স্নেহাশিস গাঙ্গুলি ১৯৮৯-৯০ রঞ্জি ট্রফির মৌসুমে বেশ ভালোই ফর্মে ছিলেন। পাঁচ ইনিংসে বাংলা দলের হয়ে ৫৫.৬৬ গড়ে ১৬৭ রান করেছিলেন। শোনা যাচ্ছিল শীঘ্রই ভারত দলে সুযোগ পেতে যাচ্ছেন স্নেহাশিস। এটাও বলাবলি হচ্ছিল যে, বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) নির্বাচক রাজ সিং দুঙ্গারপুর মূলত তাঁর খেলা দেখার জন্যই রঞ্জি ফাইনাল দেখতে আসছেন।
কিন্তু বিধি বাম! ম্যাচের আগের দিন তাঁকে বলা হলো তিনি খেলছেন না। তাঁর জায়গায় খেলবেন আরেক গাঙ্গুলি। তিনি আর কেউ নন, তাঁরই সহোদর সৌরভ গাঙ্গুলি! অবাক করা ব্যাপার। তখন ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ হওয়া তো দূরের কথা – লোকেরা তেমন একটা চিনতো না সৌরভকে।
আরো পড়ুন
- স্মৃতি যে সততই সুখের!
- সৌরভ গাঙ্গুলি ও হরিষে বিষাদ
- সৌরভ নাকি ধোনি?
- আমি এসে গেছি
- সৌরভ-ডোনার গল্প: সিনেমা নয়, বাস্তব
স্নেহাশিস সে সময়কার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘এটা একটা বড় ধাক্কা ছিল। আমি আজও জানি না কারণটা কী! সম্ভবত টিম কম্বিনেশনের জন্য, কারণ সৌরভ বোলিংটাও করত। আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ বাংলার সেরা প্লেয়ার আমার জায়গায় খেলেছিল।’
সৌরভও তখন কেবলই কিশোর বয়স পেড়িয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে পরে তিনি বলেন, ‘আমি তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। ১৫ দিন বাদে আমার বোর্ড পরীক্ষা। আমি কোচিং ক্লাসে গিয়েছিলাম। বাসায় এসে বই খাতা টেবিলের উপর রেখে মাকে বললাম খাবার দিতে। মা ডাইনিংয়ে আমাকে খেতে দিল। আমি খেয়াল করলাম সবাই চুপচাপ। জিজ্ঞেস করলাম, ‘হয়েছেটা কী? সবাই চুপচাপ কেন?’ আমাকে বলা হলো আমি রঞ্জি ফাইনাল খেলছি বাংলার হয়ে। আমি রঞ্জি অভিষেকের আনন্দে বিমোহিত। সেসময় আমার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কাকে ড্রপ করেছে?’ সে উত্তর দিল, ‘আমাকে’। সোজা আমার হাসি হাসি মুখ বাংলার পাঁচের মত হয়ে গেল।’
সেবার ৫০ বছর পর রঞ্জি ট্রফি জেতে বেঙ্গল/বাংলা। সৌরভ অভিষেক ইনিংসে করেন ২২ রান। স্নেহাশিস গাঙ্গুলি আর শেষ পর্যন্ত ভারতের জার্সি গায়ে জড়াতে পারেননি। ৫৯ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আর ১৮ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচেই শেষ হয় তাঁর ক্যারিয়ার।
অন্যদিকে কালক্রমে ক্রিকেটের মহীরূহ হয়ে উঠেছেন সৌরভ। বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ী জীবনে সাহসী ব্যাটসম্যান ছিলেন, ছিলেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। কিংবদন্তি হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করে তিনি এখন বিসিসিআইয়ের সভাপতি। ক্রিকেটে প্রশাসনে যুক্ত হয়েছেন স্নেহাশিসও। তিনি এখন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) জয়েন্ট সেক্রেটারি।