে, কারণ এখানে অমন ক্লাব নেই যে আপনি নিজেকে অন্যখানে প্রমাণ করবেন! যেমন ধরেন সার্জিও অ্যাগুয়েরো, আর্জেন্টিনার এই স্ট্রাইকার লিওনেল মেসি যুগে ফুটবল খেলেও যথেষ্ট লাইমলাইট ও প্রশংসা পেয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে পারফরম্যান্সের কারণে, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াও তাই, তিনি আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যথেষ্ট উজ্জ্বল ছিলেন।
তবে ক্রিকেটে এটা একটা সময় কঠিন ছিল! একমাত্র সুনীল নারাইনই মনে হয় জাতীয় দলে না খেলেও দিনের পর দিন আলোচনায় আছেন। এমন একজন ক্রিকেটার ছিলেন চামিন্ডা ভাস, যতদিন মাঠে ছিলেন অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ছিলেন, সমসাময়িক গ্লেন ম্যাকগ্রা, ওয়াসিম আকরাম, নিজের দলেই সনাথ জয়সুরিয়া, মুত্তিয়া মুরালির মতো আরও বড় তারকার জন্য ঠিক ফুটে ওঠেননি সেভাবে।
লাসিথ মালিঙ্গা তো সাদা বলের ক্রিকেটার, ভাসকে এই হিসেবে শ্রীলঙ্কার অলটাইম গ্রেট মনে করি আমি। দলের বড় তারকাদের কারণে আরও ক’জন ক্রিকেটার সেভাবে আলোচিত নন!
ডেমিয়েন মার্টিন এই দলের একজন, মার্টিন ব্যাট করতো, মনে হতো ব্যাট করা সহজ একটা কাজ, এফর্টলেসলি বিউটিফুল, আমার নিজের জীবনে এফর্টের এতো অভাব, যে কেউ এফর্টলেসলি সুন্দর কাজ দেখতে একটা অলস আরাম বোধ হয়। মার্টিনের পরিসংখ্যানও দেখতে সুন্দর ছিল, ওই আমলের ওয়ানডে ও টেস্টে ৪০+ গড় ছিল তাঁর।
পাকিস্তানের এমন ক্রিকেটার ছিলেন আজহার মেহমুদ, পেস বোলিং অলরাউন্ডার ওই যুগে অনেকে ছিলেন, তাদের মধ্যে মনে হয় পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ড দুজন করে পেস বোলিং অলরাউন্ডার একাদশে নেয়ার মতো বিলাসিতা করতে পারতো!
আজহার মেহমুদ ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটটা বুঝতেন, কিন্তু ওই পাকিস্তান দল ছিল তারকায় ঠাসা, ওয়াসিম-ওয়াকার-শোয়েব ছিল পেস ট্রায়ো! আব্দুল রাজ্জাক কখনো কখনো ওয়ান ডাউনে খেলতেন!
সময়ের সেরা স্পিনার সাকলাইন মুশতাকই যথেষ্ট লাইমলাইট পেতেন না, সেখানে আবার আজহার মেহমুদ! হুহ। ভারতীয় ক্রিকেট দলে আমার ব্যক্তিগত অল টাইম ফেবারিট এখন ভিরাট, ব্যক্তিত্ব, মাঠের চার্ম, মাঠের বাইরের দর্শন সবদিক থেকেই মন জয় করে নিয়েছেন তিনি- এর আগে ছিলেন গাঙ্গুলি আর যুবরাজ!
আর এখানেও দেখেন প্রচারের আলোর কি পাওয়ার কাইফ ঠাই পেলেন চার নম্বরে। মোহাম্মদ কাইফ আমার অলটাইম ফেভারিট ক্রিকেটারদের একজন! মাঠে তাকে দেখলেই একটা বাড়তি এনার্জি ফিল করতাম, কী উদ্যম! কী অ্যাথলেটিসিজম! দুর্দান্ত পরিমিতিবোধ ছিল তার চলাফেরায়, যেন জানতেন, কতটুকু লাফ দিলে বলটা পারফেক্টলি হাতে আসবে! কাইফ মনে হয় জন্টি রোডসের পরে সময়ের সেরা ফিল্ডার ছিলেন।
পয়েন্টে ফিল্ডিংয়ের আলাদা একটা ক্যারিশমা ছিল, যুবরাজ সিং, কাইফ, হার্শেল গিবস, তিলকারত্নে দিলশান, রিকি পন্টিং, কখনো কখনো ইমরান নাজির এই জাদু দেখাতেন। ভারতের ফিল্ডারদের মধ্যে অনেকেই রবিন সিংয়ের কথা বলেন, তবে কাইফকে আমার সব সময়ই অন্য লেভেলের মনে হতো।
সাথে তার দুর্দান্ত রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস এবং ন্যাটওয়েস্ট ফাইনালের সেই সুন্দরতম স্মৃতি তো মনে দাগ কেটেই আছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক, দেশের সেরাদের একজন কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা তিনে রেট করা হতো খুব কম কিন্তু তখনকার টেন স্পোর্টসের র্যাংকিংয়ে পোলক দীর্ঘসময় টপে ছিলেন, ইকোনমিকাল এবং বুদ্ধিদীপ্ত বোলার ছিলেন পোলক, ব্যাট হাতেও যথেষ্ট হ্যান্ডি।
এগুলা নিজের মনেই মাঝে মধ্যে ভাবি, লেট নাইন্টিজ ও আর্লি ০০ এর ক্রিকেট আমাকে অন্যরকম টানে। আমার ধারণা টি-টোয়েন্টি এরায় ওই যুগের অনেক ক্রিকেটার দুর্দান্ত পারফর্মার হতে পারতেন, নাথান অ্যাস্টল, ল্যান্স ক্লুজনার, অরবিন্দ ডি সিলভা।